ভোটার শনাক্তের সমস্যা মেটাতে ১০ আঙুলের ছাপ নেবে ইসি

evm27-20220927190807.webp

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক…..
ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটে কারচুপি বা ওভাররাইটের অভিযোগ সমাধানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সব ভোটারের দুই হাতের ১০ আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে। এতে ভোট দেওয়ার সময় ফিঙ্গার প্রিন্ট বা আঙুলের ছাপ না মেলার সমস্যা অনেকাংশে কেটে যাবে।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন কমিশন ভবনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।

তিনি বলেন, দশ আঙুলের ছাপ নিলে যদি একটা আঙুলও মিলে যায়, তবু ভোটার ভোট দিতে পারবেন। এখন চার আঙুলের ছাপ থাকায় অনেকেরই মেলে না। তখন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিজের আঙুলের ছাপ দিয়ে সংশ্লিষ্ট ভোটারকে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দেন। এ নিয়ে নানা সমালোচনা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, কারচুপির সুযোগ থেকে যায়, ওভাররাইট করা যায়। তাই ১০ আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার ওই ক্ষমতার বিষয়টি আরও স্পষ্টকরণ করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ইসি আলমগীর বলেন, বিষয়টি হলো ইলেট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট দিলে প্রথম কন্ডিশন হলো যার ভোট তিনিই দেবেন। এটা নিশ্চিত করা হয়। ভোটার উপস্থিত না হলে অন্য কারও ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই। এটাই হলো ইভিএমের বিশেষত্ব। যন্ত্রই বলে দেয় কেউ ভোটার কি না, অর্থাৎ ফিঙ্গার প্রিন্ট যখন দেবে ইভিএমে সাথে সাথে নাম ও ছবি ভেসে ওঠবে। আর সংশ্লিষ্ট ভোটার ওই কেন্দ্রের না হলে সেটাও ইভিএম জানিয়ে দেবে।
তিনি বলেন, ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে দুটো কাজ একসঙ্গে হয়। ভোটারের পরিচয় শনাক্তকরণ এবং ব্যালট ইউনিটে ব্যালট ওপেন। তখন ভেতরে গেলেই ভোট দিতে পারবেন। কিন্তু কারও আঙুলের ছাপ যদি না মেলে, না মেলার কারণ হলো বয়স বেশি হলে, ভারী কাজ করলে বা হাত না থাকলে। এখন কেউ ভোট দিতে না পারলে সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয়। সেজন্য প্রিসাইডিং অফিসার কী করেন, ভোটারের নাম, পরিচয়, এনআইডি নম্বর মিলিয়ে দেখেন। এরপর পরিচয় শনাক্ত হলে এনআইডি নম্বর ব্যালট ইউনিটে দেওয়া হয়। এ তিনটি মিলে গেলে তবেই প্রিসাইডিং অফিসার ভোটারের পরিবর্তে নিজের আঙুলের ছাপ দেন। তখন ব্যালট ইউনিট সচল হয়। তিনি নিজে ভোট দিতে পারেন না। তিনি কেবল সচল করে দেন। প্রিসাইডিং অফিসার কাকে এবং কয়জনকে এ সুযোগ দিয়েছেন সেটার রেকর্ডও আবার ইভিএমের মধ্যে থেকে যায়।

অন্য এক প্রশ্নে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, এসব ক্ষেত্রে ১ শতাংশ ভোটারকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এ সুযোগটা করে দিতে পারেন। ৫০০ ভোটার কোনো কেন্দ্রে থাকলে ৫ জন ভোটারকে তিনি সুযোগটা দিতে পারবেন। কিন্তু ৬ নম্বর কোনো ভোটারের এ সমস্যা হলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সেটা পারবেন না। কারণ, প্রিসাইডিং অফিসারের আইনগত এবং টেকনিক্যালি সে সুযোগ থাকে না।

‘এ অবস্থায় যদি প্রিসাইডিং পোলিং অফিসার, নির্বাচনী এজেন্ট সবাই একমত হন যে ওই ৬ নম্বর ব্যক্তিটি ভুয়া ভোটার নন, তখন প্রিসাইডিং অফিসার রিটার্নিং অফিসারকে ফোন করেন, তিনি আবার নির্বাচন কমিশনে ফোন করবেন। নির্বাচন কমিশন তখন একটা নতুন পাসওয়ার্ড দেন। সেই পাসওয়ার্ড দিলেই কেবল ওই ৬ নম্বর ব্যক্তিকে সুযোগ করে দিতে পারেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা’- বলেন ইসি আলমগীর।

তিনি আরও বলেন, অনেকে টক শোতে আলোচনা করেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তার মাধ্যমে নাকি ওভাররাইট করা যায়। বিষয়টা তো ভুল। ওভাররাইট করার তো কোনো সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, ভোটারের পরিচয় নিশ্চিতের পর ব্যালট পেপার যেমন দেওয়া হয়, এটাও তা-ই। মিস ইউজ যেন কোনোভাবে না হতে পারে, সেজন্য ১ শতাংশের বেশি আমরা দিই না। ১ শতাংশের বেশি কোথাও লাগেও না। হঠাৎ কোনোখানে লাগে। এতগুলো নির্বাচন করলাম কেবল বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের একটা নির্বাচনে এ হার বাড়াতে হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, ওভাররাইট করা যায়, প্রিসাইডিং অফিসার ভোট দিয়ে দেন; এরকম নানা কথাবার্তা, ভুল ধারণা আছে। তা দূর করতে কী করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কমিশন বৈঠকে। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ওটা ১ শতাংশের ওপরে ওঠবে না কখনো। তবে কথাটা আরও স্পষ্টিকরণ করা হবে, যেন ভুল ধারণা দূর হয়। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কাকে বা কয়জনকে সুযোগটা দিলেন সে তথ্য ইভিএমে থেকে যায়। এখন এটার সঙ্গে সবার স্বাক্ষরসহ ফিজিক্যাল ডকুমেন্ট রাখারও চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে।

ইসি আলমগীর বলেন, টক শোতে কথা বলতে তো প্রমাণ লাগে না। কিন্তু আমার কথা বলতে হলে প্রমাণ লাগে। অনেকেই টক শোতে বলছেন ৫০ শতাংশ ক্ষমতা প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে। প্রমাণ দেখান- আমরা মিলিয়ে দেখি, তাহলে শাস্তি হবে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top