গভীররাতে শিক্ষার্থীদের মেসে মেসে তল্লাশি, পুলিশ পরিচয়ে ওরা কারা

image-829278-1721277889.jpg

ডেস্ক রিপোর্ট:  মধ্যরাতে পুরনো ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মেসে পুলিশ পরিচয়ে তল্লাশি চালানো অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসময় শিক্ষার্থীদের মেস ছাড়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ওই এলাকায় অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর পুরনো ঢাকার শিংটোলা, ধোলাইখাল, রুকনপুর, গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত শিক্ষার্থীদের মেসে এসব ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের দাবি, এরা স্থানীয় ছাত্রলীগ বা যুবলীগের নেতাকর্মী হতে পারে।

গেন্ডারিয়া থানায় ধোলাইখালে অবস্থিত তিন ইউনিটের ছয়তলার একটি বাসায় সব ফ্লোরেই ছাত্রীরা থাকেন। ওই বাসাও হানা দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

মোহনা রাহমান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের এই ৬ তলা বাসার সব ফ্লোরেই মেয়েরা থাকে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাসার মালিকসহ কিছু মানুষ আমাদের বলে যে আগামীকালের মধ্যে মেস ছেড়ে বাড়ি চলে যেতে। আমরা বলছি, আমাদের অনেকেই টিউশন করাই, স্টুডেন্টের পরীক্ষা আছে, আমরা চাইলেও স্টুডেন্টের পরিবার যেতে দিবে না। আর এখন বাস, ট্রেন সব বন্ধ। রাস্তায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এ দায় কে নিবে? আর যেতেও তো অনেক টাকা ভাড়া লাগবে।

তিনি বলেন, আমাদের কথা শুনে পরে তারা বলেন, ঠিক আছে আপনারা বাসায় থাকেন কিন্তু আন্দোলনে যাবেন না। আর পরিবেশ শান্ত না হলে আস্তে আস্তে বাসায় চলে যাবেন।

মোহনা আরও বলেন, আমরা প্রথমে ভাবছিলাম পুলিশ কিন্তু তাদের সঙ্গে ওয়াকিটকি, অস্ত্র, পোশাক আর কিছু লোকের চেহারা দেখে বুঝতে পেড়েছি ছাত্রলীগ হবে হয়ত।
সূত্রাপুরের শিংটোলা বসবাসরত শিক্ষার্থী নাগিব বলেন, আমরা নয়জন থাকি। পুলিশের পোশাকসহ সিভিলে প্রায় ১৫-২০ জন লোকের একটা টিম আসে। আমাদের এসে বলেন, কালকে সকাল ৮টার মধ্যে বাসা ছেড়ে দিয়ে চলে যাবেন। আমাদের আরেকটি টিম সকাল ১০টায় এসে খোঁজ নিয়ে যাবে।

পুরনো ঢাকার রোকনপুরে মেসে থাকা আরেক নারী শিক্ষার্থী বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে ৫-৬ জন সিভিল ড্রেসে আমাদের বাসায় এসে সকালের মধ্যে বাড়ি ফিরে যাওয়ার হুমকি দেন। আমার কাছে মনে হয়েছে ওরা পুলিশের নাম দিয়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা এসেছে। অন ডিউটিতে থাকলে পোশাক থাকবে। পুলিশের তো ওয়ারলেস থাকবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নারী শিক্ষার্থী জানান, বাড়িওয়ালা আমাদেরকে ফোন করে বলেন, কাল সকাল ৮টার মধ্যে বাসা খালি করে দিবা। তোমাদের কোনো কিছু হলে তার দায় আমি নিব না। পুলিশ আমাকে কল করে বলতেছে। পুলিশ ধরেও নিয়ে যেতে পারে।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সবকিছু তো আমার নিয়ন্ত্রণে না। আমাদের যতটুকু নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে ততটুকুতে এখনো কেউ আঘাত হানতে পারেনি। আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেকগুলো মেসে অবস্থান করে। এতগুলো মেসের সন্ধান তো আমার কাছে নেই। তারপরও বিষয়গুলো আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

তবে মেসে হানা দেওয়া এবং মেস ছাড়ার নির্দেশ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে স্থানীয় থানা পুলিশ। এ বিষয়ে সূত্রাপুর থানার ডিউটি অফিসার মামুন মাহমুদ বলেন, আমাদের পুলিশ গেলে আমরা জানতাম। এ ধরনের কিছু জানা নেই। আর পুলিশ গেলে ইউনিফর্মে যাবে। পুনরায় গেলে থানায় খবর দেওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।

কোতোয়ালি থানার ডিউটি অফিসার রুহুল আমিন বলেন, কোতোয়ালি থানা এলাকায় শিক্ষার্থীদের তেমন কোনো মেস নেই। আর এই ধরনের কোন খবর আসেনি। আমরা জানি না।

জানতে চাইলে লালবাগ জোনের ডিসি মো. মাহবুব-উজ-জামান বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। বিষয়টি দেখতে হবে। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

Share this post

scroll to top