ব্যাটসম্যানদের আত্মাহুতির মিছিল দিন শেষে আক্ষেপ বাংলাদেশের

Untitled-2-copy-12.jpg

ক্রীড়া প্রতিবেদক : তারকা ব্যাটসম্যানদের প্রত্যেকেই পেলেন ভালো শুরু, কিন্তু ইনিংস টেনে লম্বা করতে পারলেন কেবল মাহমুদুল হাসান জয়। নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হকদের উইকেট ছুঁড়ে আসার মিছিলের পরও বাংলাদেশ অলআউট না হয়েই প্রথম দিন পার করেছে শেষ উইকেটে ২০ রানের জুটি আর ৫ ওভার কম খেলা হওয়ার কল্যাণে।
দিনের শেষভাগটা পার করে দেন তাইজুল ইসলাম ও শরিফুল ইসলাম। দুজনের ১৯ বলে ২০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৯ উইকেটে ৩১০ রানে দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। অথচ একটা সময় স্কোর ছিল ২ উইকেটে ১৮০ রান। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার ৯০ ওভারের পুরোটা খেলা সম্ভব হয়নি আলোক স্বল্পতায়।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ১০ জন দুই অঙ্ক স্পর্শ করলেও পঞ্চাশ করতে পেরেছেন শুধু মাহমুদুল হাসান জয়। তিনিও বড় কিছুর সম্ভাবনা জাগিয়ে আউট হয়েছেন ৮৬ রানে। এছাড়া নাজমুল হোসেন শান্ত (৩৭), মুমিনুল হকদের (৩৭) ত্রিশ ছোঁয়া ইনিংস শুধু বাড়িয়েছে আক্ষেপ। তাদের সাথে উইকেট ছুঁড়ে আসার মিছিলে আরও ছিলেন মুশফিকুর রহিম, শাহাদাত হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজরা। থিতু হয়ে তাদের আউট হওয়ার আক্ষেপের দিনে পাঁচ বছর পর দুই অঙ্কে পৌঁছে বাংলাদেশের দশ ব্যাটসম্যান। কাইল জেমিসনের ওভারে তিন বাউন্ডারি মেরে ১২ রানে পৌঁছে যান শরিফুল ইসলাম। ইনিংসে দুই অঙ্ক ছোঁয়া দশম ব্যাটসম্যান তিনি। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১১ ব্যাটসম্যানের সবাই খেলেন ১০ বা তার বেশি রানের ইনিংস। এবারও রয়েছে সেটি ছোঁয়ার সুযোগ। দিন শেষে ৮ রানে অপরাজিত তাইজুল ইসলাম। এর আগে ইনিংসে ১৫ বার দুই অঙ্ক ছুঁয়েছেন বাংলাদেশের ৯ ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন কিউই স্পিনাররাই। গ্লেন ফিলিপস ৫৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডের সফলতম বোলার। দুটি করে নেন পেসার কাইল জেমিসন ও স্পিনার এজাজ প্যাটেল।
প্রথম সেশনে জাকির হাসান ও শান্তর উইকেট হারিয়ে ১০৪ রান করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় সেশনের ঠিক আগে ৫ বলের ব্যবধানে আউট হন মুমিনুল ও জয়। ফিলিপসের স্পিনে কট বিহাইন্ড হয়ে যান মুমিনুল। তার ব্যাট থেকে আসে ৭৮ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৩৭ রান। মুমিনুলের বিদায়ে ভাঙে তৃতীয় উইকেটে ১৭১ বলে ৮৮ রানের জুটি। এরপর আর বড় কোনো জুটি পায়নি বাংলাদেশ। শুরু থেকে এক প্রান্ত আগলে রেখে সেঞ্চুরির খুব কাছে চলে গিয়েছিলেন জয়। তিনি আউট হন ইশ সোধির বলে স্লিপে ড্যারেল মিচেলের দারুণ ক্যাচে পরিণত হয়ে। ১৬৬ বলে ১১টি চারে ৮৬ রান জয়ের। ৩৯ রানে জাকিরে আউটের পর উইকেটে এসেই নিউ জিল্যান্ডের স্পিনের বিপক্ষে পাল্টা আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছিলেন শান্ত। ফিলিপসের ফুলটস স্পিনেই তেড়ে এসে খেলতে গিয়ে লং অনে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ফিলিপসও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না এমন বলে তিনি উইকেট পাবেন। ৩৫ বলে ৩৭ রানের ইনিংসে ৩টি ছক্কা ও ২টি চার মারেন শান্ত। যেন টেস্ট নয়, টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমেছিলেন অধিনায়ক।
দলপতির পথ অনুসরণ করেন বাকিরাও। অবাক করেছেন মুশফিকও। এজাজ প্যাটেলকে সামনে এগিয়ে এসে মেরেছিলেন। কিন্তু শটে জোর ছিল না, যথেষ্ট উচ্চতাও নেয়নি যে ফিল্ডারের মাথা পেরিয়ে যাবে। মিড অফে বুকের ওপর আসা ও রকম সহজ ক্যাচ নিতে কোনো ভুলই করেননি কেইন উইলিয়ামসন। অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমে ২৪ রান করেন শাহাদাত হোসেন। লেট মিডল অর্ডারে মেহেদী হাসান মিরাজ (২০), নুরুল হাসানরাও (২৯) থেমে গেছেন অল্পতেই। নাইম হাসান আউট হন ১৬ রান করে। ১৩ রানে অপরাজিত শরিফুলের সাথে ৮ রানে অপরাজিত তাইজুল আজ আবার ব্যাটিংয়ে নামবেন। অথচ প্রথম দিনে সিলেটের উইকেটের যে আচরণ দেখা গেছে, তাতে এই উইকেট অন্তত টেস্টের তৃতীয় দিন পর্যন্তও ব্যাটিং-সহায়ক থাকবে বলেই মনে হচ্ছে। রান হওয়ার কথা অন্তত চার থেকে সাড়ে চারশো। সেখানে তিনশো পেরিয়েই গুটিয়ে যাওয়ার মুখে বাংলাদেশ।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top