খুমেক শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ী সংঘর্ষের ঘটনায় রোগীরা ভোগান্তিতে

1692124858.363493746_3155617311398246_3726119817205747102_n.jpg

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট….
খুলনা মেডিকেল কলেজের (খুমেক) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ২২ জন আহত হয়েছেন।

সোমবার (১৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এর রেশ ধরে মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) মধ্যরাত পর্যন্ত ও গোটা এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল।
একদিকে ওষুধের দোকানিদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ এনে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি খুমেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছেন। অপরদিকে ওষুধের দোকানিদের ওপর হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগ এনে দোকানগুলোও বন্ধ রাখা হয়েছে। দুপক্ষের এমন মুখোমুখি অবস্থানের কারণে হাসপাতালের ভর্তি রোগীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।

হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট ও বেশ কয়েকজন চিকিৎসক রোগীদের ভোগান্তির ব্যাপারে নিশ্চিত করেছেন। খুমেক হাসপাতালে উপপরিচালক ডা. নিয়াজ মুস্তাফিজ চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনা দুঃখজনক। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। রোগীদের ভোগান্তির বিষয় মাথায় রেখে পর্যাপ্ত ওষুধ মজুদ রাখা হয়েছে। জরুরি সব হাসপাতালে রয়েছে। এছাড়া ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অনুপস্থিতিতে চিকিৎসক সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।

আব্দুল্লাহ নামে এক রোগীস্বজন বলেন, সাধারণত ইন্টার্ন চিকিৎসকরা হাসপাতালে সব সময় দায়িত্ব পালন করেন। তারা রোগীদের মূল সেবা দেন। তাদের অনুপস্থিতিতে স্বাভাবিক সেবা বঞ্চিত হতে হচ্ছে। আবার ওষুধের দোকান বন্ধ থাকায় তাদের ২/৩ কিলোমিটার দূরে গিয়ে ওষুধ আনতে হচ্ছে। ফলে সময় ও অর্থ নষ্ট হচ্ছে সাথে সাথে বাড়ছে ভোগান্তি।

ঘটনার দিন সোমবার রাত থেকে শুধুমাত্র খুমেক হাসপাতালের সামনের ওষুধের দোকানগুলো বন্ধ থাকলেও বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতির পক্ষ থেকে মঙ্গলবার রাতে সভা ডাকা হয়। সভায় আজ বুধবার (১৬ আগস্ট) থেকে খুলনা জেলাব্যাপী সব ওষুধের দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি খুমেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও মঙ্গলবার যেমন জরুরি চিকিৎসা ছাড়া সকল প্রকার স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ রেখেছেন তেমনি বুধবার থেকেও সেটি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।

মঙ্গলবার রাতে খুমেক হাসপাতাল ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. সাইফুল ইসলাম অন্তর বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর যারা হামলা করেছেন তাদেরকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় না আনা পর্যন্ত আমাদের ধর্মঘট যেমন চলবে। তেমনি শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও পৃথক কর্মসূচি আসছে। মঙ্গলবার রাতে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে সভা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলেও তিনি জানান।

এদিকে পক্ষান্তরে বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির পরিচালক ও খুলনা জেলা শাখার সদস্য মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, জেলার বিভিন্ন শাখার কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের উপস্থিতিতে সভা করে ওষুধ ব্যবসায়ীদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত সব ওষুধের দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

মঙ্গলবার রাত পৌনে ১২টায় আরও একটি সভা হয়েছে বলেও তিনি জানান। ওই সভায় কী সিদ্ধান্ত হয়েছে তা জানা যায়নি।

অবশ্য কেএমপির সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মমতাজুল হক বলেন, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সাথে ওষুধ ব্যবসায়ীদের সোমবারের সংঘর্ষের ঘটনাটি নিয়ে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ও খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল বুধবার উভয় পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসে একটি সমাধানের চেষ্টা করবেন বলে জানা গেছে। ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা বা অভিযোগ হয়নি বলেও তিনি জানান।

যদিও এ ব্যাপারে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি বলেছেন, হামলার ঘটনায় কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার মামলা করা হয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে রাতে রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দ্বীন-উল-ইসলামের মোবাইল নম্বরে কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, সোমবার রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের মেসার্স বিপ্লব মেডিসিন কর্নারে এক মেডিকেল শিক্ষার্থী কিছু ওষুধ কিনতে যান। সেখানে ৬ টাকার ওষুধ ৩০ টাকা নেয় দোকানি। সবুজ সরকার নামে ওই শিক্ষার্থী ওষুধের বেশি দাম নেওয়ার কারণ জানতে চান। কিন্তু দোকানি তাকে সঠিক উত্তর না দিলে উভয়ের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা হয়। ওষুধের দাম বেশি রাখা হয়েছে এবং কেন দাম কম রাখা হলো না জানতে দোকানিকে চাপ দেওয়া হয়। একপর্যায়ে আশপাশের ওষুধের দোকানিরা এগিয়ে এলে উভয়পক্ষে মারামারি হয়। এ সময় ওষুধ ব্যবসায়ীরা এলাকাবাসীদের নিয়ে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের ২২জন আহত হন।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top