নিজস্ব প্রতিবেদক…….
‘বর্তমান কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থায় আইনের সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়া, পুলিশ-প্রশাসনে দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপের ফলে অনেক ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অপরাধীরা শাস্তি না পাওয়ায় নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েই চলেছে। নারীরা পারিবারিক, যৌতুক, এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ, যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা এবং বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বাল্য বিয়ের কারণেও অনেক মেয়ে শিশুর মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। বাংলাদেশে নারীদের প্রতি সহিংসতার পাশাপাশি গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের নারী সদস্যদের ওপর বিভিন্ন ধরনের নিপীড়ন চলছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় গুম হওয়া ব্যক্তির পরিবারের নারী সদস্যদের ওপর নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
বুধবার (৮ মার্চ) বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে দেশের অন্যতম শীর্ষ মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ ও ‘মায়ের ডাক’ খুলনা ইউনিট আয়োজিত র্যালি ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা এ আহবান জানান। সকাল ১১টার দিকে নগরীর শন্তিধাম মোড় সংলগ্ন জাতিসংঘ পার্কের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
এর আগে নগরীর ফুল মার্কেট মোড় থেকে র্যালি বের হয়।
সমাবেশে অধিকার খুলনা ইউনিটের ফোকাল পার্সন মুহাম্মদ নূরুজ্জামান সভাপতিত্ব করেন। এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিশিষ্ট নারী নেত্রী অধ্যক্ষ রেহানা আখতার, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা জেলা কো-অর্ডিনেটর অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম, খুলনা পোল্ট্রি ফিশ ফিড ও শিল্প মালিক সমিতির মহাসচিব এসএম সোহরাব হোসেন, গ্লোবাল খুলনার আহবায়ক শাহ মামুনুর রহমান তুহিন, মানবাধিকার কর্মী মো. আব্দুল হালিম, বাগেরহাট জেলা মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার কোষাধ্যক্ষ ও গাঙচিল সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা তৈমুন নাহার, নিরাপদ সড়ক নিসচা’র খুলনা জেলা সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব, খুলনা জেলা ব্লাড ব্যাংকের সভাপতি শেখ ফারুক।
অনুষ্ঠানে অধিকার ও মায়ের ডাক’র বিবৃতি উল্লেখ করে বলা হয়, সারা বিশ্বে প্রতি বছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়। এই দিবসটি উদযাপনের নেপথ্যে রয়েছে নারী শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সুদীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ সালে নিউইয়র্কে সূতা কারখানার নারী শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা ও মজুরি বৈষম্যের ব্যাপারে প্রতিবাদের মধ্যে দিয়েই নারীদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের সূচনা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন আন্দোলন এবং ঘটনা পরিক্রমার মধ্যে দিয়ে জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক নারী বর্ষ পালন করে।
অবশেষে ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই সারা বিশ্বে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রান্ত হলেও এদেশে নারীদের অবস্থা এখনও দুঃখজনক। নারীর প্রতি সহিংসতা এদেশে চরমভাবে বিদ্যমান এবং দরিদ্র নারীরাই অধিক সহিংসতার শিকার। বাংলাদেশের নারীদের প্রতি সহিংসতার মূলে রয়েছে পুরুষতান্ত্রিক মন-মানসিকতা এবং এই সংক্রান্ত সামাজিক ও আইনগত বৈষম্য।