শেখ হাসিনার পর যেভাবে ভারতে পালিয়েছেন আ.লীগ নেতারা

image-836185-1723267074.jpg

ডেস্ক রিপোর্ট: ছাত্র বিক্ষোভ ও গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এদিন দুপরে একটি হেলিকাপ্টারে করে বোন রেহানাকে নিয়ে দেশ ছাড়েন তিনি। পরে বিকালে ভারতের গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমান ঘাঁটিতে অবতরণ করে শেখ হাসিনাকে বহনকারী হেলিকপ্টার।

শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পরে আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতাকর্মী-সমর্থক দেশ ছেড়েছেন। বিবিসি বাংলা এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছে, যারা সরকার পতনের পর দেশ ছেড়েছেন বা ছাড়ার চেষ্টা করেছেন।

নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার এলাকার বাসিন্দা স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা বলেন, সোমবার বিকালে তার বন্ধু তোদের নেত্রী পালিয়ে গেছে, তুই সরে যা এখনই লিখে মোবাইলে বার্তা পাঠিয়ে সাবধান করেন। তবে এই নেতা তখন বাড়ি থেকে সামান্য দূরে বাজারে ছিলেন। তার জানা ছিল না, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন।

ওই ছাত্রলীগ নেতার মতো আরও অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীই ভারতে চলে এসেছেন বা আসার চেষ্টা করছেন বলে বিবিসি জানতে পেরেছে। এদের মধ্যে বৈধ পথে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পেরতে গেলে সমস্যায় পড়তে পারেন, এই আশঙ্কায় অনেকে অবৈধ পথেও ভারতে গেছেন। ভারতে যাওয়া বা যাওয়ার চেষ্টা করছেন, এমন তিনজনের সঙ্গে বিবিসি কথা বলেছে।

নারায়ণগঞ্জের ওই ছাত্রলীগ কর্মী বন্ধুর ফোন পেয়েই বাড়ি থেকে দূরে সরে যান। পরে জানতে পারেন যে সোমবার বিকাল ৫টা নাগাদ তাদের বাড়িতে হামলা চালায় সশস্ত্র দুষ্কৃতিরা। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ভাঙচুর করেছে বাড়ি ঘর, সব লুঠ করে নিয়ে গেছে। আমার বাবা-মাকেও মারধর করেছে। আমি তখন থেকেই ঘর ছাড়া। পরে বাবা-মাকেও সরিয়ে এনেছি। কিন্তু তাদের সঙ্গে এখনও দেখা হয় নি আমার। ওদের এক জায়গায় রেখেছি, আমি অন্য এলাকায় আছি।

তিনি আরও বলেন, আমার পাসপোর্ট ছিল, সেটাও লুঠ করে নিয়ে গেছে বলে শুনেছি। এখন যে কোনভাবে আমি ভারতে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছি। শুনছি সীমান্তে ভীষণ কড়াকড়ি হচ্ছে, তাই দালাল ধরেও যে চলে যেতে পারব, সেই নিশ্চয়তা নেই।

সরকার পতনের একদিন পর বুধবার (৭ আগস্ট) সকালে ভারতের পৌঁছান সাতক্ষীরার শ্যামনগরের এক আওয়ামী লীগ কর্মী। তাদের গ্রামেও সোমবারের পরে হামলা হয়েছে বলে তার দাবি। তিনি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ করতাম, সেজন্যই আমাদের টার্গেট করেছিল ওরা। বাড়ি ঘর ভেঙ্গে দিয়েছে, গলায় দা ধরে বলছে টাকা দে নাহলে কেটে ফেলব। এই অবস্থায় পালিয়ে এসেছি কোনোভাবে। স্ত্রী-পুত্র সব রেখে এসেছি। হয়ত আমাকে না পেলে ওরা আর হামলা করবে না।

তিনি আরও বলেন, পাসপোর্ট, ভারতীয় ভিসা সবই ছিল আমার। চেষ্টা করেছিলাম চেকপোস্ট দিয়ে সীমান্ত পেরতে। কিন্তু শুনতে পেলাম সেখানে নাকি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সন্দেহ হলেই বাড়তি চেকিং করছে। তাই চুরি করে নদী পেরিয়ে ভারতে এসেছি।

দিনাজপুরের এক আওয়ামী লীগ কর্মী বলেন, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়েছেন, এই খবর পেয়েই তিনি বৈধ পথেই সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলীয় একটি শহরে নিজের আত্মীয়র কাছে চলে এসেছেন। তার কথায়, আমি মাস কয়েক আগেও ভিসা নিয়ে ভারতে এসেছিলাম। সেই ভিসার বৈধতা এখনো আছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন, এই অবস্থায় হামলা হতে পারে, এরকম একটা আশঙ্কা করেই আমি চলে আসি। ভিসা থাকায় আমার এই সুবিধাটা হয়েছে।

তবে তার বাড়িতে এখন পর্যন্ত কেউ হামলা করে নি। পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রাখছেন তিনি। এই আওয়ামী লীগ কর্মী জানতে পেরেছেন যে তাদের এলাকায় পরিস্থিতি বেশ স্বাভাবিক হয়েছে এবং স্থানীয়রা আশ্বস্ত করেছেন যে তিনি নিশ্চিন্তে দেশে ফিরতে পারেন। কিন্তু কবে ফিরবেন, সেটা এখনো স্থির করেননি তিনি।

এদিকে অনেক মানুষ বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে বা অবৈধ পথে ভারতে চলে আসছেন, এমন তথ্য সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত অঞ্চলের এক সিনিয়র বিএসএফ কর্মকর্তা। বিএসএফ বলছে বাংলাদেশের পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার পর থেকে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই সীমান্তে অতি সতর্কতা রয়েছে। এর মধ্যেই বাহিনীর নতুন মহাপরিচালক পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন। অনেকগুলো সীমান্ত এলাকায় তিনি সফরও করেছেন, বাড়তি সতর্কতার কথা বারবার তিনি নিজের বাহিনীকে বলেছেন।

বিবিসি বাংলাকে সাক্ষাৎকার দেওয়া তিন আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকই শেখ হাসিনার এভাবে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা, ভারতের চলে আসার চেষ্টা চালানো নারায়ণগঞ্জের ওই ছাত্রলীগ নেতা বলেন, তিনি এটা ভাবলেন না যে এরপরে হাজার হাজার নেতাকর্মীর কী হবে। আমাদের পাসপোর্ট-ভিসা আছে কী না, আমাদের ওপরে হামলা হলে কী ভাবে বাঁচব, সে কথা তো ভাবা উচিত ছিল নেত্রীর।

ওই ছাত্রলীগ নেতা এটাও বলছেন, একটু যদি আঁচ পেতাম যে কী হতে চলেছে সোমবার দুপুরের পরে, তাহলে এইভাবে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে থাকতে হত না। সময় থাকতেই ভারতে চলে যেতে পারতাম।

Share this post

scroll to top