দেশে গুম-বিচারবহির্ভূত হত্যা কমে গেছে, ইইউকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

1690289513.home_.jpg

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট…….
দেশে গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা অনেক কমে গেছে বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি ইমন গিলমোরকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোরের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আলোচনার মধ্যে রোহিঙ্গা সমস্যা বেশি এসেছে। তাদের নিয়ে কী করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে তারা জানতে চেয়েছেন। আমরা তার জবাব দিয়েছি। তাদের জানিয়েছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেমন সবকিছুতে উন্নত হয়েছে, অভূতপূর্ব সফলতা এনেছে, তার সঙ্গে মানবাধিকার নিয়ে অনেক কাজ করা হচ্ছে। এখানে মানবাধিকার কমিশন রয়েছে, তারা স্বাধীন। তারাও কাজ করছে।

গুম, খুন ও বিরোধী দল যে হয়রানিমূলক মামলার অভিযোগ করেছে, তা নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এগুলো নিয়ে বিশেষ কোনো কথা হয়নি। তারা বলেছে—তারা পর্যবেক্ষণ করছে। গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনার অনেক কমে গেছে। আমরা গুম, খুনের একটি চিত্র তার সামনে তুলে ধরেছি। ২০০৪, ২০০৫ ও ২০০৬ সালে যে পরিমাণ গুম হতো, ২০০৪ সালের একটি সংখ্যা তুলে ধরেছি। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশনা অনুসারে, ২০০৪ সালে ৪০০ মানুষ নিখোঁজ হয়েছে। তখন যে নিখোঁজগুলো হয়েছে, তার তুলনায় এখন অনেক কম।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গুমের ইতিহাস আমরা যতটুকু জানি, যারা আত্মগোপন করে বিভিন্নভাবে তাদের সম্পর্কে আমরা জানি। আবারও বলেছি, গুমগুলোর বেশির ভাগই হেইনাস (ঘৃণ্য) অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তারা দণ্ডের ভয়ে পালিয়ে বেড়ান। কিংবা পারিবারিক সমস্যার কারণে তারা পালিয়ে বেড়ান। কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য লোকসান দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ৭৬ জন গুমের কথা যেটা প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থায়, সেগুলো সম্পর্কে তাকে একটা তথ্য দিয়েছি। যার মধ্যে ২৭ জনের অবস্থান জানিয়েছি। তারা গুম হয়নি, কেউ কারাগারে, কেউ পরিবারের সঙ্গে আছে। কেউ মালয়েশিয়া কিংবা ভারতে আছে। অন্য আরও কয়েকজনের খোঁজ নিচ্ছি, খুব শিগগিরই তাদের খোঁজ দিতে পারব।

নির্বাচন নিয়ে কী জানতে চেয়েছেন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান বলেন, নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে ইউরোপীয় প্রতিনিধিরা। তাদের জানিয়ে দিয়েছি, সংবিধান অনুসারে নির্বাচন হবে। তবে সরকার নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবে। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়া। সেই উপহার দেওয়ার জন্য তিন মাস নির্বাচন কমিশন সরকার পরিচালনা করবে। সরকার মানে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নির্বাচন পরিচালনা করতে যা যা প্রয়োজন, তা নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে করতে পারবে। আমরা মনে করি, অবাধ, সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত একটি নির্বাচন উপহার দিতে পারবে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন নিয়ে তারা কী বলেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা এতটুকু বলেছেন—আমরাও আশা করি, একটি সুন্দর নির্বাচন হবে। নির্বাচন নিয়ে এর বাইরে কোনো কথা নেই।

রোহিঙ্গাদের নিয়ে ইমন গিলমোর কী বলেছেন জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বের কাছে মানবতার প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়েছে, তার প্রশংসা করেছেন ইমন গিলমোর। সবকিছুতে বাংলাদেশ সুন্দরভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া তিনি বলেছেন, আমি ২০১৯ সালেও এসেছিলাম, তখন রোহিঙ্গা সংকট আমি দেখেছি। আমি মিয়ানমারেও গিয়েছিলাম। সেখানে তাদের যে অরাজকতা দেখেছি, তারা বলেছিল, তারা ফেরত নিয়ে যাবে। কিন্তু এখন মিয়ানমারে সাংঘাতিক একটা বৈরী পরিবেশ রয়েছে। যে কারণে হয়তো তাৎক্ষণিকভাবে কিছু করা যাবে না। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেষ্টা আছে, যাতে করে শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হয়।

আসাদুজ্জামান খান বলেন, আমরা জানিয়েছি, হঠাৎ করে জনপ্রতি যে ১২ ডলার সহায়তা দিত, তা আট ডলারে নামিয়ে নিয়ে এসেছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা। এতে রোহিঙ্গারা আরেকটি সংকটে পড়ে যাবে। আর সেখানে স্থানীয় নাগরিকদের চেয়ে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা অনেক বেশি, স্থানীয়রা শ্রমবাজার হারাচ্ছে, আমাদের বন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য তড়িৎ সমাধানের অনুরোধ জানিয়েছি। তারাও স্বীকার করেছে—তড়িৎ সমাধান না হলে, স্বাধীনভাবে রোহিঙ্গারা ফেরত যেতে না পারলে তাহলে সংকট থেকে যাবে। আমরা মনে করি, সমস্যার সুরাহার জন্য দুই দেশেরই (বাংলাদেশ-মিয়ানমার) আন্তরিক হওয়া উচিত।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top