ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের ভাবনা

1688997226.0.jpg

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ……
এক সপ্তাহ পরই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আসার প্রাক্কালে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন নিয়ে ভোটাররা উচ্ছ্বসিত।

তারা জানিয়েছেন, যাকেই ভোট দেবেন, আগে তার বিভিন্ন দিক বিবেচনা করবেন। কোন প্রার্থী কেমন, ভোটারদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ কতখানি- এ বিষয়গুলো ছাড়াও জরুরি কিছু বিষয় যাচাই করতেও ছাড় দেবেন না ভোটাররা।
১৭ আসনের নির্বাচন আলোচনা ও জল্পনা-কল্পনা সবই জমে উঠেছে। কূটনৈতিক পাড়াসহ অভিজাত এ এলাকার সব স্তরে এখন নতুন ‘সংসদ সদস্যের’ ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে সংলাপ হচ্ছে। শ্রমজীবীদের বসতিও আছে এ আসনে। তাই কোন এলাকার ভোটাররা শেষ পর্যন্ত ফল নির্ধারণে মুখ্য হয়ে দাঁড়ান তা নিয়েও চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে।

সোমবার (১০ জুলাই) রাজধানীর ভাসানটেক, মাটিকাটা, মহাখালী সাততলা বস্তির ভোটারদের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। জানা গেছে, এসব এলাকার স্থানীয়দের মধ্যে প্রার্থীদের ভোটব্যাংক নিয়ে আছে অনেক হিসাব-নিকাশ। আবার অনেক ভোটারের অনাগ্রহের কথাও শোনা যাচ্ছে। প্রার্থীরাও কোনো দিক ছাড় দিচ্ছেন না, প্রতিটি এলাকায় গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা। তারপরও ভোটারদের অভিযোগ, প্রার্থীদের গণসংযোগ এখনও কম।

ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে প্রার্থিতা করছেন মোহাম্মদ এ আরাফাত; জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে সিকদার আনিসুর রহমান; রেজাউল ইসলাম স্বপন লড়ছেন ডাব প্রতীকে। তিনি বাংলাদেশ কংগ্রেসের নেতা। তা ছাড়া বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আকতার হোসেন- ছড়ি, জাকের পার্টির কাজী রাশিদুল হাসান- গোলাপ ফুল ও তৃণমূল বিএনপির শেখ হাবিবুর রহমান-সোনালী আঁশ প্রতীকে নির্বাচন করবেন। একতারা প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। এ নির্বাচনে তিনিই সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। তা ছাড়া রয়েছেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী তরিকুল ইসলাম ভূইয়া।

৭৫ বছর বয়সে গত ১৫ মে প্রয়াত হন বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম নায়ক ও ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য ফারুক। তার মৃত্যুর পর আসন শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়। নিয়মানুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে এ আসনে নির্বাচন করতে হবে। সে অনুযায়ী আগামী ১৭ জুলাই ব্যালট পেপারে ভোট হবে এ আসনে নির্বাচন ভবন থেকে ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরা।

আসনের যেসব ভোটার নির্বাচন নিয়ে মাথা ঘামান, বিভিন্ন সংবাদ ও অনলাইন মাধ্যমে সব প্রার্থীর ব্যাপারে খোঁজ-খবর রাখছেন তারা। ভোটে আগ্রহী হলেও প্রার্থীদের দেখা না পাওয়ায় হতাশ তারা। দুয়েকজন ছাড়া অন্যান্য প্রার্থীরা প্রায় সবার দুয়ারে যাচ্ছেন বলেও জানান ভোটাররা।

তাদের মতে, যাকেই ভোট দেবেন, আগের তার বিভিন্ন দিক বিবেচনা করবেন। ঢাকা-১৭ আসনে জনপ্রতিনিধি হিসেবে শিক্ষা, রাজনৈতিক পরিচয় ও ব্যক্তিত্বের দিকগুলো সবার আগে তারা গুরুত্ব দেবেন। কোন প্রার্থী কেমন, ভোটারদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ কতখানি সেগুলোও খেয়াল রাখবেন। ভোটাররা জানান, রাজনীতি জানা প্রার্থী এলাকার উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখেন। তাই রাজনীতিবিদ ছাড়া অন্য কোনো পেশাজীবী প্রার্থীকে তারা এ আসনে চান না।

মুদ্রার অন্য পিঠে তাকালে দেখা যায় নির্বাচন নিয়ে অনাগ্রহী বহু ভোটারকে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের মাত্র ছয় মাস আগে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ১৭ আসনের উপ-নির্বাচন নিয়ে তাদের বিকার নেই। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, নতুন নির্বাচন হওয়ার পর যদি সরকার পাল্টে যায়, এ আসনের সংসদ সদস্যও কোনো না কোনোভাবে পাল্টে যাবে। যে কারণে এ উপ নির্বাচনকে তারা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন না। তবে ভোট হওয়ার আগে-পরের পরিস্থিতিতে তাদের নজর থাকবে।

কামরুল হাসান নিলয় নামে মাটিকাটা এলাকার এক ভোটার বলেন, আমাদের আগের এমপি ফারুক সাহেব নির্বাচনের ছয় মাস পর থেকেই অসুস্থ ছিলেন। ভাসানটেক-মাটিকাটায় এসে মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা যে শুনবেন, তা তিনি করতে পারেননি। ভোটের আগে অনেক কথাই বলেছিলেন। কিন্তু তাকে দিয়ে কিছু হয়নি। অসুস্থ থাকলে তার করণীয়টাই বা কি ছিল? তাছাড়া ছয় মাস পরই জাতীয় নির্বাচন। যে কারণে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ পাচ্ছি না। প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন, তবে ঢিলেমিভাব রয়েছে। তাদের গণ সংযোগের ওরপরও অনেক কিছু ডিপেন্ড করে। আমার কাছে মনে হচ্ছে এখনো নির্বাচনের আমেজ আসেনি। ভোটের দিন হাতে বড় কোনো কাজ না থাকলে ভোট দিতে যাব।

এ আসনের অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত বনানী-গুলশানের একাধিক চাকরিজীবী ভোটারের সঙ্গেও কথা হয় বাংলানিউজের। তারাও ভোট নিয়ে অনাগ্রহী। নির্বাচনের তারিখ কর্ম দিবসে পড়ায় ভোট দিতে যাওয়ার সম্ভাবনা কম বলেও জানান তারা। তবে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিতই উপ-নির্বাচন নিয়ে আলোচনাগুলোয় তারা চোখ রাখছেন।

ক্যান্টনমেন্টের পোস্ট অফিস এলাকার একজন ভোটার বলেছেন, আমরা চাই যিনি বুঝে শুনে সংসদে কথা বলতে পারবেন এবং ভোটারদের দাবি পূরণে ভূমিকা রাখতে পারবেন তিনিই নির্বাচিত হোক। তবে এখন এমন মানুষ পাওয়া যাবে কিনা, সেটাই চিন্তার বিষয়। এ নির্বাচনে আলোচনায় রয়েছেন হাতে গোনা দুই-তিনজন। বাকিদের অনেকেই চিনি না। যার ভাগ্য ভালো তিনিই জিতবেন। এটাও দেখার বিষয় মানুষ কাকে পছন্দ করছে।

প্রার্থীদের মধ্যে আলোচনায় এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাত ও হিরো আলম। আরাফাত জাতীয় পর্যায়ে এবারই প্রথম নির্বাচন করবেন। সোমবার তিনি রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগ করেছেন। এ সময় কথা হলে তিনি বলেন, এলাকার মানুষের সমস্যার কথা শুনে আপনাদের (সাংবাদিক) সঙ্গে পরামর্শ করে সেই সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করব। একটি একটি করে সমাধান করব। যতগুলো বস্তি আছে, যেখানে নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস করেন, তাদের যে সমস্যাগুলো আছে, সব সমস্যার সমাধান ধীরে ধীরে আমাদের করতে হবে।

যত বেশি মানুষ ভোট দিতে আসবে নৌকা তত বেশি ভোট পাবে এমন আশা ব্যক্ত করে আরাফাত বলেন, এটা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি ঢাকা-১৭ আসনের এ নির্বাচনের মাধ্যমে গোটা বিশ্বকে আমরা দেখিয়ে দেব, আওয়ামী লীগ থাকলে এ দেশে গণতন্ত্র থাকে।

জাতীয় পর্যায়ে হিরো আলমের নির্বাচনে অংশগ্রহণ অনেক আগের। ইউটিউবার থেকে সমাজসেবক ও পরে রাজনৈতিক বনে যাওয়া আলম এর আগে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। গত বুধবার (৫ জুলাই) ১৭ আসনে নির্বাচনী প্রচারণা চালান তিনি। এ সময় তার ওপর হামলা হয়। মহাখালী এলাকার সাততলা বস্তিতে একদল নারী তার ওপর হামলা করে।

ফোন করে তার প্রচারণা সম্পর্কে জানা যায় তিনি অসুস্থ। যে কারণে সোমবার প্রচারণায় নামতে পারেননি। তবে তার হয়ে সমর্থকরা বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছেন। হিরো আলম বাংলানিউজকে বলেছেন, নির্বাচনের জন্য ভালো করেই প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি। একই সঙ্গে জয়ের ব্যাপারেও অনেক আশাবাদী। ভোটারদের প্রতি কোনো প্রতিশ্রুতি নেই তার। তবে তিনি নির্বাচিত হলে এই আসনের গরিব অসহায় মানুষদের জন্য কাজ করবেন।

অন্যান্য প্রার্থীরাও নিজের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন। কম-বেশ তাদের নির্বাচনী মাঠেও দেখা যাচ্ছে। ভোটারদেরও নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা। কিন্তু দিন শেষে যার সব ভালো, শেষ ভালোটাও তার বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top