সিনিয়র নেতা ও মন্ত্রীদের ‘পরিকল্পনাহীন’ বক্তব্য বন্ধ করতে বললেন ইনু

image-831980-1722332015.jpg

ডেস্ক রিপোর্ট: জামায়াত ও শিবিরকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট ১৪ দলের বৈঠকে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। এছাড়া পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কারফিউ অব্যাহত রাখার বিষয়ে মত দিয়েছেন শরীক দলের নেতারা। তবে পর্যায়ক্রমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। বৈঠকে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা ও মন্ত্রীদের ‘পরিকল্পনাহীন’ বক্তব্য বন্ধ করা দরকার বলেও ১৪ দলীয় জোট নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে তুলে ধরেন নেতারা। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র  এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ১৪ দলে অন্তর্ভূক্ত শরীক দলের নেতাদেও সঙ্গে জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সাড়ে সাতটার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সভা শুরু হয়। সভা চলে রাত সোয়া আটটা পর্যন্ত। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরে একে একে অধিকাংশ শরীক দলের নেতা কথা বলেন। বৈঠকে ১৪ দলের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়য়া ছাড়াও ১৪ দলের ফজলে হোসেন বাদশা, শিরীন আখতার, সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি, ডা. শাহাদত হোসেন, ডা. অসীত বরণ রায়, আওয়ামী লীগের ড. আবদুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, মাহবুবউল আলম হানিফ, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমূখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থিত শরীক দলের এক নেতা বলেন, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে জরুরী সভা ডাকা হয়। সেখানে জোট নেত্রী শেখ হাসিনা এবং ১৪ দলের শরীকদের কথা বলতে দেওয়া হয়। সূত্র জানায়, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ-এর সভাপতি হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টি  (জেপি)-এর সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী সভায় জামায়াত-নিষিদ্ধের দাবি জানান। জোটনেত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা যদি সবাই একমত হন তাহলে এ বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নেবো। এসময় সবাই শেখ হাসিনাকে এই উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বলেন।

জানা গেছে, বৈঠকে সব রাজনৈতিক বিষয়কে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার পরামর্শ দেন রাশেদ খান মেনন। তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের ডিবি অফিসে নেওয়া এবং তাদের খাবার খাওয়ানোর ভিডিও প্রকাশে আদালতের একটি পর্যালোচনা তুলে ধরেন।

বৈঠকে এক নেতা প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি কি আজকে দেখছেন হাইকোর্টে এ রকম দুঃসময়ে একটা মন্তব্য করেছেন, যা দেশ-বিদেশে খারাপ প্রভাব পড়েছে। এটা সরকারের বিরুদ্ধে গেছে। তিনি আরও বলেন, সমন্বয়কদের ধরলই বা কেন? আবার ধরে ওদের খাওয়ায়ে মিডিয়ার প্রচার জাতির সঙ্গে মশকরা।

সভায় হাসানুল হক ইনু তার বক্তব্যে বলেন, (ওবায়দুল কাদেরসহ) আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা-মন্ত্রীদের অতিকথন সরকারকে বারবার বেকায়দায় ফেলছে। এসব পরিকল্পনাহীন বক্তব্য বন্ধ করা দরকার। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে ইনু বলেন, দাবা খেলায় রাজাকে রক্ষার জন্য অনেক মন্ত্রী, সৈনিক, হাতি, ঘোড়াকে বলি দেওয়া হয়। প্রয়োজনে আপনি তাই করুন।

তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী সভায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কারফিউ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব দেন। এসময় অন্যান শরীক দলের নেতাদের বক্তব্যে চৌদ্দ দলের দূরত্ব গুছিয়ে সামনে ঐক্যবদ্ধ থাকার পথ তৈরির পরামর্শও উঠে আসে।

জেপির সভাপতি আনোয়ার মঞ্জু অসুস্থ থাকায় বৈঠকে ছিলেন না। তবে দলটির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম সভায় উপস্থিত হন। সভায় শেখ শহীদুল ইসলাম পরিস্থিতি বুঝে ধীরে ধীরে শিক্ষ প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় না খুললেও প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দিন। না হয় অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। একইসঙ্গে তিনি স্থগিত থাকা এইচএসসি পরীক্ষা দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেন।

গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি ডা. শাহাদত হোসেন বলেন, এই ষড়যন্ত্র দীর্ঘ দিনের।এটা একদিনের নয়। তারা সুযোগ খুজতে ছিল। তারা আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। ছাত্রদেও নির্দলীয় একটা দাবি, যা আগেই মেনে নেওয়া হয়েছিল, তারপরও যে তান্ডব হলো, আমাদের এ বিষয়ে আরও সতর্ক থাকা উচিত। তারপরও প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে এই তান্ডব আর সামনে এগুতে পারেনি।

এর আগে গত ১৯ জুলাই ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে অনুষ্ঠিত ওই সভায় উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশে কারফিউ জারি এবং সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১০ দিনের মাথায় সোমবার আবার জোটের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।

Share this post

scroll to top