খুলনার ছয়টি আসনই নৌকার

Untitled-3-copy-5.jpg

খুলনার দর্পণ ডেস্ক : খুলনায় ভোটের মাঠে শক্ত হাতেই স্বতন্ত্রদের সামলেছেন নৌকার মাঝিরা। জেলার ছয়টি আসনেই বিপুল ভোটে জয় পেয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। খুলনা-৩, ৪ ও ৬ আসনে আওয়ামী ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিলেও শেষ মুহূর্তে শক্ত হাতে হাল ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছেন নৌকা প্রার্থীরা।
গতকাল রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ঘোষিত ফলাফলে জানা যায়, খুলনা-১ আসনে দ্বিতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের ননী গোপাল ম-ল। তিনি পেয়েছেন ৬৮ হাজার ৪০৫ ভোট। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ^াসের বদলে ননী গোপাল ম-লকে দলীয় মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। এই আসনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের সচিব সচিব প্রশান্ত কুমার রায় পেয়েছেন ৩ হাজার ৭৬৬। জাতীয় পার্টির হাসানুর রশিদ পেয়েছেন দুই হাজার ৫৪৬ ভোট।
খুলনা-২ আসনে দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল। ১৫৭টি কেন্দ্রের ১৩৯টির ফলাফলে নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৯৯ হাজার ৮৬৮ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির গাউছুল আজম লাঙল প্রতীকে পেয়েছেন ৩ হাজার ৮৪১ ভোট। ঈগল প্রতীকে মোঃ সাঈদুর রহমান পেয়েছেন ১ হাজার ৭২৭ ভোট।
খুলনা-৩ আসনে বিপুল ব্যবধানে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নৌকা প্রার্থী এসএম কামাল হোসেন। এই আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য মন্নুজান সুফিয়ান এবার মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। তার বদলে প্রথমবারের মতো ভোটে নেমেই বাজিমাত করলেন এসএম কামাল। ১১৬টি কেন্দ্রে তিনি পেয়েছেন ৯০ হাজার ৯৯৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙল প্রতীকের আব্দুল্লাহ আল মামুন পেয়েছেন ৪ হাজার ৮৭৩ ভোট। এছাড়া ঈগল প্রতীকের প্রার্থী ফাতেমা জামান সাথী পেয়েছেন ৩ হাজার ২৩০ ভোট ও গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির এসএম সাব্বির হোসেন পেয়েছেন ১ হাজার ৯৬৩ ভোট।
খুলনা-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম মোর্ত্তজা রশিদী দারা নির্বাচনে কেটলি প্রতীক নিয়ে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিয়েছিলেন। কর্মী সমর্থকদের মারধর হুমকির অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে এই আসনে ছিল টান টান উত্তেজনা। তবে সব পরিস্থিতি সামলে তৃতীয় বারের মতো এই আসনে সংসদ সদস্য হয়েছেন নৌকা প্রার্থী আব্দুস সালাম মূর্শেদী।
খুলনা-৫ আসনে পরপর চারবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন নৌকা প্রার্থী নারায়ন চন্দ্র চন্দ। এই আসনের ১৩৫টি কেন্দ্রের ফলাফলে নৌকা প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৮০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আকরাম হোসেন ঈগল প্রতীকে পেয়েছেন ৯৩ হাজার ১৫০ ভোট।
খুলনা-৬ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোঃ রশীদুজ্জামান ১৪২টি কেন্দ্রের ফলাফলে নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ১ লাখ ৩ হাজার ৩১ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী জিএম মাহাবুবুল আলম ঈগল প্রতীকে পেয়েছেন ৫০ হাজার ২৬১ ভোট। এর মধ্যে পাইকগাছা উপজেলার ৭৯ কেন্দ্রের ফলাফলে নৌকা পেয়েছে ৬৫ হাজার ৭৪৬ ভোট ও ঈগল পেয়েছে ২৮ হাজার ২৩১ ভোট। কয়রা উপজেলার ৬৩টি ভোটকেন্দ্রের ফলাফলে নৌকা পেয়েছেন ৩৭ হাজার ২৮৫ ভোট। তার নিকটতম ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জিএম মাহবুবুল আলম পেয়েছেন ২২ হাজার ৩০ ভোট। এখানে ৫২ হাজার ৭৭০ ভোট বেশি পেয়ে নৌকা প্রার্থী বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। ফলাফল ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এই বিজয়ে প্রতিহিংসাপরায়ণ হলে তার সাথে আমি নেই। মোঃ রশীদুজ্জামান তার ফেইসবুকে পোস্টের মাধ্যমে লেখেন, বিজয়ের আনন্দে প্রতিহিংসাপরায়ণ না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। যদি অতি উৎসাহী হয়ে কেউ প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চায় তবে তার সঙ্গে আমি থাকবো না।
এদিকে বিএনপির ভোট বর্জনের কর্মসূচিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে খুলনায় নাশকতার শঙ্কা করেছিল প্রশাসন। এ নিয়ে উদ্বেগে ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ভোটকেন্দ্র ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। পুলিশের পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্ট গার্ড ও আনসার সদস্যরা মোতায়েন ছিল।
ভোটের দিনকে ঘিরে সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা কাজ করছিল। তবে সব উৎকণ্ঠা ছাপিয়ে গতকাল খুলনায় শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় ভোট। জানা যায়, খুলনা জেলার ছয়টি আসনে এবার মোট ভোটার সংখ্যা ১৯ লাখ ৯৯ হাজার ৮৮২ জন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৩৯ জন।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, নির্বাচনে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ভোটাররা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট প্রদান করেছেন।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top