তিন ঘণ্টা পেটানোর পর কুয়েট শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আইসিটি মামলা

1663056746.webp

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট…..
মোবাইল অ্যাপে সরকারবিরোধী মন্তব্য করার অভিযোগে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সিএসই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাহিদুর রহমানকে (২২) পিটিয়েছে ছাত্রলীগ। পরে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে।

বর্তমানে তিনি খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাকে ভর্তি অবস্থায় গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ।
সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) কুয়েটের সিকিউরিটি অফিসার মো. সাদেক হোসেন প্রামানিক (৩৫) খানজাহান আলী থানায় মামলা করেন।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জাহিদের স্বজনরা বলেন, গত রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টায় ড. এম এ রশিদ হলের গেস্ট রুমে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ডেকে নিয়ে যায়। একটি ছাত্র সংগঠনের ট্যাগ লাগিয়ে জাহিদকে ১১টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত নির্মমভাবে পেটানো হয়, যার কারণে তিনি মারাত্মক জখমের শিকার হন।

ওই রাতেই পুলিশ তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এসময় পুলিশ ক্যাম্পাসে ও হাসপাতালে উপস্থিত ছিল।

তবে কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

ওসি জানান, কুয়েটের সিকিউরিটি অফিসার মো. সাদেক হোসেন প্রামানিক বাদী হয়ে জাহিদুর রহমান এবং রেজওয়ান স্যামের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। বর্তমানে জাহিদুল খুলনা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি রয়েছে। তাকে ভর্তি অবস্থায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল ডিভাইজ দিয়ে আক্রমণাত্মক মানহানিকর তথ্য প্রকাশ করে কুয়েট ছাত্রদের মধ্যে অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, শিক্ষার্থী জাহিদুর রহমান ভোলা তজমুদ্দিন সোনাপুর গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে। মামলার অপর আসামি রেজওয়ান স্যাম (২১) ভোলার বোরহানউদ্দিন মুশির হাট গ্রামের বাসিন্দা।

জাহিদের বড় ভাই নাঈম বলেন, আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে যেসব কথা বলা হচ্ছে তা সত্য নয়। আমার ভাইকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। ও কোন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত না।

কুয়েটের সিকিউরিটি অফিসার সাদেক হোসেন প্রামানিকের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে ড. এমএ রশিদ হলের প্রভোস্ট এমডি হামিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কিছু শিক্ষার্থী বেশ কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করে জাহিদুর রহমান বিভিন্ন দেশবিরোধী গ্রুপের সঙ্গে জড়িত। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফর নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছে সে। এটা আমাদের নজরে আসায় ছাত্ররা তাকে প্রথমে একটু জিজ্ঞাসাবাদের পর আমরা তাকে পুলিশে সোপর্দ করি। সে আমাদের কাছে বলেছে সে খেলাফতে বিশ্বাস করে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না।

জাহিদুলকে কারা মারধর করেছে জখম করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমার মন্তব্য করা একটু কঠিন হবে। আমরা পাওয়ার পর কেউ আঘাত করেনি। হতে পারে ছাত্ররা তাকে চর থাপ্পড় মেরেছে।

মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে গিয়ে দেখা গেছে, সেলের মধ্যে জাহিদুরের শরীরে স্যালাইন চলছে। এক কিশোর তার খাবার, ওষুধ আনা নেওয়া করছে। তার মাধ্যমে কথা হয় জাহিদুরের সঙ্গে।

জাহিদুরের বরাত দিয়ে তিনি জানান, রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে হলের বড় ভাইরা তাকে গেস্ট রুমে ডেকে নেন। এরপর ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্টে তার কমেন্ট রিয়্যাক্ট সম্পর্কে জানতে চান। একপর্যায়ে চড়, লাথি, ঘুষ মারা শুরু করেন। পরে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে সারা শরীরে পিটিয়েছে। সবচেয়ে বেশি মেরেছে পায়ে। তারা শুধু জানতে চেয়েছে, আমি কোন দল করি। আমার সঙ্গে কে কে আছে? আমি কোনো দল করি না শুনে-রাত ১১টা পর্যন্ত থেমে থেমে মেরেছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ একইভাবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তিন শিক্ষার্থীকে ফজলুল হক হলের একটি কক্ষে আটকে ব্যাপক মারধর করে ছাত্রলীগ। এর মধ্যে শাহীনুজ্জামানের কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করে পুলিশে তুলে দেওয়া হয়। এর মধ্যে আলামিনের চোখ স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top