মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ খুলনাবাসী

1669689704.webp

ব্যুরো এডিটর……
দেশে শুরু হয়েছে শীত মৌসুম। বিভিন্ন অঞ্চলে সকাল-সন্ধ্যায় শীতের আবেশ অনুভব করা যায় বেশ ভালোভাবেই।

এ আবেশের পাশাপাশি বাড়ছে মশার উপদ্রব। খুলনায় শীত আগমনের সঙ্গে বাড়ছে মশার উপদ্রব। মশারি, কয়েল ও ইলেকট্রিক ব্যাট ব্যবহার করেও এ পতঙ্গের কামড় থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারছে না নগরীর বাসিন্দারা।
দিন-রাত, এমনকি দুপুরেও মশার অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করছে খুলনাবাসী। বাসা-বাড়িগুলোয় অনেকে সারাদিন মশারি টাঙিয়ে রাখছেন। অফিস-আদালত থেকে শুরু করে অভিজাত এলাকায় বিভিন্ন উপায়ে মশা দমনের চেষ্টা চলছে। সাময়িক সময়ের জন্য কিছুটা রক্ষা পাওয়া গেলেও যে কপাল, সে মাথা।

এদিকে, আগে থেকেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছিল খুলনায়। মশার উপদ্রব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন আরও বাড়ছে নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে। একই সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা। মশাবাহিত অন্যান্য রোগব্যাধির ঝুঁকি বাড়ায় পরিস্থিতি এগিয়ে যাচ্ছে চরম পর্যায়ে। সংশ্লিষ্টরা খুলনাকে ডেঙ্গুর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে নির্দিষ্ট করছেন।

নগরীর বসুপাড়ার বাসিন্দা ইয়াহিয়া বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণ সময় মশা থাকে। শীত শুরু হতেই এর উপদ্রব বেড়েছে ব্যাপকহারে। দিনে-রাতে সমানতালে মশার অত্যাচার চলছে। বাসায় বাচ্চা আছে, বুড়ো মানুষও আছে। সারাদিন মশারি টাঙিয়ে রাখতে হচ্ছে। রাতে মশা যে দৈত্য হয়ে দেখা দেয়। কয়েল, ইলেকট্রিক ব্যাট- কিছুই মানে না।

নিরালা এলাকার বাসিন্দা নেয়ামুল বাড়ি হুজাইফা বলেন, দিন দিন ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। খুলনা সিটি করপোরেশন এ ব্যাপারে নির্বিকার।

মশা নিধনে খুলনা সিটি করপোরেশন থেকে মাঝেমধ্যে ওষুধ ছিটানো হয়। কিন্তু মশা মরে না। তাই এ ওষুধের কার্যকারিতা প্রশ্ন তুলছেন সোলাইমান নগরের গৃহিণী সুমনা মামুন। তিনি বলেন, একটা জায়গায় পাঁচ মিনিট দাঁড়ানো যায় না, মৌমাছির মতো মশা ঘিরে ধরে। কেসিসি থেকে যে ওষুধ ছিটানো হয়, তার কী কোনো কার্যকারিতা আছে?

ভুক্তভোগীরা বলছেন, কেসিসি থেকে ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধের ধোঁয়া দিয়ে গেলেও মশার উপদ্রব কমছে না। বরং ফগার মেশিনের ধোঁয়ার ধাক্কায় ড্রেনে থাকা মশাগুলোও চড়িয়ে পড়ে। মশার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে তাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন নাগরিক নেতারা।

তারা বলছেন, সিটি করপোরেশনকে এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। প্রতিনিয়ত মশা নিধন কার্যক্রম চালাতে হবে। মশার উৎপত্তিস্থল হিসেবে পরিচিত ড্রেন ও স্যুয়ারেজ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার উদ্যোগ নিতে হবে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে দিনের পর দিন ফেলে রাখায় তাতে পানি জমে। যা মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। মশা নিধনে প্রত্যেক এলাকার জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব রয়েছে। নিজ এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও মশামুক্ত করতে তাদের উদ্যোগী হতে হবে বলেও তারা মন্তব্য করেন।

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ বাবুল হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক সম্প্রতি মশা নিধনের ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন। খুলনার প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের উন্নয়ন সমন্বয় সভায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিধনের বিষয়ে জোর সুপারিশও করেন। কিন্তু এ সংক্রান্ত কোনো কার্যক্রম আমাদের চোখে পড়ছে না। মাঠ পর্যায়েও এমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি, যা উদ্বেগজনক।

খুলনার নাগরিক নেতা মিজানুর রহমান বাবু বলেন, মশার উৎপাত ভয়াবহ বেড়েছে। নগরীতে নিয়মিত মশা নিধনের ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না। অথচ প্রতি বছর মশা মারার জন্য সিটি করপোরেশন কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। মাঝেমধ্যে নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও তাতে মশা মরে না। বরং তাড়া খেয়ে মশা ঘরে ঢুকে যায়। অবিলম্বে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন তিনি।

শতজনের শত অভিযোগ থাকলেও খুলনা সিটি করপোরেশন তার ধার ধারে না। কেসিসির দাবি, মশক নিধনের নিয়মিত ওষুধ প্রয়োগ চলছে। কোনো কার্যক্রম থেমে নেই। কেসিসির কনজারভেনসি কর্মকর্তা নূরুন্নাহার এ্যানি বাংলানিউজকে বলেন, নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে একই মশক নিধনকর্মী ফগার মেশিনের মাধ্যমে নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা চলছে। বর্তমানে মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় আরও ৩৬ কর্মীকে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top