নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ জানালো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

hc-20221010215035.webp

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক…
সয়াবিন তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য মজুতকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে গত মার্চ মাসে নির্দেশনা দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। নির্দেশনায় বাণিজ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। সেই নির্দেশনার আলোকে সম্প্রতি হাইকোর্টে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মো. মফিজুল ইসলাম সই করা প্রতিবেদন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় দাখিল করা হয়। এ বিষয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রতিবেদনে ঢাকা জেলার বিষয়ে বলা হয়েছে, ঢাকা জেলার আওতাধীন এলাকায় খাদ্যসামগ্রীর কোনো মজুতদার নেই। তারপরও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকারের সমন্বয়ে সংশ্লিষ্ট জেলাধীন বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।

এতে বলা হয়েছে, ঢাকা জেলাধীন এলাকায় কেউ যাতে খাদ্যসামগ্রী মজুত করতে না পারে সে বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত আছে। ঢাকা জেলাধীন এলাকায় অবৈধভাবে কোনো মজুতদার যদি খাদ্যসামগ্রী মজুত করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে অবহিত করা হবে।

র‌্যাব সদরদপ্তর, দেশের ৪৩ জেলার পুলিশ সুপার ও ৭ মহানগরের পুলিশ কমিশনারের দাখিল করা পৃথক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সয়াবিন তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য মজুতকারীদের বিরুদ্ধে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী অবৈধভাবে মজুত করে বাজার যেন অস্থিতিশীল করতে না পারে সে বিষয়ে পুলিশি টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ ও সতর্ক রয়েছে।

র‌্যাব সদরদপ্তরের দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য অবৈধভাবে মজুত করে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিক্রি বন্ধ প্রতিরোধে চেষ্টা করছে র‌্যাব। এক্ষেত্রে অবৈধ মজুতদারের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে র‌্যাব সারা দেশে পর্যাপ্ত টহল মোতায়েন করেছে। র‌্যাবের সব ব্যাটালিয়নের আওতাভুক্ত এলাকায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়াসহ অন্যান্য কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

অবৈধ মজুতদারের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য র‌্যাবের গোয়েন্দা নিয়োগ করে তাদের চিহ্নিত করাসহ অভিযান অব্যাহত আছে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ৯ মে র‌্যাব-৩ যাত্রাবাড়ী থানাধীন এলাকায় অভিযান চালায়। সেসময় অবৈধভাবে মজুত ও অতিরিক্ত মূল্যে বিপুল পরিমাণ সয়াবিন তৈল বিক্রির কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

গত ১১ মে সিপিসি-২, র‌্যাব ক্যাম্প নাটোর, র‌্যাব-৫, রাজশাহীর অধীনে নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম থানাধীন মৌখাড়া বাজারে মেসার্স নয়ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে অভিযান চালায়। একই সঙ্গে সদর থানাধীন নিচা বাজারে কুন্ডু সাহা স্টোর, সোনালি স্টোর এবং স্টেশন বাজারে নিউ বেঙ্গল ট্রেডার্সের গুদাম ঘর থেকে অবৈধ মজুত ৫ হাজার ৩৫৯ লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করা হয়। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ছয় ব্যবসায়ীকে এক লাখ ৯৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

১৩ সিপিসি-২, র‌্যাব ক্যাম্প নাটোর, র‌্যাব-৫ রাজশাহীর অধীনে নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম থানাধীন জোনাইল বাজাররে মোল্লা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, রুপম স্টোর, মিতা স্টোর, বিল্লাল স্টোর, মেসার্স দেবাশীষ স্টোরের গুদাম থেকে ৬ হাজার ৬০০ লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পাঁচ ব্যবসায়ীকে তিন লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এছাড়াও, র‌্যাবের অধীনে সব ব্যাটালিয়ন আওতাধীন এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের সব অবৈধ মজুতদারির বিষয়ে বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখা হয়েছে।

দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৩ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) কর্তৃক সয়াবিন তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য মজুতকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে। জেলাগুলো হলো- ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, চাঁদপুর, নোয়াখালী, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, খুলনা, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও জামালপুর।

এর মধ্যে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপারের দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা জেলার আওতাধীন এলাকায় খাদ্যসামগ্রীর কোনো মজুতদার নেই। তারপরও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকারের সমন্বয়ে সংশ্লিষ্ট জেলাধীন বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।

ঢাকা জেলাধীন এলাকায় কেউ যাতে খাদ্য সামগ্রী মজুত করতে না পারে সে বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত আছে। ঢাকা জেলাধীন এলাকায় অবৈধভাবে কোনো মজুতদার যদি খাদ্যসামগ্রী মজুত করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে যথারীতি অবহিত করা হবে। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে দায়ের করা রিট পিটিশনের নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রতিপালনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, গাজীপুর, রংপুরের পুলিশ কমিশনারও প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।

এর মধ্যে খুলনার পুলিশ কমিশনারের দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খুলনা মহানগরী এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর মজুত রোধ সংক্রান্ত্র অনুসন্ধান ও অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কোনো গোষ্ঠী বা সিন্ডিকেট যাতে ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী অবৈধভাবে মজুত করে বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে, সে বিষয়ে খুলনা মহানগরী এলাকার বিভিন্ন বাজারসহ সম্ভাব্য সব স্থানে পুলিশি টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত খুলনা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৭০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ১৬৬টি মামলায় ১৬৬ জনকে দণ্ডিত করে ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করা হয়।

এদিকে দাখিল করা প্রতিবেদন ও এ সংক্রান্ত রুল শুনানির জন্য আগামী ১৬ নভেম্বর দিন ধার্য রয়েছে আদালতে।

এর আগে, গত ১৫ মার্চ সয়াবিন তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য মজুতকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ সময় ওএমএস নীতিমালা অনুযায়ী সারাদেশে চাল, আটা, তেল, পেঁয়াজ, ডাল রেশন কার্ডের মাধ্যমে দিতে রুল জারি করেন আদালত। এছাড়া সয়াবিন তেল মজুত করার অভিযোগে আটকদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

গত ৬ মার্চ সয়াবিন তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে মনিটরিং সেল গঠন এবং নীতিমালা তৈরি করতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনির হোসেন, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মহিদুল কবীর ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ উল্লাহ এ রিট দায়ের করেন। বাণিজ্য সচিব, ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়।

এর আগে ৩ মার্চ সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনেন এ তিন আইনজীবী। তারা সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো নিয়ে একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন।

আদালত আইনজীবীদের যথাযথ প্রক্রিয়ায় রিট করার পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী রিট করেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। এর পরে রুল জারির পাশাপাশি ভোজ্যতেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা প্রতিবেদন আকারে জানতে বলেন আদালত।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top