খুলনায় তাপমাত্রা ৯ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে, চলছে লোডশেডিং

khulna-2304160410.jpg

নিজস্ব প্রতিবেদক…….

খুলনা অঞ্চলের তাপমাত্রার পারদ গত ৯ বছরের রেকর্ড ভেঙে আরও ঊর্ধ্বমুখী। বৈশাখের খরতাপে প্রাণ যায় যায় অবস্থা।

অস্বস্তিকর গরমের মধ্যেই শুরু হয়েছে দফায় দফায় লোডশেডিং। দুপুর, সন্ধ্যা, গভীর রাত কিংবা ভোর কোনো নিয়মই মানছে না বিদ্যুতের লুকোচুরি। প্রচন্ড গরমের মধ্যে দফায় দফায় লোডশেডিংয়ে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে খুলনার জনজীবন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মশার উৎপাত। সব মিলিয়ে সীমাহীন কষ্টের মধ্যে সময় কাটাচ্ছে খুলনার মানুষ।

এদিকে, খুলনা বিভাগে তীব্র তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে। গত ৯ বছরের মধ্যে শনিবার (১৫ এপ্রিল) রেকর্ড তাপমাত্রা ছিলো এই অঞ্চলে। এখানে টানা প্রায় দুই সপ্তাহ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। প্রচণ্ড গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে খুলনা অঞ্চলের মানুষের। রোজার মধ্যে গরমের তীব্রতায় দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। এই তাপমাত্রা আরও ২/৩ দিন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

খুলনার আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আমিরুল আজাদ জানান, গত বৃহস্পতিবার খুলনায় তাপমাত্রা ছিলো ৩৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার খুলনায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার তাপমাত্রা ছিলো ৩৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তীব্র গরমের মধ্যে বাতাসে আর্দ্রতা কমে গেছে। রাস্তায় বের হলে আগুনের হল্কা এসে গায়ে লাগছে। সুন্দরবনের শহরে মরুর আভা পাওয়া যাচ্ছে। প্রয়োজন ছাড়া দিনের বেলা কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না। অবশ্য রাতে ঘরে ফিরেও স্বস্তিতে থাকার উপায় নেই। দফায় দফায় লোডশেডিংয়ে রাতেও ঘেমে ভিজে নাকাল হচ্ছে মানুষ।

নগরীর শেখপাড়া এলাকার বাসিন্দা ইউসুফ হোসেন জানান, শনিবার সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ চলে যায়। তারাবিহ নামাজের সময় আরেক দফা গিয়েছে। রাত ২টা ২১ মিনিটে লোডশেডিং ছিলো এক ঘণ্টা। ভোর সাড়ে ৫টায় আবার লোডশেডিং শুরু হয়। এবারও বিদ্যুৎ ছিলো না এক ঘণ্টা। আজ (রোববার) সকালেও বিদ্যুত ছিলো না।

তিনি বলেন, প্রচন্ড গরমে ফ্যান চালিয়েও ঘরে থাকা যায় না। এর মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকলে মনে হয় ‘ভয়ঙ্কর আজাব’ শুরু হলো। মশার যন্ত্রণায় বাইরে বসে থাকারও উপায় নেই। এই কষ্ট বলে বোঝাতে পারবো না।

রিকশাচালক মো. মিঠু বলেন, সূর্যের অনেক তাপ। রোদে সারা শরীর পুড়ে যায়। ভোর থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত আর বিকালে ৫টার পর থেকে গরম কিছুটা কম থাকে। সকাল ১০টার পর থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রচণ্ড তাপদাহ থাকে। মনে হয় যেন চামড়া জ্বলে যাচ্ছে। শরীর ঘেমে যায়। শরীর দূর্বল হয়ে আসে। রিক্সা চালাতে অনেক কষ্ট হয়।

নগরীর খালিশপুর পার্কের রোডের বাসিন্দা জাহিদ হাসান তুষার বলেন, বাতাসে যেন আগুন উড়ছে। প্রচণ্ড গরম। গরমের সাথে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে। এই গরমে বাইরে যেমন বের হওয়া যাচ্ছে না, তেমনই ঘরেও অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে।

নগরীর রায়ের মহল এলাকার বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন, একদিকে সিয়াম সাধনার মাস অন্যদিকে তীব্র তাপদাহ। কর্মব্যস্ততা শেষ করে যে বাসায় ফিরে কোথায় স্বস্তিতে থাকব, সেখানে দিনে ও মধ্যরাতে ঘনঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। এই গরমে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, ৯ বছরের মধ্যে শনিবার খুলনা বিভাগের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করে বিভাগের চুয়াডাঙ্গা জেলায়। চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এছাড়া যশোরে ৪০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মোংলায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, কুষ্টিয়ার কুমারখালী ৪০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল।

এরআগে ২০১৪ সালে চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো। আর ২০২১ সালে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

তিনি বলেন, গত ৯ বছরের মধ্যে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠেনি। ফলে খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে তীব্র তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা আরও ২/৩ দিন অব্যাহত থাকবে। এরপর কিছুটা কমবে এবং দু-এক জায়গাতে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকোর) প্রধান প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রচণ্ড গরমে বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। লোড বেড়ে যাওয়ায় ট্রান্সফর্মারসহ লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। এসব মেরামতে সময় লাগছে। এছাড়া সরবরাহ কম থাকায় কিছু লোডশেডিং হচ্ছে। তবে পরিমানে কম বলে দাবি করেন তিনি।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top