লেবাননে ইসরাইলের বিমান হামলায় শিশুসহ ৪জন নিহত

Lebanan-pic-6717709439b9f.jpg

ডেস্ক রিপোর্ট: দক্ষিণ লেবাননের প্রধান সরকারি হাসপাতালের কাছে দখলদার ইসরাইলের বিমান হামলায় এক শিশুসহ চার জন নিহত হয়েছে।

দেশটির একজন মুখপাত্র এর আগে দক্ষিণ বৈরুতের বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজনকে সরে যাওয়ার জন্য সতর্ক করেন। যদিও যেসব জায়গার কথা বলা হয়, তার মধ্যে রফিক হারিরি হাসপাতালে ছিলেন না।

দক্ষিণ বৈরুতের দাহিয়েহের আশেপাশের এলাকা থেকে পাওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, হামলা শুরুর সময় লোকজন যানবাহনে চড়ে এবং হেঁটে পালাচ্ছে। এর মধ্যে একটি জায়গা ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে যা বৈরুত বিমানবন্দর থেকে চারশ মিটারের মধ্যে। এটি লেবাননের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

স্থানীয় গণমাধ্যম যেসব ছবি প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে বিস্ফোরণে বিমানবন্দরের একটি ভবনের কিছু জানালা উড়ে গেছে। আগের সতর্কতার পর ইসরাইল এখনও এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

এর আগে সোমবার ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা দক্ষিণ বৈরুতে অন্য একটি হাসপাতালের আবরণে থাকা হিজবুল্লাহর একটি বাঙ্কার চিহ্নিত করেছে। তবে সেখান থেকে লোকজন চলে গেছে।

আইডিএফ মুখপাত্র রিয়ার এডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, ওই বাঙ্কারটি ছিল সাহেল হাসপাতালের নিচে এবং এতে কয়েক মিলিয়ন ডলার নগদ অর্থ ও সোনা পাওয়া গেছে।

তার মতে, এসব অর্থ ইসরাইলে হিজবুল্লাহর হামলার কাজে ব্যবহৃত হতো। তবে বক্তব্যের স্বপক্ষে তিনি কোনো প্রমাণ দেননি। তবে সাহেল হাসপাতালের নীচে বাঙ্কার থাকার কথা প্রত্যাখ্যান করেছেন ওই হাসপাতালের পরিচালক এবং তিনি লেবাননের সামরিক বাহিনীকে এলাকাটি পরিদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন।

ইসরাইল হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধকে সামরিক স্থাপনার বাইরেও সম্প্রসারণ করেছে বলে মনে হচ্ছে এবং তারা এখন হিজবুল্লাহর আর্থিক নেটওয়ার্ককে টার্গেট করার কথা বলছে।

রোববার রাতে ইসরাইল বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরতলীতে একটি আর্থিক সংস্থার শাখাগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এছাড়া দেশটির দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলীয় কিছু এলাকাতেও এ ধরনের হামলা হয়েছে।

ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলছে, তারা আল কার্দ আল হাসান অ্যাসোসিয়েশনের কাছে থাকা অর্থকে টার্গেট করেছে। এই প্রতিষ্ঠানটি হিজবুল্লাহর শক্ত অবস্থান থাকা এলাকাগুলোতে বেসামরিক নাগরিকদের বিভিন্ন ধরণের আর্থিক সেবা দিয়ে আসছে।

ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এর আড়ালে তারা ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীটিকে তহবিল যোগায়। তবে এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন বা হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য আসেনি।

সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত আমোস হোচস্টেইন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনার সম্ভাবনা খুঁজতে বৈরুতে গেছেন। আমোস হোচস্টেইন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যত শিগগির সম্ভব লেবানন যুদ্ধের অবসান চায়।

তিনি বলেন, জাতিসংঘের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে শুধু লেবাননের সশস্ত্র বাহিনীই থাকবে এটিই যথেষ্ট নয় এবং আরও কী করণীয় আছে সেটা খতিয়ে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র।

অপরদিকে, হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা উত্তর ইসরাইলে রকেট হামলা অব্যাহত রেখেছে। সোমবার সন্ধ্যার মধ্যে অন্তত ১৭০টি রকেট সীমান্ত অতিক্রম করেছে।

গাজা যুদ্ধের জের ধরে প্রায় এক বছর ধরে আন্তঃসীমান্ত লড়াইয়ের পর ইসরায়েল হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিমান হামলা ও স্থল অভিযান শুরু করে।

তারা বলছে, রকেট হামলার কারণে ইসরাইলের সীমান্ত এলাকায় লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষকে তারা নিরাপদে ঘরবাড়িতে ফিরিয়ে আনতে চায়। ফিলিস্তিনের সমর্থনে গত বছর আটই অক্টোবর হিজবুল্লাহ রকেট হামলা শুরু করে। এর আগের দিনই হামাস ইসরাইলে হামলা করে।

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে দেশটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৮০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে গত পাঁচ সপ্তাহে। ইসরাইল কর্তৃপক্ষ উত্তর ইসরাইল ও দখলকৃত গোলান মালভূমি এলাকায় ৫৯ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে।

Share this post

scroll to top