যা দেখি তা সবই সত্যি নয়, আবার যা দেখি না তা সবই মিথ্যাও নয়: আশরাফুল

image-833509-1722675258.jpg

ক্রীড়া ডেস্ক : চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারা দেশ এখন উত্তাল। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমর্থনে আন্দোলনে শামিল হয়েছেন সাধারণ মানুষও। দাবি উঠেছে— দেশের হয়ে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করা ক্রিকেটারদের এই আন্দোলনে শামিল হওয়ার। তবে ক্রিকেটারদের মধ্যে অনেকেই এই আন্দোলনে শামিল হলেও এখনো এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি বাংলাদেশের গ্লোবাল আইকন ও ক্ষমতাসীন সরকারি দলের দুই সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা ও সাকিব আল হাসান।

আশরাফুল তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন—

যা দেখি তা সবই সত্যি নয়, আবার যা দেখি না তা সবই মিথাও নয়।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আজ আপনি যতবড় ক্রিকেটার বা স্টারই হোন না কেন, আপনার দেশ, আপনার দেশের শিক্ষার্থী তথা তরুণ সমাজ সর্বোপরি দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ আপনার অহংকার আর তাদের সাপোর্ট ও ভালোবাসাই আজ আপনি তারকা-মহাতারকা।

অনেককেই দেখলাম শিক্ষার্থীদের হতাহতে, গ্রেফতারে ও মৃত্যুতে সহানুভূতি, সমবেদনা জানিয়ে পাশে থাকার ডিরেক্ট/ইনডিরেক্ট পোস্ট দিয়েছেন আমাদের ক্রিকেটাঙ্গন থেকে। তাদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ।

তবে শিক্ষার্থীদের আমাদের প্রতি আশাটা আরও বেশি। তাই অনেকেই বলছেন— আমরা কেন ক্রিকেটাররা একটা সমবেদনামূলক নিরপেক্ষ একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস দিতেও সংকোচবোধ করছি? সেই ক্ষোভ থেকেই নাকি বড় বড় তারকাদের মানহানি করা হচ্ছে! তাদের ভাষ্য—
দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে অর্থাৎ পৃথিবীর ইতিহাসে ২য় সর্বোচ্চ ছাত্র-হত্যাযজ্ঞ (চায়নার পরেই) নিউট্রাল একটি সত্য বিবৃতিও কি আমাদের কাছ থেকে এই ক্রিকেট পাগল জাতি আশা করতে পারেন না?

যারা কিনা দিনের পর দিন, রাতের পর রাত জেগে আমাদের খেলা দেখতেন, বিজয় ধ্বনিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের স্কুল-কলেজ ও ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসগুলো মাতিয়ে রাখতেন।
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বড় বড় তারকা, যারা এখনো আপনাদের সঙ্গে যুক্ত হননি, তারা হয়তো বিশেষ অসুবিধার মধ্যেই আছেন, হয়তোবা যোগ দেবেন অতিদ্রুতই আপনাদের সঙ্গে, আপনাদের নৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে।

আমার ব্যক্তিগত অবস্থান— বৈষম্যবিরোধী ন্যায়ভিত্তিক চলমান ছাত্র আন্দোলনের (পরিষ্কারভাবেই) পক্ষে আছি, ছিলাম এবং থাকব ইনশাআল্লাহ।

আমি চাই, শুধু কোটার বৈষম্য নয়; বরং দেশে বিরাজমান সব সংকট ও বৈষম্যে মুক্তি পাক। খাদ্যদ্রব্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি, ডলার সংকট, সাধারণ শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতনসহ সব বে-আইনি জিনিস বন্ধ হোক। সম্ভব হলে এখনই (এই আন্দোলনের মাধ্যমেই হোক)। দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ; বলার কোনো ভাষা আমার নেই। বুক চেতিয়ে দেওয়া দুঃসাহসী সাঈদ বা পানি লাগবে কারও পানি বলা টগবগে যুবক মুগ্ধ— এদের মৃত্য সবসময়ই চোখের সামনে ভেষে ওঠে। তবু সমবেদনা জানাই আন্দোলনে নিহত শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর প্রতি।

চাই না আর একটা মৃত্যুর ঘটনাও ঘটুক। চাই ছাত্রছাত্রীরা দ্রুত ক্লাশে ফিরে যাক। সবকিছু স্বাভাবিক হোক। প্রিয় ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলছি— আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আমাদের ক্রিকেটাররা সত্যের পক্ষে কেউ বেশি কিছু লিখুক বা না লিখুক, মনে মনে কিন্তু সত্যটা অস্বীকার করে না, কেউ করবেও না। তারা পরিস্থিতির স্বীকার হয়তোবা। তবে এটিও বলব—
যা দেখি তা সবই সত্যি নয় আবার, যা দেখি না তা সবই মিথাও নয়। (এই যে দেখুন, আন্দোলনের ৬ সমন্বয়কের ডিবি অফিসের বিবৃতি আর এখনকার বিবৃতি।) এখান থেকে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে…!

বি.দ্র. আমি কয়েক মাস ধরে মাইনর কাউন্টি খেলার জন্য ইংল্যান্ডে আছি, নেট-যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল, তাই আপনাদের মহতী এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সোশ্যাল মিডিয়ায় যুক্ত হতে দেরি হয়ে গেল। এর জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ভাইদের প্রতি অনুরোধ— নিরীহ কারও ওপর অধিক বলপ্রয়োগ করবেন না। কারণ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আপনাদেরই ছেলেমেয়ে, ভাইবোন বা আপনার মতোই অন্য কারও স্বজন।

নিরপেক্ষ তদন্তের অধীনে যে বা যারাই খুন, হত্যাযজ্ঞ ও স্থাপনা ধ্বংসে নিয়োজিত ছিল, তাদের সঠিক ও দ্রুত সময়েই দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত হোক। শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাক। সবকিছু দ্রুতসময়েই স্বাভাবিক হোক।

Share this post

scroll to top