খুমেক হাসপাতাল যেন মশা-মাছির প্রজননকেন্দ্র!

1661759504.webp

ব্যুরো এডিটর ..
খাবারের উচ্ছিষ্ট,পলিথিনের ব্যাগ, প্লাস্টিকের বোতল, ওষুধের বোতল, ইনজেকশনের শিশি-সিরিঞ্জ, ব্যান্ডেজ-গজ, স্যালাইনের প্যাকেট, রক্ত ও পুঁজমাখা তুলা-গজসহ নানা মেডিক্যাল বর্জ্য খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ভবনের চারপাশে পানিতে ভাসছে। হাসপাতালের ভবনগুলোর পাশের ড্রেনগুলোতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় চারদিকে নোংরা পানি থৈ-থৈ করছে।

হাসপাতালটির চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ময়লা আবর্জনা আর নোংরা পরিবেশ স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মতে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা আর অবহেলার জ্বলন্ত প্রমাণ এটি। ভর্তি রোগীরা বলছেন, এই হাসপাতালটিতে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ছুটে আসেন ভালো সেবা পাওয়ার জন্য, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার আশায়। কিন্তু এই হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তারকেশ্বর নোংরা পরিবেশের কারণে। শুধু রোগীই না, হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রোগীর স্বজন এবং দর্শনার্থীরাও অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে দাবি তাদের।

আক্ষেপ করে কেউ কেউ বলছেন, খুমেক হাসপাতাল যেন মশা-মাছির প্রজননকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা জানান, একটু বাতাস হলে ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে পেটের নাড়িভুড়ি উল্টে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, ওয়ার্ড ও কেবিন লাগোয়া ফাঁকা জায়গায় ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত পানি জমে আছে। হাসপাতাল চত্বরসহ এর আশপাশে প্রতিনিয়ত ফেলা হচ্ছে খাবারের উচ্ছিষ্ট ও মেডিক্যাল বর্জ্যসহ নানা আবর্জনা। দীর্ঘদিন ফেলে রাখা এসব আবর্জনার স্তূপ যেন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। ময়লা আবর্জনার স্তূপে আবদ্ধ হয়ে থাকা পানি নামছে না। ময়লা, দুর্গন্ধযুক্ত এসব পানি কালো রং ধারণ করেছে। ড্রেনগুলো নোংরা পানিতে ভর্তি। সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণে জন্ম নিচ্ছে মশা। আর এ মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ রোগীরা। এতে মশাবাহিত নানা রোগে আক্রান্তের শঙ্কা করছেন তারা। ভবনগুলোর আশপাশের ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় মশার উপদ্রব বেড়েছে। বিকেল নামার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় মশার উৎপাত। জানা যায়, খুলনা বিভাগের ১০ জেলা, পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জ, পিরোজপুরসহ আশপাশের জেলা এবং উপজেলার মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন খুমেক হাসপাতালে। ২০১৪ সালে হাসপাতালটি ৫০০ শয্যা থেকে ১০০০ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। পর্যাপ্ত জনবল এবং শয্যা না থাকায় এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও জরুরিবিভাগ সবখানে রোগীর চাপ। মেডিসিন, সার্জারি, অর্থোপেডিক, গাইনি সব বিভাগে ধারণক্ষমতার চেয়ে তিনগুণ বেশি রোগী। শয্যা সঙ্কুলান না হওয়ায় ঠাঁই নিতে হচ্ছে মেঝেতে।

সোমবার (১৯ আগস্ট) সকালে কামাল হোসেন নামের এক রোগী বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালের চারপাশ কতটা নোংরা, অপরিচ্ছন্ন তা এখানে ভর্তি না হলে বুঝতাম না। পচা ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হাসপাতালের রোগীরা। ড্রেনে দীর্ঘদিন পানি জমে থাকায় ডেঙ্গুজ্বর আতঙ্কে ভুগতে হচ্ছে। হাসপাতালে ভবনগুলোর পাশের ড্রেন ক্লিনার-সুইপাররা পরিষ্কার করে না। যে কারণে মশা-মাছি সেখানে বাসা বেঁধেছে। খুমেক হাসপাতাল যেন মশা-মাছির প্রজননকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বলতে গেলে ডাস্টবিনের চেয়ে নোংরা হাসপাতালের পরিবেশ। সুমন নামের এক রোগীর স্বজনরা বলেন, হাসপাতালে চারপাশে নোংরা পরিবেশ। নোংরা পানিতে মশা মাছি ভোঁ ভোঁ করছে। হাসপাতালে সুস্থ হতে এসে নতুন রোগ নিয়ে অনেকে বাড়ি ফিরতে হবে । হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর রোগীর সুস্থ হওয়া অনেকাংশে নির্ভর করে। কিন্তু পুরো এ হাসপাতালের নোংরা পরিবেশ রোগীকে আরও অসুস্থ করে ফেলছে।

ভুক্তভোগীরা স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে অনুরোধ জানিয়েছেন।

খুমেক হাসপাতালের পরিচালক মো. রবিউল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালে সামনে ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। যে কারণে পানি আটকে রয়েছে। সাথে ময়লা আবর্জনাও। বিষয়টি সমাধানের জন্য স্থানীয় কাউন্সিলর ও সিটি কর্পোরেশনের ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে কথা বলেছি, যাতে দ্রুত জমে থাকা ময়লা অপসারণ করা হবে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top