আন্তর্জাতিক ডেস্ক ……
ইরানে পুলিশের হেফাজতে মাহসা আমিনি নামে এক তরুণীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের জেরে এবার অস্কারজয়ী অভিনেত্রী তারানেহ আলিদুস্তিকে আটক করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) ইরানের গণমাধ্যম তাকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
তাসনিম নিউজ এজেন্সি বলছে, ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরির অভিযোগে ৩৮ বছর বয়সী তারানেহ আলিদুস্তিকে আটক করা হয়েছে।
অভিনেত্রী তারানেহ আলিদুস্তি ইরানের বিখ্যাত নির্মাতা আসগর ফরহাদী পরিচালিত অস্কারজয়ী সিনেমা ‘দ্যা সেলসম্যান’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেন। সফল এই ইরানি অভিনেত্রীর ৮০ লাখের বেশি অনুসারী রয়েছে ইনস্টাগ্রামে।
আলিদুস্তি সবশেষ গত ৮ ডিসেম্বর ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট করেন। একই দিনে মোহসেন শেকারি নামে ২৩ বছর বয়সী একজনকে সরকার বিরোধী বিক্ষোভের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয় ইরানের কর্তৃপক্ষ। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, ‘আল্লাহর বিরুদ্ধে শত্রুতার’ অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর মোহসেন শেকারিকে ফাঁসি দেওয়া হয়। একজন ‘দাঙ্গাকারী’ হিসেবে তাকে অভিযুক্ত করে বলা হয়, গত সেপ্টেম্বর মাসে তিনি তেহরানের একটি প্রধান সড়ক অবরোধ করেন এবং আধাসামরিক বাহিনীর একজন সদস্যকে কাটারির আঘাতে আহত করেন।
তারানেহ আলিদুস্তি ইনস্টাগ্রামে লেখেন ‘আপনার নীরবতা মানে নিপীড়ন ও নিপীড়কের সমর্থন করছে।’ একটি ছবি শেয়ার করে এতে তিনি ক্যাপশন দেন, ‘প্রতিটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যারা এই রক্তপাত দেখছে এবং সঠিক পদক্ষেপ নিচ্ছে না, তারা মানবতার জন্য কলঙ্ক।’
কিশোরী বয়স থেকেই এই অভিনেত্রী সিনেমার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি এ বছরের কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত ‘লায়লাস ব্রাদার্স’ ছবিতে অভিনয় করেছেন।
ইরানে জনসম্মুখে নারীদের বাধ্যতামূলক হিজাব পরাসহ কঠোর পর্দা পালনের নিয়ম রয়েছে। এই বিধিগুলো তদারক করার জন্য রয়েছে দেশটির ‘নৈতিকতাবিষয়ক’ পুলিশ। এই পুলিশের একটি দল, গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনিকে তেহরান থেকে আটক করে। আমিনি তার পরিবারের সঙ্গে তেহরানে ঘুরতে গিয়েছিলেন। আটকের পর মাহসা আমিনি থানায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ১৬ সেপ্টেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় মাহসা আমিনির। এ ঘটনার প্রতিবাদে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয় দেশজুড়ে। দেশটিতে এ পর্যন্ত সহিংসতায় প্রাণ গেছে কয়েকশ জনের। বিক্ষোভে অংশ নেন দেশটির তরুণ-তরুণীরা। তবে ইরান বলছে, এই বিক্ষোভে উসকানি দেয় পশ্চিমারা।
আমিনির মৃত্যুর দিনে এই অভিনেত্রী ইনস্টাগ্রামে একটি ছবি পোস্ট করেন এবং লেখেন ‘বন্দিত্বের অভিশাপ।’ গত ৯ নভেম্বর তিনি স্কার্ফ পরা ছাড়াই তার একটি ছবি পোস্ট করেন। সেখানে নারীদের স্বাধীনতার কথা তুলে ধরেন তিনি।
গত ১২ ডিসেম্বর, ইরানে বিক্ষোভের জেরে আরও একজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। দেশটির আদালতের নিজস্ব সংবাদ সংস্থা মিজান জানায়, নিরাপত্তাবাহিনীর দুই সদস্যকে হত্যার দায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, বিক্ষোভে জড়িত থাকার অভিযোগে আরও নয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।