আমি শুধু জানতে চাই, শুনতে চাই : তমা মির্জা

Untitled-1-66efa24ea8b1a.jpg

বিনোদন ডেস্ক : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সংস্কারের নামে এখনো গণপিটুনিতে হত্যাযজ্ঞ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে একশ্রেণির মানুষ।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জেল নামে এক যুবককে পিটিয়ে মারা হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতা শামীমও গণপিটুনিতে আহত হয়ে মারা গেছেন। এ ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছে। সর্বস্তরের মানুষের পাশাপাশি ‘অমানবিক’ ও ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বিনোদন জগতের শিল্পীরাও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দা জানিয়ে ঘটনার বিচার দাবি করেন তারা।

তোফাজ্জল হত্যার বিচার চেয়ে ইতোমধ্যে প্রতিবাদ করেছেন অভিনেতা-অভিনেত্রী ও পরিচালকরাও। এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঢালিউড অভিনেত্রী তমা মির্জা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টে তমা লিখেছেন— নিহত তোফাজ্জল কোন দল, কোন ধর্ম, কোন বর্ণ, কেমন ব্যক্তি ছিল, মানসিকভাবে সুস্থ ছিল কি ছিল না— জানতে চাই না। ওনারাই বা (খুনিরা) কেন এমন করল, কীভাবে করল, কোন পরিস্থিতিতে করল— শুনতে চাই না। আমি শুধু জানতে চাই, শুনতে চাই— তোফাজ্জল ন্যায়বিচার কি পেল? (এবং সেটি অনতিবিলম্বে’।)

এর আগে তমা মির্জা মারপিটের আঘাতে বিপর্যস্ত তোফাজ্জলের নিথর দেহ পড়ে থাকার একটি প্রতীকী ছবি শেয়ার করেন। সেখানে তমা লিখেছিলেন— ‘আমি বিচার চাই’।

শুধু তমা মির্জাই নন; তোফাজ্জল হত্যার নিন্দা প্রকাশ ও মর্মান্তিক এ হত্যার বিচার চেয়ে এর আগে মুখ খুলেছেন অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী, নির্মাতা আশফাক নিপুন, নির্মাতা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী, চিত্রনায়িকা মৌসুমি হামিদ, অভিনেতা শামীম হাসান, অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ, সংগীতশিল্পী হাসান সানিসহ আরও অনেকে।

এ বিষয়ে নির্মাতা আশফাক নিপুন লিখেছেন— আমি শুধু তাদের মায়েদের কথা ভাবি। এই যে তোফাজ্জল নামের মানসিকভাবে অপ্রকৃতস্থ এক যুবককে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র পিটিয়ে মেরে ফেলল। আমি ভাবি— তোফাজ্জলের মা সেটা দেখতে পেলে কি করতেন? জানলাম উনি মারা গেছেন আগেই। কিন্তু এমনও তো হতে পারে তোফাজ্জলের কাছ থেকে ৩ ফুট দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন উনি। ছেলেকে বাঁচাতে পারছিলেন না দেখে চূড়ান্ত অসহায় বোধ করছিলেন? হয়তো ছেলেকে ভাত খেতে দেখে আশান্বিত হচ্ছিলেন যে ছেলের কিছু হবে না আর, এই যাত্রায় বেঁচে যাবে? হয়তো এরপরও নির্যাতনের মাত্রা দেখে আল্লাহর কাছেই ফরিয়াদ করছিলেন ছেলেটার যেন মৃত্যু হয়, ছেলেটা যেন আর কষ্টের ভেতর দিয়ে না যায়?

তোফাজ্জলকে হত্যার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী প্রশ্ন ছোড়েন, ‘গণপিটুনিকে নরমালাইজ করা হচ্ছে কেন?’

ক্ষোভ প্রকাশ করে মৌসুমি হামিদ তার ফেসবুকে লিখেছেন— ‘আমি তোফাজ্জল হত্যার বিচার চাই। এই হাতের ওপর লাঠি রেখে যারা ওর হাত পাড়াচ্ছে? পা দুইটা থেঁতলায় ফেলছে মারতে মারতে? এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক।’

এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় ঘৃণা প্রকাশ করেছেন অভিনেতা শামীম হাসান সরকার। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টে  লিখেছেন— কারও কোনো ক্ষতি না করেও রাতে ঘুম আসে না। চিন্তা হয় কত কিছু নিয়ে, নিজেকে নিয়ে, পরিবারকে নিয়ে, ভবিষ্যৎ নিয়ে এবং দেশকে নিয়ে। তিনি বলেন, আপনারা খুন করে রাতে ঘুমান কীভাবে? ভাত খান কীভাবে? কষ্ট হয় না?

শামীম হাসান আরও বলেন, মানসিক ভারসাম্যটা তোফাজ্জলেরই ছিল, আপনাদের ছিল না? ভিডিওগুলো যতবার সামনে আসছে, বুকটা ফাঁকাই লাগছে। কীভাবে সম্ভব? তবে বিচার হতেই হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের ছাত্রছাত্রীদের দায়িত্ব— এ খুনিদের বিচার করা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্মান রক্ষার্থে হলেও করতেই হবে।

সংগীতশিল্পী এফএ সুমন লিখেছেন— হায় রে! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যার কেউ নাই তার আল্লাহ আছে। আল্লাহ এই হত্যাকাণ্ডের বিচার কর। বর্তমান সরকারের প্রতি সঠিক তদন্ত করে এর দ্রুত বিচারের আহ্বান জানাচ্ছি। তোফাজ্জল ভাইকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করুন। আমিন।

অভিনেত্রী সুষমা সরকার লিখেছেন— হায় মানবিকতা। গায়ক পারভেজ লিখেছেন— যে যায় লংকায়, সে হয় রাবণ? দিনশেষে অত্যাচারী আর অত্যাচারিত— এ দুদলেই বিভক্ত থেকে গেলাম আমরা?’

উল্লেখ্য, গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে একদল শিক্ষার্থী তোফাজ্জল হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে চোর সন্দেহে কয়েক দফায় নির্যাতন করে। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার বাড়ি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলি ইউনিয়নে। কয়েক বছর ধরে তোফাজ্জল মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ছিলেন।

তোফাজ্জল হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত আট শিক্ষার্থীর মধ্যে ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত বহিষ্কার, তাদের সিট বাতিল, হল প্রভোস্টকে অব্যাহতিসহ বেশ কিছু জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

Share this post

scroll to top