দুর্ঘটনায় ১ জন নিহত, আহত ১২, ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৩শ ফুট রেললাইন

Untitled-4-copy-9.jpg

খুলনার দর্পণ ডেস্ক : গাজীপুরের ভাওয়ালে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেললাইনের একটি অংশ কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। ওই পথে যাওয়ার সময় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস নামে ৭টি ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়। এ ঘটনায় একজন নিহত ও আহত হয়েছেন ১০ থেকে ১২ জন। বুধবার ১৩ ডিসেম্বর ভোররাত চারটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। রেলে নাশকতার ঘটনায় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে
দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির নাম আসলাম হোসেন (৩৫)। তিনি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার রওহা গ্রামের বাসিন্দা। এ দুর্ঘটনায় ট্রেনটির লোকোমাস্টার এমদাদুল হক, সহকারী লোকোমোস্টার সজিব মিয়া গুরুতর আহত হয়েছেন।
পরে সকাল পৌনে ৯টার দিকে ঢাকা থেকে উদ্ধারকারী রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে যেয়ে উদ্ধারকারী দল লাইন সংস্কারে কাজ শুরু করে।
জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার হানিফ আলী বলেন, বুধবার ভোর চারটা থেকে সোয়া চারটার দিকে রাজেন্দ্রপুর স্টেশন ছেড়ে আসে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন। কিছুদূর যাওয়ার পর ইঞ্জিনসহ ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। দুর্বৃত্তরা রেললাইন কেটে ফেলায় এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পরপর গাজীপুর জেলা প্রশাসকসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এদিকে, ইঞ্জিনসহ বগি লাইনচ্যুতির ঘটনায় রেলওয়ের পক্ষ থেকে ৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ ঘটনায় জেলা গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক সফিকুর রহমান।
তিনি জানান, আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি ঘটনাটি দুর্বৃত্তরা নাশকতার লক্ষ্যে ঘটিয়েছে। তারপরও ঘটনাটি সঠিক কারণ অনুসন্ধানে বিভাগীয় সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলীকে সৌমিক শাওন কবিরকে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৩ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন বিভাগীয় পরিবহণ প্রকৌশলী, বিভাগীয় যাত্রী প্রকৌশলী, বিভাগীয় চিকিৎসকসহ আরও ৭ জনকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
রেললাইন কেটে ফেলায় দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন মেরামতের কাজ ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। রাত ১২টা নাগাদ রেললাইন মেরামত সম্পন্ন হতে পারে। গতকাল সন্ধ্যায় রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় শুধু রেললাইনের বগি-ইঞ্জিনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। পাশাপাশি তিনশ ফুট রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১০০টি স্লিপার একেবারেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব স্থানে নতুন করে রেলের পাত বসানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে, আমরা আশা করছি রাত ১২টার মধ্যে পুরো রেললাইন মেরামত করে ট্রেন চলাচল চালু করতে পারবো।
রেললাইনে নাশকতার ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে কয়েক হাজার কিলোমিটার রেললাইন আছে। নির্বিঘেœ চলাচলে এখন দেশের মানুষের আস্থার জায়গা ট্রেন। এখানে যারা নাশকতা করেছে, এত বড় একটি দুর্ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা যারা করেছে, তাদের সবাইকে খুঁজে বের করব আমরা।
গতকাল দুপুর ১২টার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথের বনখড়িয়া এলাকায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনা তদন্তের মাধ্যমে আমরা যে ক্লু পাব, তাদের প্ল্যান, প্রিপারেশন এগুলো জানব। এখানে রেললাইনকে গলিয়ে ফেলা হয়েছে, অক্সিজেন ও ইথেন গ্যাস একসাথে সংযুক্ত করে দেড় দুই হাজার তাপমাত্রা হয়ে যায়, এ ধরনের ম্যাকানিজম যারা দিয়েছে, যারা নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের সবাইকে আমরা আইনের আওতায় আনব। বাংলাদেশে যেন আর কেউ ট্রেনে নাশকতা চালাতে না পারে সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top