ডেস্ক রিপোর্ট: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) এক শিক্ষার্থীকে হল ছাড়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক সমন্বয়কসহ তিন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই ছাত্র। তার দাবি, অভিযুক্তরা তাকে হল ছাড়ার হুমকি দেন। তা না করলে শারীরিক নির্যাতন ও মেরে ফেলারও হুমকি দিয়েছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মো. রাহিম। তিনি ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী। কাজী নজরুল ইসলাম হলে থাকেন তিনি। অন্যদিকে অভিযুক্তরা হলেন, ব্যবস্থানা শিক্ষা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও সমন্বয়ক এমরান হোসেন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব এবং আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রাজু।
রোববার কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে রহিম জানান, গত তিন মাস ধরে একদল শিক্ষার্থী তাকে মানসিক নির্যাতন করছে। এর ধারাবাহিকতায় গত ১ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার পর একদল শিক্ষার্থী স্লোগান দিতে দিতে তার রুমের সামনে এসে দরজায় কড়া নাড়ে। দরজা খোলার পর তারা রুমটিতে ঢুকে পড়ে।
তখন এমরান রহিমকে উদ্দেশে করে বলেন, ‘১০ মিনিটের মধ্যে রুম খালি কর, নইলে রুম তালা দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিছু না; আমরা যে সিদ্ধান্ত নেব, সেটাই চূড়ান্ত। ব্যাগ গুছিয়ে বের হয়ে যা।’ এক পর্যায়ে নৃবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হাসিব হুমিক দিয়ে বলেন, ‘রুম না ছাড়লে ছাত্রলীগের মতো তোরে পিটামু। তোরে মারা ওয়ান-টু ব্যাপার।’
অভিযোগপত্রে রহিম আরও জানান, গত ৩১ জানুয়ারি রাত ১২টা ৫০ মিনিটে হাসিব ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রাজু মিয়াজি তাকে ডাইনিং সংলগ্ন সিঁড়ির সামনে ডেকে নিয়ে প্রকাশ্যে হেনস্থা করেন। ওই সময় তারা বলেন, ‘১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রুম না ছাড়লে সব জিনিসপত্র ফেলে দেব। পারলে তোর কোনো বাপ আছে নিয়ে আসিস।’
রাহিম জানান, তিনি জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় থাকার কারণে টিউশনি হারিয়েছেন। তার থাকার বিকল্প কোনো জায়গা নেই। বারবার হুমকি ও মানসিক নির্যাতনের কারণে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
রহিমকে হুমকি দেওয়ার কিছু ভিডিও ও অডিও প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা অবগত হলেও তারা ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী হাসিব বলেন, ‘হিট অব মোমেন্টে এই কথা বলেছি। ৫ আগস্টের পর যারা হলে উঠবে, তারা সবাই রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য হলে উঠবে। তাই হল থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আন্দোলনের পর উঠা শিক্ষার্থীদেরকে হল থেকে বের করে দেওয়া হবে।’
একজন শিক্ষার্থী হয়ে আরেকজন শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের মতো মারার হুমকি দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনি আপনার সুবিধার্থে এই নিউজ করতেছেন।’ এরপরই তিনি কল কেটে দেন।
অভিযোগের বিষয়ে সমন্বয়ক এমরান হোসেনও একই কথা বলেন। ছাত্রলীগের মতো মারার হুমকি দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, এ কথা বলা হয়েছে। তবে হাসিবকে আমি এ ধরণের কথা বলতে না করে দিয়েছি।’
এ বিষয়ে নজরুল হলের প্রভোস্ট মো. হারুন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এরকম আচরণ কাম্য নয়। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা আমার কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি। আমি চেষ্টা করবো এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে। আমার কাছে কোনো লিখিত কিংবা মৌখিক অভিযোগপত্র আসেনি। যেহেতু প্রক্টর স্যারের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে, তাহলে এটি এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেখবে।’
সহকারী প্রক্টর মাহমুদুল হাসান রাহাত বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। প্রক্টরিয়াল বডি বসে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদেরকে শোকজ নোটিশ দেওয়া হবে।’