ডেস্ক রিপোর্ট: ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রাম চাক্তাই শাখায় ২ হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি হয়েছে। এর মধ্যে আনছারুল আলম চৌধুরী একাই নিয়েছেন ১৬৫০ কোটি টাকা। তিনি এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলমের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও দূর সম্পর্কের আত্মীয়। শাহ আমিন গ্রুপের আহমেদ উল্লাহ নবী চৌধুরী নিয়েছেন ৩৪৭ কোটি টাকা। এছাড়া মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের নামেও ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে একই শাখায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
আনছারুল আলম চৌধুরী বিভিন্ন বেনামি প্রতিষ্ঠানের নামে ইসলামী ব্যাংকের চাক্তাই শাখা থেকে ১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা ঋণ নেন। খাতুনগঞ্জের আছদগঞ্জে আনছার এন্টারপ্রাইজ ও ‘ইনহেরেন্ট ট্রেডিং’ নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে এ ঋণ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঋণ মঞ্জুরের সময় গ্রাহকের কোনো তথ্যই যাচাই-বাছাই করে দেখা হয়নি। এখন জানা যাচ্ছে, আলোচ্য দুটি প্রতিষ্ঠানই ভুয়া। এই ঋণের টাকা দিয়ে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংকের দুটি শাখায় ৫০০ কোটি টাকা এফডিআর করেন। ওই এফডিআর জনতা ব্যাংকে বন্ধক রেখে ৩৪০ কোটি টাকা ঋণ নেন। ওই ঋণের টাকা এস আলম গ্রুপের একটি স্বার্থসংশ্লিষ্ট হিসাবে জমা করা হয়েছে।
আনছারুল আলম চৌধুরীর এই ঋণ খেলাপি হওয়ার মতো থাকলেও এস আলমের প্রভাবের কারণে খেলাপি করা হয়নি। এখন কিস্তি না দিলে ডিসেম্বরের পর তা খেলাপি হয়ে যাবে। ইসলামী ব্যাংকে ঋণের বিপরীতে যথেষ্ট জামানত নেই। দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় সম্প্রতি চট্টগ্রামের বিমানবন্দরে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের শাহ আমিন গ্র“প তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে আর ফেরত দেয়নি। ঋণের টাকা আদায়ে ইসলামী ব্যাংক মামলা করেছে। কিন্তু গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে পারেনি। ব্যাংকে ঋণের স্থিতি এখন বেড়ে ৩৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। আমিন উল্লাহ ফিলিং স্টেশন, আমিন উল্লাহ ওয়েল এজেন্সি, আমিন উল্লাহ ট্রেডিং করপোরেশন, শাহ আমিন ফিলিং স্টেশন, শাহ আমিন লুব্রিকেন্টের নামে এসব ঋণ নেওয়া হয়েছে। ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের কাছে জামা আছে খুবই সামান্য। ইতোমধ্যে গ্রুপের কয়েকটি ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে পরিচালিত শাহ আমিন পরিবহণ সার্ভিস দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি একসময় ভালো ব্যবসা করছিল। কিন্তু এখন তাদের পরিবহণ ব্যবসা আর আগের মতো নেই। লুব্রিকেন্টসের ব্যবসায় ধস নেমেছে। তবে গ্রাহকের বিরুদ্ধে ঋণের টাকা এসব ব্যবসা থেকে অন্য খাতে স্থানান্তরের অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, শাহ আমিন গ্রুপের পুরো ঋণই এখন খেলাপির মধ্যে মন্দ ঋণ বা আদায় অযোগ্য ঋণ হিসাবে চিহ্নিত। এসব ঋণ আদায়ে আদালতে মামলা চলছে। কয়েকটি মামলায় গ্রাহকের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন আদালত।
ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকের বড় শাখাগুলোয় ২০১৭ সালের পর বিতরণ করা সব বড় অঙ্কের ঋণই তদন্ত করা হবে। এ বিষয়ে ব্যাংকের নতুন পর্ষদ ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে এখন প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শক দলও কাজ শুরু করেছে। বড় সব শাখায়ই তদন্ত হবে। যেসব ঋণ এখন খেলাপি হবে বা গ্রাহক পরিশোধ করবে না, সেগুলোর সবই তদন্ত হবে। গ্রাহকের অস্তিত্ব পাওয়া না গেলে সেগুলোকে বেআইনি ও বেনামি ঋণ হিসাবে ধরে নেওয়া হবে। একই শাখায় আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠনের ঋণ জালিয়াতির ঘটনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
আনছারুল আলম চৌধুরীর ঋণ নেওয়া হয়েছে ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক দখলের পর। সেসময় এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটি দখল করে। এরপর বেপরোয়া গতিতে ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামের বিভিন্ন শাখা থেকেও ঋণ নামে টাকা বের করে নেওয়া হয়। আগে চট্টগ্রামের বড় শাখাগুলোর মধ্যে খাতুনগঞ্জ ও লালদিঘীর পাড় শাখাতেই ঋণের বেশি চাপ থাকত। এখন সেই চাপ চাক্তাই শাখাতেও প্রসারিত হয়েছে। শাখাটিতে আলোচ্য জালিয়াতির বাইরে আরও বড় অঙ্কের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা থাকতে পারে।
এছাড়া শাহ আমিন গ্রুপের ঋণ ব্যাংক দখলের আগেই নেওয়া হয়েছিল। তবে দখলের পর আলোচ্য শাখা থেকে ঋণ বিতরণ কয়েকগুণ বেড়েছে।