আমদানি শুরু, ঠান্ডা হচ্ছে চালের বাজার

image-573697-1658089497.jpg

ডেস্ক রিপোর্ট:  বেসরকারিভাবে সীমিত পরিসরে চাল আমদানি শুরু হয়েছে। গত মাসে চাল আমদানির সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বেপরোয়া হয়ে ওঠা চালের দামে লাগাম আসে। এখন আমদানি শুরু হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহে দেশের প্রধান এই খাদ্যপণ্যের দাম আরও কমবে বলে আশা করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

রোববার পর্যন্ত চাল আমদানির জন্য আবেদনের শেষ দিন ছিল। ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৯ লাখ ১০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এ পর্যন্ত ইমপোর্ট পার্মিশন (আইপি) ক্লিয়ারেন্স নেওয়া হয়েছে ৪ লাখ টনের বেশি। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভারত থেকে ৫০০ মেট্রিক টন চাল বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসমাইল হোসেন রোববার রাতে বলেন, ‘আমদানীকৃত চাল দেশে আসতে শুরু করেছে। ঠিক কী পরিমাণ আমদানি হয়েছে, তার নির্দিষ্ট তথ্য এখনো নেই।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা তাদের হিসাব মতো আমদানি করেন। আমদানির জন্য অনুমোদিত পরিমাণের অর্ধেক চালও যদি আসে, সেটাও ৪ লাখ টনের মতো হয়ে যাবে। তবে এটা আমদানিকারকদের বিষয়।’

এবার বোরোর ভরা মৌসুমে চালের দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে নজিরবিহীনভাবে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ৩০ জুন প্রথম দফায় ৯৫টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ৪ লাখ ৯ হাজার টন চাল আমদানির অনুমোতি দেওয়া হয়। বরাদ্দপত্রে দেওয়া শর্ত অনুযায়ী ১১ আগস্টের মধ্যে তাদের চাল আমদানি করে বাজারজাত করতে বলা হয়েছে। তার আগেই একাধিক প্রতিষ্ঠান চাল আমাদানি শুরু করেছে। তবে অনুমোদন নেওয়ার তুলনায় আমদানির পরিমাণ অনেক কম। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশেই চালের দাম কমতে শুরু করেছে। তাই তারা সতর্ক পদক্ষেপে আগাচ্ছেন। রোববার পর্যন্ত একাধিক দফায় ৪ লাখ ১০ হাজার টন চাল আমাদানির বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, বড় বড় কিছু প্রতিষ্ঠান সীমিত পরিসরে চাল আমদানি শুরু করেছে। তবে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো চাল আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এর কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বড় প্রতিষ্ঠানগুলো অল্প লাভেই চাল বিক্রি করতে পারে। কিন্তু ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি লাভের আশায় চাল আমদানি করে। বর্তমানে দেশে চালের বাজারের অবস্থা স্থিতিশীল। গত সপ্তাহের চেয়ে চলতি সপ্তাহে চালের দাম দু-চার টাকা করে কমেছে। এ অবস্থায় ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো চাল আমাদানির পথে নাও হাঁটতে পারে।

এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তার অভিমত-চাল আমদানি করা সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল না। দাম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যেই চাল আমদানির পথে হেঁটেছে সরকার। আমাদের (সরকারের) হিসাব অনুযায়ী, দেশেই পর্যাপ্ত চাল আছে। তাই খুব বেশি চাল আমদানি করে ব্যবসায়ীরা নিজের পায়ে কুড়াল মারবেন বলে মনে হয় না। সরকারের এতে মাথাব্যথা নেই। কারণ, যারা কারসাজি করতে চেয়েছিলেন তারা আমদানির তথ্য জেনে বাজারে চাল ছাড়তে শুরু করেছেন। না হলে চালের দাম কমছে কেন-এমন প্রশ্ন রাখেন এ কর্মকর্তা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর তথ্য অনুযায়ী, রোববার ঢাকায় প্রতি কেজি সরু চালের দাম ছিল ৬৪ থেকে ৭৫ টাকা, গত সপ্তাহে এ চালের দাম ছিল ৬৪-৮০ টাকা। গত বছর এই সময়ে সরু চালের দাম ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা।

মাঝারি চালের বর্তমান দর ৫২ থেকে ৫৮ টাকা। গত সপ্তাহে এ চালের দাম ছিল ৫২ থেকে ৬০ টাকা। গত বছর এই সময়ে মাঝারি চালের দাম ছিল ৫২-৫৬ টাকা। এছাড়া মোটা চালের দর এখন ৪৮ থেকে ৫২ টাকা। গত সপ্তাহে এই চালের দাম একই ছিল। তবে গত বছর একই সময়ে মোটা চালের দাম ছিল ৪৬-৫০ টাকা।

বোরোর ভরা মৌসুমে চালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকার যে উদ্বেগে ছিল, তা এখন নেই বললেই চলে। কারণ সরকারের কাছে থাকা ধান, চাল ও গমের সন্তোষজনক মজুত আছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সরকারের খাদ্যশস্য মজুত আছে প্রায় পৌনে ১৬ লাখ টন। এর মধ্যে চাল আছে ১৩ লাখ ২২ হাজার টন, ১ লাখ ৬৭ হাজার টন গম এবং ১ লাখ ১২ হাজার টন ধান আছে সরকারের হাতে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top