খুমেকে চার দিনে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি ৭৩ জনের মৃত্যু

Khulna-2303040421.jpg

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট…
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লাকি বেগম (২০) নামে এক গৃহবধূকে তুঁতে (রাসায়নিক বস্তু) খাওয়া অবস্থায় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন তার স্বজনরা। শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হয়। লাকি বেগম নগরীর গোবরচাকা এলাকার রাজু আহমেদের স্ত্রী। তার স্বজনরা অভিযোগ করেন, চিকিৎসকদের ধর্মঘটের কারণে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা না পেয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।
লাকি বেগমের মতো গত চার দিনে শুধুমাত্র খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ৭৩ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. রবিউল হাসান। তবে চিকিৎসকদের ধর্মঘটের কারণে তারা কেউই বিনা চিকিৎসায় মারা যাননি বলে দাবি করেছেন তিনি।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. মেহনাজ মোশাররফ রোগী লাকি বেগমের স্বজনদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রোগীর পয়জনিং অনেক বেশি ছিলো। রোগীকে হাসপাতালে আনতে রোগীর স্বজনরা অনেক দেরি করেছে। ওই রোগীর মৃত্যুতে চিকিৎসকদের কোনো অবহেলা ছিলো না।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শুক্রবারও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালেও চিকিৎসা সেবা পায়নি রোগীরা। ছুটির দিনেও দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফিরে গেছেন। একজন চিকিৎসকের ওপর হামলার জেরে গত ১ মার্চ থেকে চিকিৎসা সেবা বন্ধ রেখে কর্মবিরতি পালন করছেন চিকিৎসকরা। যা শুক্রবার তৃতীয় দিনের মতো অব্যাহত ছিলো।

চিকিৎসকদের ধর্মঘটের কারণে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু এবং রোগী ভোগান্তির বিষয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. রবিউল হাসান বলেন, প্রত্যেকদিন হাসপাতালে সাধারণত ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ রোগী থাকছে। নরমালি ১৫ থেকে ২০ জন রোগী প্রত্যেকদিনই মারা যায়। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এর সঙ্গে ধর্মঘটের কোনো সম্পর্ক নেই।

তিনি হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ও রোগী মৃত্যুর পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে ১৪০০ রোগী ছিলেন। এরমধ্যে মারা গেছেন ২০ জন। ২৮ ফেব্রুয়ারি রোগী ছিলেন ১৩৪৫ জন, ১৭ জন মারা গেছেন। আর ১ মার্চ রোগী ছিলো ১৪১৮ জন, মারা গেছে ২০ জন। ২ মার্চ রোগী ছিল ১৩১০ জন, ১৬ জন মারা গেছে। এরমানে আমরা দেখছি যে ধারাবাহিকতা একভাবেই আছে। যেমন মারা যায় তেমনই আছে। ধর্মঘটের জন্য বেশি মারা গেছে এমন কোনো কথা নয়৷ আর দায়িত্বে অবহেলার জন্য কোনো রোগী মারা যাননি।
ডা. মো. রবিউল হাসান দাবি করেন, আমাদের জরুরি সেবা কিন্তু সবসময় চালু আছে। হাসপাতালের ভেতরের সেবা চালু আছে। চিকিৎসকরা সবসময় রাউন্ড দিচ্ছেন।

এদিকে, সাতক্ষীরার কলোরোয়া থেকে স্ট্রোক করা রোগী সাজেদা বেগমকে (৭০) নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছেন আকলিমা বেগম। তিনি বলেন, তার মা স্ট্রোক করেছিলেন। তার ডায়াবেটিকস, হাইপ্রেসার রয়েছে। গত চারদিন এখানে রয়েছি। এই সময়ে বড় কোনো চিকিৎসকরা আসেননি। নার্সরা আসছেন। মা মাঝেমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। চারদিন বসে আছি, আর কয়দিন বসে থাকতে হবে জানি না। ঠিকমতো সেবা পেলে মা সুস্থ হয়ে যেতো।

হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজন শেখ মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, কালিয়া থেকে ডেলিভারি রোগী নিয়ে খালিশপুর ক্লিনিকে গিয়েছিলাম। সেখানে ডাক্তার না থাকায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। এখানে বড় ডাক্তার নেই। নার্সরা দেখাশোনা করছে। ডাক্তার কখন আসবে না আসবে, কি হবে? এনিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। সাধারণ মানুষের তো ভোগান্তি। আমরা দ্রুত এর অবসান চাই। সাধারণ রোগীরা যাতে চিকিৎসাসেবা পেতে পারে তার আশু কামনা করছি।

খুমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মেহেদী হাসান বলেন, কর্মসূচি চললেও রোগী আমরা দেখছি। এখানে প্রতিনিয়ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন। তাদেরতো দেখতে হবে। আমরা সেবার দিকটি খেয়াল রাখছি।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নগরীর হক নার্সিংহোমে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ এনে রোগীর স্বজনরা চিকিৎসক ডা. নিশাত আব্দুল্লাহর ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে হামলার অভিযোগে রোগী অথৈর বাবা সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের এএসআই নাঈমুজ্জামান শেখকে আসামি করে মামলা করেন। অপরদিকে, ভুল চিকিৎসা ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে ডা. নিশাত আব্দুল্লাহ ও হক নার্সিংহোম এর মালিক ডা. নুরুল হক ফকিরকে আসামি করে পাল্টা মামলা দায়ের করেন নাঈমুজ্জামানের স্ত্রী নুসরত আরা ময়না।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top