স্কুলছাত্রীকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা, বরসহ ৩ জনের কারাদণ্ড

4545-6709ff5185343.jpg

ডেস্ক রিপোর্ট: রাজশাহীর পবা উপজেলায় ১৩ বছর বয়সি এক কিশোরীর বিয়ের আয়োজন করায় বরসহ তিনজনের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। শুক্রবার এ বিয়ের আয়োজন চলছিল উপজেলার বাগশৈল গ্রামে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহরাব হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদলত বসিয়ে ছেলে, ছেলের বাবা ও মেয়ের খালুর ছয় মাসের বিনাশ্রম কারদণ্ড দেন। ওই কিশোরীকে উপজেলার বায়ায় অবস্থিত মহিলা ও  শিশু কিশোরী নিরাপদ হেফাজতিদের আবাসন (সেফহোমে) পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, ১৩ বছরের এই কিশোরীর বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল ৩০ বছর বয়সি এক ছেলের সঙ্গে। ছেলে বাকপ্রতিবন্ধী। তার নাম আশরাফুল ইসলাম। তার বাবার নাম শুকুর উদ্দিন। বাড়ি পবা উপজেলার বাগশৈল গ্রামে। বর এর আগে আরও দুটো বিয়ে করেছেন। এবার বসেছিলেন তৃতীয় বিয়ের পিঁড়িতে। মেয়ের বাবা নেই। খালু (পালক পিতা) এ বিয়ের আয়োজন করেন। তার নাম জাফর আলী। তার বাড়িও একই গ্রামে।

স্থানীয় লোকজন জানান, মেয়ে সবেমাত্র পবা উপজেলার দারুশা পপুলার মডেল স্কুলের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। মেয়ের খালু জাফর আলীর নিজের মেয়ে ঢাকায় একটি ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন, কিন্তু এখনো নিজের মেয়ের বিয়ে দেননি। অথচ মাত্র সপ্তম শ্রেণিতে পড়া পালক মেয়েকে ৩০ বছর বয়সি একজন বাকপ্রতিবন্ধীর সঙ্গে বিয়ে দিচ্ছেন, যার আগেও দুইজন স্ত্রী ছিল। মেয়ের মা তার নানির বাড়িতে থাকেন। তিনিও এই বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলেন না।

কেন এমন বিয়ে দিচ্ছেন? আদালতের এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়ের খালু বলেন, ছেলের সঙ্গে মেয়ের প্রেম হয়েছিল। তারা নিজেরাই মৌলভীর কাছে গিয়ে বিয়ে করেছে। এত ছোট একটা মেয়ে, যার এখনো খেলার বয়স, সে কিভাবে এত বেশি বয়সি একটা ছেলে, যিনি আগে আরও দুইটা বিয়ে করেছেন, তার সঙ্গে প্রেম করতে পারে- জানতে চাইলে খালু কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

শেষপর্যন্ত ইউএনও সেই মৌলভীকে হাজির করতে বললে মেয়ের খালু আর কোনো কথা বলতে পারেননি। মৌলভীকেও ডাকতে যাননি। তিনি আদালতের কাছে ভুল স্বীকার করেন।

তবে ছেলের বাবা বলেন, তার ছেলেকে দুইবার বিয়ে দিয়েছিলেন। প্রথম স্ত্রী চলে গেছেন। আর দ্বিতীয় স্ত্রী পছন্দ না হওয়ার কারণে ছেলে তালাক দিয়েছে।  তার দাবি, এবারের বউ যাতে থাকে সেজন্য তিনি ইতিমধ্যে মেয়ের নামে এক বিঘা জমি লিখে দিয়েছেন।

শুক্রবার বিকালে ছেলে, ছেলের বাবা ও মেয়ের খালুকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। আর মেয়েকে পাঠানো হয় সেফহোমে।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পবার ইউএনও সোহরাব  হোসেন বলেন, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ এর ৭(১) ধারায় ছেলের, ও ৮ ধারায় অভিভাবকদের ছয় মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

Share this post

scroll to top