হামাসের হামলার বর্ষপূর্তি যেভাবে পালন করল ইসরাইল

BBC-bangla-done-6704ca5f38b2c.jpg

ডেস্ক রিপোর্ট: ইসরাইল নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় নিহত ও অপহৃতদের স্মরণ করেছে। এমন এক প্রেক্ষাপটে তারা এই আয়োজনগুলো করল যখন গাজা উপত্যকা ও লেবাননে অব্যাহত লড়াই চলছে।

গাজায় হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৭ অক্টোবরের পর থেকে গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযানে ৪২ হাজারের মতো মানুষ মারা গেছে।

ইসরাইল যখন হামলার দিনটি স্মরণ করছে সেদিনও লেবানন থেকে ছোড়া একশর বেশি রকেট, ইয়েমেন থেকে হুতিদের এবং গাজা থেকে হামাসের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র আকাশেই বাধা দিয়ে নিষ্ক্রিয় করার কথা জানিয়েছে তারা।

গত বছর অক্টোবরে হামাসের বন্দুকধারীরা সীমান্ত দেয়াল ভেঙ্গে ইসরাইলি গ্রাম কিবুৎযিম, সামরিক চৌকি ও নোভা মিউজিক উৎসব তছনছ করে দেয়।

সোমবার নিহত ও জিম্মিদের পরিবারের সদস্যদের দিনের প্রথম স্মরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। হামলাটি যখন শুরু হয়েছিলো ঠিক সেই সময়ে একটি মিনিটের নীরবতা পালন করা হয় ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট ইসাক হারজগের নেতৃত্বে। এরপর নিহত ও জিম্মিদের ছবি নিয়ে তাদের স্বজনরা মিউজিক ফ্যাস্টিভালে যে গানটি সর্বশেষ শোনানো হয়েছিলো সেটি শুনেন।

হামলা হয়েছিলো এমন আরও কিছু নিকটবর্তী এলাকায় কয়েকটি ছোট অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর বাইরে নেতানিয়াহু জেরুসালেম আয়রন সোর্ড মেমোরিয়াল পরিদর্শন করেন এবং জিম্মিদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন করেন।

সরকারি অনুষ্ঠানের পাশাপাশি তেল আবিবের সবচেয়ে বড় পার্কে নিহতদের স্মরণে আরেকটি অনুষ্ঠানে যোগ দেয় ইসরাইলি পরিবারগুলো। দেশটির কয়েকজন জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পীর আবেগময় পারফরম্যান্সের সময় বড় পর্দায় দেখানো হয় হামাসের হামলায় নিহত ও জিম্মিদের ছবি।

অনুষ্ঠানের মঞ্চ এমনভাবে সাজানো হয় যেখানে হামলার নানা প্রতীক রাখা হয়। যার মধ্যে ছিল নোভা মিউজিক ফ্যাস্টিভালের পোড়া ও ভাঙ্গা গাড়ি, একটি শিশুর বাইসাইকেল এবং বে’রি কিবুৎয থেকে আনা একটি দোলনা।

আর ইসরাইলের বাইরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে একযোগে হামাসের অবর্ণনীয় নিষ্ঠুরতার নিন্দা জানান। একই সঙ্গে তিনি এর জের ধরে হওয়া যুদ্ধে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন অনেক বেশি বেসামরিক নাগরিক আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের নানা জায়গায় শোকাহত মানুষ জমায়েত হয়েছে।

যুক্তরাজ্যে স্যার কিয়ের স্টারমার হাউজ অব কমন্সে বলেছেন তিনি ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করেন। তবে চলমান সংকটের কোনো সামরিক সমাধান নেই উল্লেখ করে তিনি সব পক্ষকে এ থেকে পিছিয়ে আসার আহ্বান জানান। যদিও এসব স্মরণ অনুষ্ঠান যখন চলছে তখন পুরো অঞ্চল বড় ধরনের সংঘাতের মধ্যে।

ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলছে লেবানন সীমান্ত থেকে হিজবুল্লাহ ১৩০টির বেশি রকেট ছুড়েছে। এর বেশিরভাগকে ভূপাতিত করা হয়েছে। তবে কিছু আঘাত হেনেছে হাইফা ও তাইবেরিয়াস শহরে।

এর আগে হামাসও গাজা থেকে তেল আবিবকে টার্গেট করে রকেট ছোঁড়ে। অন্যদিকে ইয়েমেন থেকে ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সামরিক বাহিনী। তবে সেগুলো ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছে। সারাদিন ধরেই লেবাননের বিভিন্ন জায়গায় বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েল।

ইসরাইলের মিলিটারি বলছে তারা হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযান আরও বিস্তৃত করছে। তারা আওয়ালী নদীর দক্ষিণে সাগরে বা নদীতে নৌকা ব্যবহার এড়ানোর জন্য লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের অধিবাসীদের সতর্ক করেছে।

লেবাননে তিন সপ্তাহের হামলায় ১৪শর বেশি মানুষ মারা গেছে এবং অন্তত বারো লাখ মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে বলে লেবানন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

হিজবুল্লাহ একটি শিয়া ইসলামপন্থিদের রাজনৈতিক, সামরিক ও সামাজিক সংগঠন, যাদের লেবাননে শক্ত অবস্থান আছে। এর শীর্ষনেতা ও সামরিক কমান্ডারদের হত্যাসহ সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ব্যাপক আঘাতের পরেও তারা লড়াই করে যাচ্ছে।

সোমবার তারা ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিরোধে তাদের সক্ষমতার ওপর আত্মবিশ্বাস থাকার কথা জানিয়েছে। এছাড়া ইসরাইল সরকার হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে। লেবানন সীমান্তের কাছে ঘরবাড়ি হারানো লাখ লাখ ইসরাইলিকে নিরাপদে তাদের বাড়িঘরে ফেরানোর অঙ্গীকার করেছে ইসরাইল।

ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলের হামাসের আক্রমণের পরদিন অর্থাৎ ২০২৩ সালের ৮ই অক্টোবর থেকেই ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে রকেট হামলা শুরু করে হিজবুল্লাহ।

Share this post

scroll to top