ডেস্ক রিপোর্ট: দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১১ জেলায় চলমান ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিতে দুর্গতদের জরুরি উদ্ধারে তৎপরতার পাশাপাশি ত্রাণ বিতরণে অংশ নিয়েছেন পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও কোস্ট গার্ড বাহিনীর সদস্যরা। বন্যার্তদের সহায়তায় আগ্রহীদের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অর্থ পাঠানোর জন্য একটি ব্যাংক হিসাবও খোলা হয়েছে। এদিকে বন্যার্তদের সহায়তাসহ যে কোনো প্রয়োজনে র্যাব কন্ট্রোলরুমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরও প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯ বা জেলা পুলিশের হটলাইন নম্বরে যোগাযোগের অনুরোধ জানিয়েছে।
শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অর্থ পাঠানোর জন্য সোনালী ব্যাংকে একটি হিসাব খোলা হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য-সহায়তা প্রদানে আগ্রহীরা প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলের নিম্নোক্ত অ্যাকাউন্টে সহায়তার অর্থ পাঠাতে পারেন। হিসাবের নাম : প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল। সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখা, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় হিসাব নম্বর-০১০৭৩৩৩০০৪০৯৩। এ তহবিলের অর্থ ত্রাণ ও কল্যাণ কাজে ব্যয় করা হয়। প্রেরিত অর্থ সরকার কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ করে এর যথাযথ হিসাব সংরক্ষণ করবে।
হেলিকপ্টারে বন্যার্তদের উদ্ধার র্যাবের : র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক আ ন ম ইমরান খান জানান, শুক্রবার ফেনীতে আটকে পড়া বন্যাদুর্গতদের হেলিকপ্টারে উদ্ধার করে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ত্রাণ বিতরণ করছে র্যাব।
র্যাব সদর দপ্তর জানায়, চলমান বন্যা পরিস্থিতির শুরু থেকেই র্যাবের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় শুক্রবার ফেনীর বিভিন্ন এলাকায় পাঁচ শতাধিক বন্যার্তকে শুকনো খাবার, পানি বিশুদ্ধকরণ টেবলেট, খাবার স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ বিতরণ ও চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি ফেনীর পরশুরাম সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে একজন গর্ভবতী নারী এবং দুজন নবজাতক শিশুকে উদ্ধার করে অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ বন্যাদুর্গত এলাকা থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা পানিবন্দিদের হেলিকপ্টারে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা হচ্ছে। অনেক পানিবন্দি মানুষ যারা ত্রাণ পাচ্ছিলেন না, তাদের খুঁজে বের করে র্যাবের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে কেউ যেন আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে না পারে সেজন্য নিয়মিত টহল কার্যক্রমের পাশাপাশি সাধারণ পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। বন্যার্তদের মানবিক সহায়তাসহ যেকোনো প্রয়োজনে সবাইকে র্যাব কন্ট্রোলরুমের সঙ্গে (মোবাইল নম্বর ০১৭৭৭৭১০৭৯৯) যোগাযোগ করতে বাহিনীর পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।
পুলিশের হটলাইন সেবা চালু : পুলিশ সদর দপ্তরও বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছে। প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯ বা জেলা পুলিশের হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। জেলা পুলিশে হটলাইন নাম্বার-নোয়াখালী +৮৮০১৩২০১১১৮৯৮, লক্ষ্মীপুর +৮৮০১৩২০১১২৮৯৮, ফেনী +৮৮০১৩২০১১৩৮৯৮, ব্রাহ্মণবাড়িয়া +৮৮০১৩২০-১১৫৮৯৮, কুমিল্লা +৮৮০ ১৩২০-১১৪৮৯৮, চাঁদপুর +৮৮০ ১৩ ২০১১ ৬৮৯৮, রাঙামাটি +৮৮০১৩২০১০৯৮৯৮, বান্দরবান +৮৮০১৩২০১১০৮৯৮, খাগড়াছড়ি +৮৮০১৩২০১১০৩৯৮, চট্টগ্রাম +৮৮০১৩২০১০৮৩৯৮, কক্সবাজার +৮৮০১৩২০১০৯৩৯৮, মৌলভীবাজার +৮৮০১৩২০-১২০৬৯৮ ও হবিগঞ্জ +৮৮০১৩২০-১১৯৬৯৮।
৫০০ পরিবারের জন্য বিজিবির ত্রাণ : বন্যার্তদের সহায়তায় বিজিবির সদস্যরা এক দিনের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে প্রদান করেছেন।
এছাড়া বন্যার্তদের সহায়তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের কাছে ৫০০টি পরিবারের মাঝে বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী হস্তান্তর করেছে। শুক্রবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর পক্ষে বিজিবি সদর দপ্তরের পরিচালক লে. কর্নেল মীর মনোয়ার আলী ছাত্র সমন্বয়কদের কাছে ত্রাণসামগ্রী হস্তান্তর করেন।
এছাড়া শুক্রবার বিজিবির শ্রীমঙ্গল ব্যাটালিয়নের উদ্যোগে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মোকাবিল, কুরমা ও চাম্পাপাড়া সীমান্তবর্তী এলাকায় ৬০০ বেশি পরিবারের মধ্যে শুকনা খাবার, বিনামূল্য চিকিৎসা এবং ওষুধ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। বিজিবির বিভিন্ন রিজিয়ন, সেক্টর ও ব্যাটালিয়নের উদ্যোগে দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বন্যাদুর্গত এলাকার অসহায় মানুষদের উদ্ধার কার্যক্রম, ত্রাণসামগ্রী বিতরণ এবং বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে।
ফেনীতে কোস্ট গার্ডের খাদ্য ও পানি সরবরাহ : কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সাব্বির আলম সুজন শুক্রবার বলেন, ফেনীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ‘নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে’ বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। ফেনীর পানিবন্দিদের উদ্ধার ও সার্বিক সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। পানিবন্দিদের উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছে দিচ্ছে কোস্ট গার্ড ডুবুরি দল।
গর্ভবতী নারীসহ ৭৭৯ জনকে উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস : বন্যাদুর্গত এলাকার বিভিন্ন স্থানে আটকেপড়া ৭৭৯ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তাদের মধ্যে ৫ জন গর্ভবতী নারী ও ১৯ জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। ২১ আগস্ট থেকে ২৩ আগস্ট বিকাল পর্যন্ত তাদের উদ্ধার করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের গণমাধ্যম শাখা থেকে বলা হয়েছে, দেশের বন্যাকবলিত এলাকা ও সেখানকার উদ্ধারকাজ পরিদর্শন করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন।
তিনি শুক্রবার দিনব্যাপী বন্যাকবলিত ফেনী ও এর আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখেন। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকাজ পর্যবেক্ষণ করেন এবং বিভিন্ন পয়েন্টে বন্যা কবলিতদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন। এ সময় অধিদপ্তরের পরিচালকসহ (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন ও সবশেষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকালীন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদ্ধার কাজের নির্দেশনা দেন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেইনেন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল থেকে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি টিম বন্যাদুর্গত এলাকায় উদ্ধারকাজ ও ত্রাণসামগ্রী প্রদানের কাজ করছে।