খুলনার দর্পণ ডেস্ক : তার সুযোগ পাওয়া নিয়েই ছিল ঘোর অনিশ্চয়তা। ছয় মাস ছিলেন দলের বাইরে। তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তিই দেখে ফেলেছিলেন অনেকে। অথচ সেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদই এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। আর স্ট্রাইক রেটের তালিকাতে টাইগার খেলোয়াড়দের মধ্যে তার অবস্থান সেরা তিনে।
গতকাল পুনেতে ২০২৩ বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। টস হেরে আগে ব্যাট করে ৩০৬ রান তোলে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ব্যাটারদের সম্মিলিত অবদানের দিনে অভিজ্ঞ মিডল অর্ডার ব্যাটার মাহমুদউল্লাহ করেন ৩২ রান। রানআউট হয়ে মাঠ ছাড়ার আগে ২৮ বল মোকাবেলায় ১ চার ও ৩ ছক্কা মারেন তিনি। ৩৭ বছর বয়সী মাহমুদউল্লাহ বিশ্বকাপ শেষ করেছেন ৩২৮ রান নিয়ে। তার ব্যাটিং গড় ৫৪.৬৬। একটি করে সেঞ্চুরি ও হাফসেঞ্চুরির স্বাদ নিয়েছেন তিনি। মাহমুদউল্লাহ ক্রিজে গেছেন আট ম্যাচের সাত ইনিংসে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাননি। এরপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের একাদশেই ছিলেন না তিনি।
এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটার হিসেবে সেঞ্চুরি করেন মাহমুদউল্লাহ। মুম্বাইতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিনি খেলেছিলেন ১১১ রানের ইনিংস। ওই সেঞ্চুরিতে একাধিক রেকর্ডের মালিক হন তিনি। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে শতকটি ছিল বিশ্বমঞ্চে তার তৃতীয়। এর আগে ২০১৫ সালে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন অঙ্ক ছুঁয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কারও এতগুলো সেঞ্চুরি নেই। দুটি সেঞ্চুরি আছে সাকিব আল হাসানের, একটি মুশফিকুর রহিমের। একাধিক বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করা বাংলাদেশের প্রথম খেলোয়াড়ও মাহমুদউল্লাহ। একইসঙ্গে প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে টানা দুই বিশ্বকাপে ৩০০ এর বেশি রান সংগ্রহ করেছেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। ভারতের মাটিতে চলমান আসরে বাংলাদেশের আর কোনো ব্যাটার সব মিলিয়ে তিনশ রান স্পর্শ করতে পারেননি। ওপেনার লিটন দাস করেছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৮৪ রান। তৃতীয় সর্বোচ্চ ২২২ রান করেছেন টপ অর্ডার ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্ত। দুইশোর বেশি রান করা বাকি দুজন হলেন- মুশফিকুর রহিম (২০২) ও মেহেদী হাসান মিরাজ (২০১)। এদিকে ৭ ইনিংসে ব্যাট করে নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান করেছেন ১৮৬ রান। ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি দুই ম্যাচ।
বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে দলে ফেরা মাহমুদউল্লাহর স্ট্রাইক রেট ৯১.৬২। এই বিশ্বকাপে তিনিসহ বাংলাদেশের মাত্র তিন ক্রিকেটারের স্ট্রাইক রেট নব্বইয়ের ঘর ছুঁয়েছে। বাকি দুজন হলেন- ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম (৯৫.৩৯ স্ট্রাইক রেটে ১৪৫ রান) ও বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম (১০০ স্ট্রাইক রেটে ২৮ রান)। ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে থাকা মাহমুদউল্লাহর এটিই শেষ বিশ্বকাপ হওয়ার সম্ভাবনা জোরালো। দলীয় অর্জনের ঝুলি একদমই ম্লান হলেও ব্যক্তিগতভাবে কিছু উজ্জ্বল মুহূর্ত নিশ্চয়ই তার স্মৃতিতে অমলিন থেকে যাবে।