ডেস্ক রিপোর্ট: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ১০ জনকে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঢাকা, বগুড়া, জয়পুরহাট, রংপুর, ময়মনসিংহের ফুলপুর ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মঙ্গলবার ১০টি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি মামলায় শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামও রয়েছে। মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ চারটি মামলা করা হয়। মামলাগুলোয় আসামির সংখ্যা ১৮০।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ছাত্র-জনতার মিছিলে মো. ফরিদ শেখ নামে এক ব্যক্তি গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। এ ঘটনায় শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ রেহানাসহ ২১ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাকিল আহাম্মদের আদালতে মামলার আবেদন করেন নিহত ফরিদের বাবা মো. সুলতান শেখ। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে ১ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় আরও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, ড. হাছান মাহমুদ, জুনাইদ আহমেদ পলক, মহিবুল হাসান চৌধুরী, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, শেখ ফজলে নূর তাপস, চৌধুরী আব্দুল্লাহ-আল-মামুন, সৈয়দ নুরুল ইসলাম, হারুন-অর-রশীদ, বিপ্লব কুমার, হাবিবুর রহমান, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, আমির হোসেন আমু, সাদ্দাম হোসেন ও আবুল হাসান। এছাড়া অজ্ঞাতনামা ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আরেকটি মামলায় পোশাককর্মীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। রাজধানীর আদাবরে ছাত্র-জনতার মিছিলে পোশাককর্মী সোহেল রানাকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে এ মামলা করা হয়। নিহত সোহেলের ভাই ইব্রাহীম ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান সোহাগ উদ্দিনের আদালতে এ মামলার আবেদন করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ঢাকার আদাবর থানা পুলিশকে মামলাটি এজাহার হিসাবে গ্রহণের আদেশ দেন। এ মামলায় অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল ইসলাম খান নিখিল, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান।
এছাড়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর লক্ষ্মীবাজার এলাকায় গুলিতে সরকারি কবি নজরুল কলেজের ছাত্র হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৪৯ জনকে আসামি করা হয়। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলামের আদালতে মামলার আবেদন করেন নিহতের মা কুলছুমা আক্তার। এ সময় আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে সূত্রাপুর থানা পুলিশকে অভিযোগটি এজাহার হিসাবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। এ মামলায় অপর আসামির মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা।
রাজধানীর রামপুরা এলাকায় শিশু তামীম শিকদারকে (১৩) গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৮৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আফনান সুমীর আদালতে মামলার আবেদন করেন নিহতের দাদি মোছা. কোহিনূর। এ মামলায় ভিন্ন আসামির মধ্যে রয়েছেন সাবেক এমপি মো. ওয়াকিল উদ্দিন।
ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
বগুড়া: বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে কমর উদ্দিন বাংগী (৪০) নামে এক রিকশাচালক নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৮২ জনের নাম উল্লেখ করে ৩৮২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা হয়েছে। নিহতের স্ত্রী তহমিনা বেগম মঙ্গলবার দুপুরে সদর থানায় এ মামলা করেন। এ মামলায় অন্য আসামিদের মধ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা রয়েছেন।
জয়পুরহাট: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে জয়পুরহাটে গুলিতে অটোরিকশাচালক মেহেদী হাসান (২৬) নিহতের ঘটনায় জয়পুরহাটের একটি আদালতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, হাছান মাহমুদ, সাবেক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও সংসদ-সদস্য সামছুল আলম দুদুসহ ২১৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে নিহত মেহেদী হাসানের স্ত্রী জেসমিন আকতার সৃষ্টি বাদী হয়ে জয়পুরহাটের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সদর আমলি আদালতে মামলাটি করেন।
রংপুর: কোটা সংস্কার আন্দোলনে রংপুরে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে সবজি বিক্রেতা সাজ্জাদ হোসেন নিহতের ঘটনায় তার স্ত্রী জিতু বেগম মঙ্গলবার রংপুরের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানাসহ ৫১ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে অন্তত ৩শ জনকে। মামলায় হাসানুল হক ইনু, নাঈমুল ইসলাম খান, রাশেদ খান মেনন, অপু উকিলকেও আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৩০০ জনকে।
ফুলপুর (ময়মনসিংহ): ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার রহিমগঞ্জ ইউনিয়নের চক ঢাকিরকান্দা গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩০) কোটা সংস্কার আন্দোলনে ২০ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় ময়মনসিংহ জেলা (উত্তর) কৃষক দলের সদস্যসচিব শাহ মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৬৭ জনের নাম উল্লেখ করে ময়মনসিংহ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মঙ্গলবার একটি মামলা করেছেন।
সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ): বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন ২০ জুলাই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে পরিবহণ শ্রমিক জনি নিহত হওয়ার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। মামলায় অন্য আসামির মধ্যে সাবেক সংসদ-সদস্য শামীম ওসমান, নজরুল ইসলাম বাবু, গোলাম দস্তগীর গাজী, আব্দুল্লাহ আল কায়সারসহ ১৮৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ১২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে সোনারগাঁ থানায় নিহত পরিবহণ শ্রমিক জনির বাবা ইয়াসিন বাদী হয়ে সোনারগাঁ থানায় মামলাটি করেন।