ট্রেন নাশকতা; এবার প্রাণ হারালো ৪ জন

Untitled-2-copy-10.jpg

খুলনার দর্পণ ডেস্ক : রাজধানীর তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। মরদেহগুলোর মধ্যে একটি শিশু, একজন নারী ও দুইজন পুরুষ। এর মধ্যে ৩ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- রশিদ ঢালী (৬০), নাদিরা আক্তার পপি (৩৫) এবং তার তিন বছরের শিশু সন্তান ইয়াসিন। গত মঙ্গলবার ভোর ৫টায় ট্রেনে আগুনের সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। রেল দুর্ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেল কর্তৃপক্ষ।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (মিডিয়া সেল) মোঃ শাহজাহান শিকদার বলেন, ভোর ৫টা ৪ মিনিটে আমাদের কাছে সংবাদ আসে তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ৩টি বগিতে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। আমাদের ৩টি ইউনিট সকাল পৌনে ৭টার দিকে আগুন নির্বাপণ করে। একটি বগি থেকে ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
রাজধানীর তেজগাঁও রেলস্টেশনে ঢাকাগামী আন্তঃনগর মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস দুর্বৃত্তের দেয়া আগুনে নারী-শিশুসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পাঠানো হয়। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে তাদের মরদেহ ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া। তিনি বলেন, তেজগাঁওয়ে ট্রেনে অগ্নিকা-ের ঘটনায় নারী ও শিশুসহ চারজনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের মর্গে নিয়ে আসা হয়েছে। মরদেহগুলোর মধ্যে একটি শিশু, একজন নারী ও দুইজন পুরুষ।
অপর নিহত রশিদ ঢালী (৬০) ব্যবসায়িক কাজে নেত্রকোনা থেকে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে ঢাকায় রওনা হয়েছিলেন। তবে সকাল থেকেই তার ফোন বন্ধ পাচ্ছেন স্বজনরা। ট্রেনে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে ৪ জনের মৃত্যুর খবর শুনে ঢাকায় থাকা স্বজনরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন তেজগাঁও রেলস্টেশনে। জানতে পারেন মরদেহ নেয়া হয়েছে ঢাকা মেডিকেলে। সেখানেই পরনের পোশাক দেখে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করেন রশিদ ঢালীর মরদেহ।
তবে পুলিশ বলছে, চেহারা দেখে না চেনা যাওয়ায় ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের মাধ্যমে মৃতদেহ হস্তান্তর করা হবে। দুপুরে স্বজনরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে এসে মৃতদেহ সনাক্ত করেন।
রশিদ ঢালীর ভাতিজা বেলাল আহমেদ বলেন, পরনের সোয়েটার, জুতা দেখে তার চাচার মৃতদেহ সনাক্ত করতে পেরেছেন তিনি। তবে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়ায় তার চেহারা দেখে চেনার উপায় নেই।
তিনি জানান, তাদের বাড়ি নেত্রকোনা সদর উপজেলার উত্তর নাগড়া গ্রামে। এলাকাতেই পোশাকের ব্যবসা করতেন। মালামাল কেনার জন্য নিয়মিতই তিনি নেত্রকোনা থেকে ট্রেনযোগে ঢাকায় আসতেন। সোমবার রাত ১২টার দিকে তিনি মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে করে রওনা দেন। সকালে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তারা খবর পান, ঢাকায় ট্রেনে আগুনে ৪ জন মারা গেছেন। গ্রাম থেকে স্বজনদের মাধ্যমে সেই খবর পেয়ে ঢাকায় থাকা বেলাল চাচা রশিদ ঢালিকে খুঁজতে শুরু করেন। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে তার পরনের পোশাক দেখে চিনতে পারেন। এছাড়া তার ক্লিন শেভ করা ও শুধু মাত্র গোঁফ ছিল। তাও মিল পাওয়া গেছে মরদেহে।
ঢাকা রেলওয়ে থানার (কমলাপুর) উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ সেতাফুর রহমান জানান, অজ্ঞাতনামা হিসেবে থাকা মরদেহের মধ্যে একজনের পরিচয় সনাক্ত হয়েছে। বিকেলে তার স্বজনরা পড়নের কাপড় ও জুতা দেখে তাকে সনাক্ত করেন। তবে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ প্রোফাইলিং মাধ্যমে মৃতদেহ হস্তান্তর করা হবে।
তিনি আরও জানান, নিহত শিশু ইয়াসিন ও তার মা নাদিরা আক্তার পপির মরদেহ বিনা ময়নাতদন্তে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, সকালের (মঙ্গলবার) রেল দুর্ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। গতকাল ১৯ ডিসেম্বর রেলভবনে ‘সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত রাজনৈতিক কারণে ট্রেনে নাশকতা সৃষ্টি’ বিষয়ে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। তিনি বলেন, পুরো ঘটনা তদন্ত না করে নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না।
সাম্প্রতিক দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, যাত্রী হয়ে ট্রেনে উঠলে নিরাপদ করা তো রেলের পক্ষে সম্ভব না। বিএনপি-জামায়াত ২০১৩-১৪ সালেও একই ঘটনা ঘটিয়েছে। বাসের বদলে ট্রেনকে এখন প্রধান হাতিয়ার করা হচ্ছে। পরিকল্পিত দুর্ঘটনা ঘটাতে ফিশপ্লেট খুলে দিচ্ছে বলেও তিনি জানান। কোনো দল রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতে পারে কিন্তু সহিংসতা করতে পারে না বলে মন্তব্য করেন নূরুল ইসলাম সুজন। যদিও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে কিন্তু তারা কর্মসূচি না দিলে তো এটা হতো না।
ট্রেনে আগুন লাগার ঘটনায় আহত হয়েছেন নুরুল হক আবদুল কাদের নামের এক ব্যক্তি। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি যে বগিতে ছিলেন, সেই বগিতেই আগুনের সূত্রপাত হয় বলেন তিনি।
তেজগাঁও বিভাগ ও রেলওয়ে পুলিশের কর্মকর্তাদের ধারণা, দুর্বৃত্তরা যাত্রীবেশে ট্রেনে উঠে আগুন দিয়েছে। অগ্নিসংযোগকারীরা হয়তো আগুন দিয়ে বিমানবন্দর স্টেশনেই নেমে গেছে। ওই এলাকার ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি ওই ট্রেনের সব যাত্রীর তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
রেলওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক দিদার আহম্মদ তেজগাঁও রেলস্টেশন পরিদর্শনে এসে বলেন, কারা আগুন দিয়েছে, সেটি উদ্ঘাটনে রেলওয়ে পুলিশ এরই মধ্য তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশের অন্যান্য ইউনিটও কাজ করছে। শিগগিরই এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। ঢাকার পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছেন, যারা হরতাল-অবরোধ ডেকেছে, তারাই এই কাজ করেছে।
এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর ভোরে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার প্রহল্লাদপুর ইউনিয়নের বনখড়িয়ার চিলাই ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। দুর্বৃত্তরা রেললাইন কেটে ফেলায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ওই দুর্ঘটনায় এক যাত্রী নিহত এবং ট্রেনের লোকোমাস্টার ও সহকারী লোকোমাস্টারসহ বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top