শীতলক্ষ্যা পাড়ে প্রাণোচ্ছ্বাস

setu-1-20221010193328.webp

জেলা প্রতিনিধি…..
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ের বাসিন্দাদের বহুল প্রতীক্ষিত বীর মুক্তিযোদ্ধা একে এম নাসিম ওসমান ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে।

সোমবার (১০ অক্টেবার) দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সেতুর উদ্বোধন করেন। সেতুটির উদ্বোধনের পর থেকেই নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দারা আনন্দের জোয়ারে ভাসছেন।
স্থানীয় সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দরের মাঝে বয়ে চলেছে শীতলক্ষ্যা নদী। এ নদী পার হতে হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ পয়েন্টে ফেরি চলাচল করলেও সেতুর আক্ষেপ ছিল দীর্ঘদিনের। শীতলক্ষ্যা নদী বন্দর উপজেলা ও সোনারগাঁ উপজেলাকে জেলা সদর থেকে পৃথক করেছে। এ দুটি উপজেলা সরাসরি সড়কপথে জেলা সদরের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল না।

দুই উপজেলা থেকে সদরে যেতে কাঁচপুর ব্রিজ (শীতলক্ষ্যা-১ সেতু) ব্যবহার করতে হতো। এজন্য নৌকায় নদীপথের ৩-৫ কিলোমিটারের দূরত্ব সড়কপথে প্রায় ৩০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হতো। এখন থেকে আর ঘুরে যেতে হবে না। কয়েক মিনিটের মধ্যেই নদী পাড়ি দেওয়া যাবে।

বহুল প্রত্যাশিত এ সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হাজার হাজার মানুষ। উদ্বোধনের পরপরই বিনা বাধায় লোকজন এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে যাতায়াত করেন।

আনোয়ারুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এই সেতুর জন্য আমাদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এখন থেকে আমাদের আর কোনো দুর্ভোগ থাকবে না। এখন ইচ্ছা করলেই হেঁটেই নদী পার হতে পারবো। আমাদের ব্যবসার দ্বার খুলে দিয়েছে এই সেতু।’
সেতুর উদ্বোধন দেখতে আসা মিজানুর রহমান বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য অনেক আনন্দের। সেতুটি হওয়ায় শীতলক্ষ্যা নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দাদের জন্য কি যে সুবিধা হয়েছে তা বলে বোঝানো যাবে না।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, এই সেতুর ফলে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা শহরে প্রবেশ না করেই চট্টগ্রাম যাতায়াত করতে পারবেন দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলসহ আট জেলার বাসিন্দারা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন ও যাত্রীরা বর্তমানে যাত্রাবাড়ী-পোস্তগোলা ব্রিজ হয়ে অথবা চাষাঢ়া-সাইনবোর্ড রুটে চট্টগ্রামে যান। এখন শীতলক্ষ্যা সেতু দিয়ে যানজট এড়িয়ে সহজে চট্টগ্রাম যেতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, ১ দশমিক ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলগামী যানবাহন এবং একইভাবে চট্টগ্রাম থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী যানবাহন যানজট এড়াতে এবং সময় বাঁচাতে নারায়ণগঞ্জ শহরকে বাইপাস করতে সক্ষম করবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মদনপুর থেকে সেতুটি মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর থেকে শ্রীনগরের ছনবাড়ি পর্যন্ত যুক্ত করবে। এর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সড়ক নেটওয়ার্ক দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে।
সেতুতে সংযুক্ত হচ্ছে দেশের ১৮টি জেলা। এর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সংযুক্ত জেলাগুলো হলো নড়াইল, গোপালগঞ্জ, খুলনা, মাগুরা, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনা, বাগেরহাট, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, বরিশাল, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি। সেতুটির সঙ্গে নতুন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠলে পদ্মা সেতু থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা পাবে জনগণ।
২০১০ সালে একনেকে এটি অনুমোদন পায়। তবে নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি। সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৬০৮ দশমিক ৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৬৩ দশমিক ৩৬ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে এবং ৩৪৫ দশমিক ২০ কোটি টাকা সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) থেকে এসেছে।

ওয়াকওয়েসহ সেতুটিতে ৩৮টি স্প্যান রয়েছে। পাঁচটি নদীতে এবং ৩৩টি পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে। হাঁটার পথসহ সেতুটির প্রস্থ ২২ দশমিক ১৫ মিটার। এছাড়া, ছয় লেনের টোল প্লাজা এবং দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়কও নির্মাণ করা হচ্ছে।

নতুন এই সেতুতে ট্রেলার ৬২৫ টাকা, হেভি ট্রাক ৫০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক ২৫০ টাকা, মিনি ট্রাক ১৯০ টাকা, বড় বাস ২২৫ টাকা, মিনিবাস ১২৫ টাকা, মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, প্রাইভেটকার ১০০ টাকা, তিন চাকার মোটর বাহন ২৫ টাকা, মোটরসাইকেল ১৫ টাকা এবং রিকশা, ভ্যান, সাইকেল ও ঠেলাগাড়িকে পাঁচ টাকা টোল দিতে হবে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top