৩৯ বছরের ব্যবধানে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ৬ গুণ

1690205283.fish-2.jpg

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ……
দেশে ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে মাছের মোট উৎপাদন ছিল সাত দশমিক ৫৪ লাখ মেট্রিক টন। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে মাছের উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৪৭ দশমিক ৫৯ লাখ মেট্রিক টন।

৩৯ বছরের ব্যবধানে মোট মাছের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ছয়গুণ।
আবার ২০২১-২২ অর্থবছরে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫ দশমিক ৫২ লাখ মেট্রিক টন। যেখানে মাছের উৎপাদন হয়েছে ৪৭ দশমিক ৫৯ লাখ মেট্রিক টন, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। আর এই হিসাব অনুযায়ী বরিশাল জেলায় মাছের মোট উৎপাদন ছিল একলাখ মেট্রিক টন।

সোমবার (২৪ জুলাই) জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে মৎস্য সম্পদের সুরক্ষা ও সমৃদ্ধি অর্জনে মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রম বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য তুলে ধরেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, সরকারের বাস্তবমুখী কার্যক্রমের ফলে বাংলাদেশ এখন মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী বিগত ১০ বছরের হিসেবে মৎস্য উৎপাদন বাড়ানোতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। আর ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে প্রথম, অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ আহরণে বাংলাদেশ তৃতীয়, মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে চতুর্থ এবং বদ্ধ জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে পঞ্চম। তেলাপিয়া উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ এবং এশিয়ার মধ্যে তৃতীয়। পাশাপাশি বিশ্বে সামুদ্রিক ও উপকূলীয় ক্রাস্টাশিয়া ও ফিনফিশ উৎপাদনে যথাক্রমে ৮ম ও ১২তম স্থানে আছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার The state of World Fisheries and Aquaculture 2020″ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ আহরণে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে।

তিনি আরও বলেন, সারাবিশ্বে প্রাকৃতিক উৎস থেকে মোট ৯০ লাখ টন মাছ উৎপাদন হয়, যেখানে বাংলাদেশে উৎপাদন হয় ১০ লাখ টন। দেশিয় প্রজাতির মাছের উন্নত জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে বাংলাদেশে মাছ উৎপাদন বেড়েই চলছে। পাশাপাশি প্রজনন মৌসুমে নদীতে জাটকা ধরা বন্ধ ও মা ইলিশ রক্ষার মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মাছের উৎপাদন বাড়ানোতে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছে ইলিশ মাছ। ২০২১-২২ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ দশমিক ৬৭ লাখ মেট্রিক টন। অধিদপ্তরের হিসাবে, গত অর্থবছরে দেশে উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশই ছিল ইলিশ। বরিশাল জেলার ইলিশ উৎপাদন ছিল তিন দশমিক ৮৮ মেট্রিক টন।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযানে মৎস্য আহরণে নিয়োজিত ১৩ দশমিক ৫০ লাখ মানুষের জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে উপকূলীয় সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের মাধ্যমে। জেলেদের উন্নয়নের জন্য সরকার নিবন্ধন কার্যক্রম চলমান রেখেছে এবং বরিশাল জেলায় ৭৯ হাজার ২২১ জন জেলেকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ২০ শতাংশ আসে সমুদ্র থেকে। বিশ্বের মোট মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ১৬ শতাংশ অবদান খোদ বঙ্গোপসাগরের। সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে এ উৎপাদন আরও বহুগুণে বাড়ানো সম্ভব। কেবল সমুদ্র অর্থনীতির সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখেই যথেষ্ট আর্থসামাজিক উন্নয়ন সাধন করা যেতে পারে।

কর্মকর্তা বলেন, বঙ্গোপসাগরে রয়েছে ৪৭৫ প্রজাতির মাছ। প্রতি বছর সেখান থেকে ৬৬ লাখ টন মাছ আহরণ করা যেতে পারে; কিন্তু বাস্তবে আমরা সেখান থেকে খুব কমই আহরণ করছি। সামুদ্রিক মাছ আহরণ বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা দেশজ উৎপাদন অনেকাংশে বাড়িয়ে ফেলতে পারি। এজন্য আমাদের আধুনিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মাছ ধরার কৌশলেও পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, বিপন্ন প্রায় মাছের প্রজাতির সংরক্ষণ, অবাধ প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে সার্বিক মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি হয়েছে। গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন নদ-নদী ও অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে ৪৩২টি মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপন করা হয়েছে। অভয়াশ্রম-সংশ্লিষ্ট জলাশয়ে মাছের উৎপাদন ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বরিশাল জেলায় মোট ১৭টি অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনা ও ইলিশ প্রজনন সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে ২০২১-২২ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন হয়েছে পাঁচ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন, যা ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে ছিল দুই লাখ ৯৯ হাজার মেট্রিক টন।

মৎস্য ও মৎস্যজাত দ্রব্য বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি পণ্য। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭৪ দশমিক ০৪ হাজার মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে পাঁচ হাজার ১৯২ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top