ডেস্ক রিপোর্ট: ফের অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে দেশের প্রথম বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের অত্যাধুনিক ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ১৩৭টি বাস কেনার প্রকল্প। অভিযোগ ৫শ কোটি টাকার এই প্রকল্পে একটি দরদাতা কোম্পানির সঙ্গে সাবেক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রীর পরিবারের লোকজন ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত রয়েছে। বিষয়টি প্রকল্পের সবাই জানেন। এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এপিএস ও সাবেক সংসদ-সদস্য সাইফুজ্জামান শেখর, সাবেক নৌপরিবহণমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, লিয়াকত সিকদার ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সাইদুর রহমান খানসংশ্লিষ্ট রয়েছেন। অভিযোগ আছে, এই সিন্ডিকেট স্থানীয় একটি কোম্পানির পক্ষে লবিস্ট হিসাবে কাজ করছে। একই সঙ্গে তাদের পক্ষে টেন্ডার আহ্বান করে চীনের তৈরি নিুমানের বাস প্রদানের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিআরটির একটি অসাধু চক্রও এর সঙ্গে জড়িত। এই অবস্থায় প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পের গুণগতমান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
জানা গেছে, প্রথম দফায় এই সিন্ডিকেট দরপত্রে অংশ নিতে না পারায় পুরো টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। বাধ্য হয়ে মামলা পর্যন্ত দায়ের করতে হয়েছিল একাধিক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে। শেষ পর্যন্ত একটি দরদাতা কোম্পানির সঙ্গে এই সিন্ডিকেটের নেপথ্যে আন্ডারহ্যান্ড ডিলিং হওয়ার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। ফের টেন্ডার আহ্বান করে বিআরটি। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর সব সেক্টরে ব্যাপক পরিবর্তন এলেও বিআরটি সেক্টর থেকে এই ভূত এখনো দূর করা সম্ভব হয়নি। তাদের শঙ্কা এই সিন্ডিকেট থাকলে প্রকল্পটির মান নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে বিআরটিকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খোদ বিআরটির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, বিগত সরকারের শেষ দিকে সিন্ডিকেট তাদের পছন্দের কোম্পানিকে কাজ দেওয়ার জন্য দরপত্রের সঙ্গে কিছু শর্ত জুড়ে দেয়। চায়নিজ মানের বাসও কেনা যাবে বলে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। অথচ খোদ বিআরটির বোর্ড সভায় ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ন্ড বাস ক্রয়ের সিদ্ধান্ত ছিল। সে অনুযায়ী বাস ক্রয়ের টেন্ডার শিডিউলও তৈরি করা হয়। প্রথম দফায় প্রকল্প ব্যয় ২৫০ কোটি টাকা হলেও ইউরোপীয় মানের বাস কেনার জন্য দ্বিতীয় দরপত্রে ব্যয় দ্বিগুণ করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ইউরোপ থেকে ১৩৭টি বাস ক্রয় করতে হলে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬শ কোটি টাকা বরাদ্দ লাগবে। সেজন্য তারা প্রকল্প ব্যয় বাড়ান।
‘গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্পটি বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে বিআরটি লাইন ৩ এর সম্প্রসারিত উত্তর অংশটি হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের শিববাড়ি পর্যন্ত ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার করিডর বিস্তৃত। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিবিআরটিসিএল)। বিমানবন্দর-গাজীপুর বিআরটি করিডরে বিশেষায়িত বাস সেবা পরিচালিত হবে ‘ঢাকা লাইন’ নামে।
ডিবিআরটিসিএলের আইনজীবীর তথ্য অনুযায়ী, ডিবিআরটিসিএল ১৩৭টি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ডিজেলচালিত বাস কেনার জন্য ১৪ জানুয়ারি প্রথম দরপত্র আহ্বান করে। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি চারটি প্রতিষ্ঠানকে রেসপনসিভ (কারিগরিভাবে যোগ্য) ঘোষণা করে সর্বনিু দরদাতা হিসাবে হাইগার বাস কোম্পানি লিমিটেডকে সুপারিশ করে। তবে তদন্তে দরপত্র দাখিল করা অন্য একটি প্রতিষ্ঠান জিয়ামেন গোল্ডেন ড্রাগন বাস কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে ওই কোম্পানির স্বার্থের সংঘাতের প্রমাণ পাওয়ায় দুই কোম্পানিরই দরপত্র বাতিল হয়। কার্যকর প্রতিযোগিতার অভাব দেখা দেওয়ায় ঢাকা বিআরটি পরিচালনা পর্ষদ এক সভায় সব দরপত্র বাতিল করে। পাশাপাশি দাপ্তরিক প্রাক্কলন, বাজেট পুনঃনির্ধারণ, দরপত্র দলিলের শর্ত, পণ্যের নকশা ও পরিধি সংশোধন করার নির্দেশনা দেয়।
এরপর ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড ১৮ এপ্রিল নতুন করে দরপত্র আহ্বান করে। এই দরপত্রের কার্যক্রম স্থগিত চেয়েও ঝোং টং বাস হোল্ডিং কোম্পানি লিমিটেড হাইকোর্টে একটি রিট করে। কিন্তু আদালত সেটি খারিজ করে দেন।