‘ইয়ো-ইয়ো টেস্ট’ ফিটনেস পরীক্ষার মাপকাঠি হতে পারে না: গাভাসকার

Untitled-1-67188c2967a41.jpg

ক্রীড়া ডেস্ক : ‘ফিটনেস পরীক্ষার মাপকাঠি হতে পারে না ইয়ো-ইয়ো টেস্ট’ বলে জানিয়েছেন ভারতের সাবেক কিংবদন্তি ক্রিকেটার সুনীল গাভাসকার। তিনি বলেছেন, ইয়ো-ইয়ো পরীক্ষাই তুলে দিতে চান তিনি। তার মতে, এই পরীক্ষার কোনো প্রয়োজন নেই। সরফরাজ খান ও ঋষভ পন্থের সাফল্যের পর এ কথা বলেন সুনীল গাভাসকার।

ইয়ো-ইয়ো টেস্ট পাশ না করলে ভারতীয় দলে জায়গা পাওয়া যায় না। সে পরীক্ষাই তুলে দিতে চান গাভাসকার। তার মতে, এই পরীক্ষার কোনো প্রয়োজন নেই। বেঙ্গালুরু টেস্টে ভারতকে ম্যাচে ফিরিয়ে ছিলেন সরফরাজ ও পন্থ। সরফরাজ করেন ১৫০, পন্থ করেন ৯৯ রান। তাদের ব্যাটে ভর করেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইনিংসে হারের লজ্জা থেকে বাঁচে ভারত। যদিও শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে হারতে হয়। এক সংবাদমাধ্যমে সুনীল গাভাসকার লিখেছেন, সরফরাজ ও পন্থের সরু কোমর নেই। কিন্তু কী অসাধারণ ক্রিকেটার। মনে রাখতে হবে পন্থ একজন উইকেটরক্ষক। সারাদিন ওঠবস করতে হয়। সেই সঙ্গে স্টাম্পে দৌড়ে যেতে হয়, বল ধরতে হয়। তাই ইয়ো-ইয়ো টেস্ট বাদ দিয়ে দেখা উচিত— মানসিকভাবে একজন ক্রিকেটার খেলার জন্য তৈরি কিনা। সেটাই একজন ক্রিকেটারের সুস্থ থাকার সেরা মাপকাঠি। একজন ক্রিকেটার যদি সারা দিন ব্যাট করতে পারে বা ২০ ওভার বল করতে পারে, তা হলেই সে ম্যাচে ফিট। সে তার কোমর রোগা হোক বা মোটা।

২০১৭ সালে ভারতীয় দলে চালু হয় ইয়ো-ইয়ো টেস্ট। সেই সময় কোচ ছিলেন রবি শাস্ত্রী। সেই পরীক্ষা করে এখনও নেওয়া হয়। পরীক্ষায় ব্যর্থ হলে সেই ক্রিকেটারকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয় বা দলে নেওয়াই হয় না।

ইয়ো-ইয়ো পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার কারণে যুবরাজ সিংহ, আম্বাতি রায়ডু, মোহাম্মদ শামির মতো ক্রিকেটারকেও অনেক সময় দল থেকে বাদ পড়তে হয়েছে। সঞ্জু স্যামসন পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ায় ভারত ‘এ’ দল থেকে বাদ পড়েছিলেন।

এই টেস্ট সাধারণত ক্রিকেটারদের গতি ও তাদের দমের পরীক্ষা নেয়। ২০ মিটার দূরত্বের (ক্রিকেট পিচের দৈর্ঘ্য) মধ্যে ক্রিকেটারদের ছুটতে হয়। একবার ২০ মিটার গিয়ে আবার ২০ মিটার ফিরে আসতে হয়। দৌড় শেষ করার একটি সর্বাধিক সময় রয়েছে। অনেকগুলি পর্যায়ে এই টেস্ট হয়। পর্যায় যত বাড়ে, তত দৌড় শেষ করার সময় কমে। ক্রিকেটাররা যতগুলো পর্যায় শেষ করতে পারেন, তার ওপর ভিত্তি করে তাদের নম্বর দেওয়া হয়। ভারতীয় দলে সুযোগ পেতে হলে ক্রিকেটারদের অন্তত ১৬.২ পেতেই হয়।

গত বছর বিশ্বকাপের আগে ইয়ো-ইয়ো টেস্টের ফল জানিয়ে দিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। তিনি ১৭.২ স্কোর করেছিলেন, যা নিজেই সামাজিকমাধ্যমে পোস্ট করে জানিয়েছিলেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক। যদিও ইয়ো-ইয়ো পরীক্ষার ফল বাইরে জানানোর নিয়ম নেই। যে কারণে বিরাট পোস্টটি মুছে দিয়েছিলেন।

ইয়ো-ইয়ো পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ফুটবলে। বিভিন্ন দেশ এ পরীক্ষার মাধ্যমে খেলোয়াড়দের ফিটনেস পরীক্ষা করে। এখন ফুটবল, ক্রিকেট ছাড়াও বিভিন্ন খেলায় এই পরীক্ষা নেওয়া হয়। তবে ভারতীয় ক্রিকেট দল এই পরীক্ষার ফলের ওপর ভিত্তি করে দল নির্বাচন করে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডের মতো দেশেও ক্রিকেটারদের ইয়ো-ইয়ো পরীক্ষা নেওয়া হয়। তবে সব দেশের পরীক্ষায় পাশ করার নম্বর আলাদা। ভারতে এই পরীক্ষায় পাশ করতে হলে ১৬.২ স্কোর করতে হয়। সেখানে নিউজিল্যান্ডে পাশ করার জন্য চাই ২০.১। পাকিস্তানে পাশ করার জন্য ক্রিকেটারদের ১৯ স্কোর করতে হয়।

ভারতের হকি খেলোয়াড় হার্দিক সিংহের মতে, বিরাটসহ ভারতীয় দলের ইয়ো-ইয়ো পরীক্ষার ফল এমন কিছু আহামরি নয়। তিনি বলেন, ইয়ো-ইয়ো পরীক্ষায় কোনো ক্রিকেটার ১৯ বা ২০ নম্বর পেলে যথেষ্ট ভালো বলা হয়। ভারতীয় ক্রিকেট দলে সবচেয়ে ফিট খেলোয়াড়ের নম্বরই এমন থাকে। আর আমাদের গোলরক্ষক পিআর শ্রীজেশের শেষ বার নম্বর ছিল ২১। কোহলির ফিটনেসের মান মেয়েদের জুনিয়র হকি দলের খেলোয়াড়দের মতো। ইয়ো-ইয়ো পরীক্ষাকে আন্তর্জাতিক স্তরে মান্যতা দেওয়া হয় সব খেলাতেই। আমাদের দলের খেলোয়াড়দের ফিটনেসের মান অনেক ভালো। সম্ভবত দেশের মধ্যে সেরা। আমাদের সব থেকে ফিট খেলোয়াড় ইয়ো-ইয়ো টেস্টে ২৩.৮ নম্বর পেয়েছে।

Share this post

scroll to top