নিজস্ব প্রতিবেদক…..
সরকার এলপিজি ও সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ৩ অক্টোবর। এরপর চার দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। কিন্তু নতুন দরের মাল বুঝে না পাওয়ার খোঁড়া অজুহাত দেখিয়ে খুলনার ব্যবসায়ীরা পুরনো দামেই বিক্রি করছেন বোতলজাত সয়াবিন তেল ও এলপি গ্যাস। সরকার নির্ধারিত দরে এ দুটি পণ্য বিক্রি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা।
তবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামে তেল গ্যাস বিক্রি নিশ্চিত করতে বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) থেকে খুলনায় অভিযান শুরু হয়েছ।
নগরীর বড় বাজারের একাধিক দোকান ঘুরে জানা যায়, এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯২ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। একইভাবে ৫ লিটারের বোতল ৯৪০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া খোলা সয়াবিন এক কেজি ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অথচ সরকার ৩ অক্টোবর সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১৪ টাকা ও খোলা প্রতি লিটারে ১৭ টাকা দাম কমিয়ে নতুন দর নির্ধারণ করে দেয়। সরকার নির্ধারিত নতুন দর অনুযায়ী প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১৫৮ টাকা, বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন ১৭৮ টাকা ও ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ৮৮০ টাকা বিক্রি হওয়ার কথা।
অন্যদিকে এলপিজি বোতলের দাম ৩৫ টাকা কমিয়ে ১২০০ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সরকারি নির্দেশনা না মেনে ১২৫০-১৩০০ টাকায় ১২ কেজির সিলিন্ডার বিক্রি করতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন নতুন রেটের মাল কোম্পানি থেকে তারা বুঝে পাননি। যে কারণে তারা সরকার নির্ধারিত দরে বিক্রি করতে পারছেন না।
নগরীর বড় বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী, দোকানদার ও গুদামজাতকারীরা জানান, কোম্পানি থেকে এখনো নতুন দরের মাল আসেনি। পুরোনো দরের বোতল শেষ হলেই মার্কেটে আসবে। প্রতিনিয়ত তেল বিক্রি করতে গিয়ে তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
বাজারের মেসার্স বিধান স্টোরের মালিক লিটন সাহা জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের কাছে নতুন দামের সয়াবিন তেল এখনো আসেনি। ফলে নতুন দামে তেল বিক্রি করতে পারবো না।
ব্যবসা করা দায় হয়ে পড়েছে। সরকার একেক সময় ভোজ্য তেলের একেক দাম নির্ধারণ করে। তেলের দাম সরকার ১৪ টাকা কমিয়েছে ঠিক কিন্তু কোম্পানি আমাদের কাছ থেকে কম নিচ্ছে না।
একই কথা জানালেন আসাদ স্টোরের মালিক আসাদুল ইসলাম। এখানেও ১ লিটারের সয়াবিন তেল ১৯০ ও ৫ লিটারের সয়াবিন তেল ৯০০ টাকায় বিক্রি করছে তারা। আসাদুল বলেন, সরকারের নতুন দরের ঘোষণা তারা শুনেছেন। কিন্তু বাস্তবায়ন হতে সময় লাগবে।
অপরদিকে বর্ধিত দরেই ১২ কেজি বোতলের এলপিজি গ্যাস বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে আসাদুল বলেন, প্রতি বোতল এলপি গ্যাসের দাম ১২৫০ টাকা, আবার অনেকে ১৩২০ টাকা দরেও বিক্রি করছেন। পূজার ছুটি হওয়ায় এখনো নতুন দরের গ্যাস আমাদের কাছে আসেনি। তাই আগের দরেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
নগরীর সাউথ সেন্ট্রাল রোডের একাধিক গ্যাস বিক্রেতা জানান, তাদের কাছে আরও কয়েকদিনের গ্যাস মজুত আছে। সরকার নির্ধারিত দামে যদি বিক্রি করতে হয় তাহলে তাদের বিপুল পরিমাণ লোকসান গুনতে হবে। কারণ কোম্পানি থেকে কোনো ভর্তুকি দেওয়া হয় না।
গ্যাস কিনতে আসা নিয়াজ আহমেদ নামে একজন ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকার ভোজ্য তেল ও এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সেটা মানছে না। তারা পূর্বের দরে বিক্রি করছেন।’
তার পাশে থাকা আরেক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের দেশে একবার যে জিনিসের দাম বাড়ে, সহজে তা আর কমতে চায় না। আর কমলেও যাদের দেখার কথা তারা সঠিকভাবে দেখে না।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার দপ্তরের খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সিকদার শাহিনুর আলম জাগো নিউজকে বলেন, আগের দামে গ্যাস ও সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে এমন অনেক অভিযোগ আমরা পেয়েছি। কিন্তু ছুটি থাকায় আমরা অভিযান চালাতে পারিনি। আজ বৃহস্পতিবার থেকে এ বিষয়ে অভিযান শুরু হয়েছে। অভিযানে জেল ও জরিমানা করা হবে।