ড. মোমেনের বক্তব্যে তোলপাড়

1660915290.1622371636.moman20191211144631.jpg

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট..
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ভারতের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন- এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে এ বক্তব্য ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নানা ধরনের সমালোচনা চলছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ড. মোমেনের এ বক্তব্য তার একান্ত ব্যক্তিগত। এদিকে ড. মোমেন শুক্রবার (১৯ আগস্ট) তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর উৎসব উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক বক্তব্যে ড. মোমেন বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য ভারতের প্রতি অনুরোধ করেছি। ’ এ বক্তব্য প্রচার হওয়ার পর দেশের রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। পরে ড. মোমেনের দেওয়া বক্তব্য কোনো সরকারি বক্তব্য নয় বলে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভারতকে অনুরোধ করবো এ ধরনের কোনো অনুরোধ আওয়ামী লীগ করে না, করেনি। শেখ হাসিনার সরকারের পক্ষ থেকেও কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। যিনি এ কথা বলেছেন তার ব্যক্তিগত অভিমত হতে পারে। এটা আমাদের সরকারেরও বক্তব্য নয়, দলেরও বক্তব্য নয়। অহেতুক কথা বলে সম্পর্ক নষ্ট করবেন না।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির পক্ষ থেকেও নানা সমালোচনা করা হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ড. মোমেনের এ বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেছেন, বেহেশতে থেকে তো আর মিথ্যা কথা বলা যায় না, তাই সত্যটাই বলে দিচ্ছেন অবৈধ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এদিকে ড. মোমেনের এ বক্তব্য ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক সমালোচনা চলছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন বক্তব্য দিতে পারেন কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। কেউ কেউ ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন।

সম্প্রতি ড. মোমেন বেশ কয়েকটি বক্তব্য দিয়ে সমালোচিত হয়েছে। কয়েকদিন আগে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা বেহেশতে আছি’। এমন বক্তব্য দেওয়ার পর তিনি সমালোচনার মুখে পড়েন। পরে সেই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেছিলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে তিনি সেটা কথার কথা বলেছিলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যাখ্যা
চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর উৎসব উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন ড. মোমেন। শুক্রবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা আছেন বলেই আমাদের দেশে উন্নয়ন হচ্ছে। তিনি আছেন বলেই বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আছে। আর বঙ্গবন্ধু দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন, অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়লে সবার মঙ্গল হয়। আর এদেশে যত নাগরিক আছেন, সে যে ধর্মেই লোক হোক, তার সমান অধিকার। সে বাঙালি, সে বাংলাদেশের নাগরিক।

আমি বলেছি যে শেখ হাসিনা যদি সরকারে থাকেন, তাহলে স্থিতিশীলতা থাকে। আর স্থিতিশীলতা থাকলেই উন্নয়নের মশাল আমরা পাই। আমি ভারতে গেলে আসামের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, শেখ হাসিনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমি বলেছিলাম, কেন?
তিনি বলেছিলেন, শেখ হাসিনার সন্ত্রাসবাদ বিরোধিত জিরো টলারেন্সের কারণে আসাম, মেঘালয়সহ এ অঞ্চলে সন্ত্রাসী তৎপরতা নেই। সন্ত্রাসী তৎপরতা না থাকায় তাদের দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। তিনি বললেন, আমার এলাকায় অনেক বিনিয়োগ আসছে, যেহেতু এখন আসামে কোনো সন্ত্রাসী তৎপরতা নেই। আর এটা শেখ হাসিনার আহ্বানেই হয়েছে। তখন আমি ভারত সরকারকে বললাম, আপনার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, শেখ হাসিনা থাকায় স্থিতিশীলতা এসেছে। এ স্থিতিশীলতার জন্য আপনার দেশে যেমন মঙ্গল হচ্ছে, আমার দেশেও হচ্ছে। আপনার দেশেও আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য করছি। এটা ভালো হচ্ছে। সুতরাং স্থিতিশীলতা এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এতে আপনার দেশেও যেমন মঙ্গল হবে, আমার দেশেও মঙ্গল হবে। আমরা চাই অত্র এলাকায় স্থিতিশীলতা, কোনো ধরনের উশৃঙ্খলতা চাই না। এটা করতে পারলে আমাদের সোনালী অধ্যায় যথার্থ হবে।

আমি বলেছি, কিছু কিছু দুষ্টু লোক আমার দেশেও আছে, আপনার দেশেও আছে। তারা উস্কানিমূলক কথা বলে তিলকে তাল করে। আমার সরকারের দায়িত্ব আছে, আপনার সরকারেরও দায়িত্ব আছে, তিলকে তাল করার সুযোগ সৃষ্টি না করা। আমরা এটা করলে, আমাদের মধ্যে সম্প্রীতি থাকবে, কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা থাকবে না। শেখ হাসিনা এ অঞ্চল স্থিতিশীলতা রাখতে বদ্ধ পরিকর। আপনারা এ ব্যাপারে সাহায্য করলে আমরা খুব খুশি হবো।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top