হলে ৩ ঘণ্টা আটকে রেখে জবি ছাত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ

1684333841.JNU-hall.jpg

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট …….

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি): জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হলে এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে তিন ঘণ্টা রুমে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে। নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী হাফসা বিনতে নূর বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে অধ্যয়নরত।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগের কর্মীরা হলেন—তামান্না ইসলাম তন্বী, ইশিতা, ফাল্গুনী আক্তার, নিনজা শিকদার, ইরা ও নাজমুন নাহার স্বর্ণা। তারা সবাই জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজি ও সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইনের কর্মী।

এ ঘটনার পর বুধবার (১৭ মে) হল প্রভোস্টের মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর অভিযোগপত্র দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নিজেদের রুমের তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাফসা বিনতে নূরের সাথে জুনিয়র রুমমেট রেবেকা খাতুনের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে রেবেকা খাতুন হলের অন্য রুমের ছাত্রলীগের মেয়েদের নিয়ে এসে রুমে আটকে হাফসাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন ও হেনস্তা করেন। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে হেনস্তার পর হাফসা বিনতে নূর অজ্ঞান হয়ে যান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার রুম পাশে হওয়ায় আমি এসে হাফসাকে রুম থেকে বের করে নিয়ে যেতে চেয়েছি। কিন্তু রেবেকা, নিনজা, ফাল্গুনী তাকে ঘেরাও করে রাখে যেন সে আসতে না পারে। এক পর্যায়ে সে মোবাইল নিতে গেলেও তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে মোবাইল আনতে দেয়নি।

তিনি বলেন, শুধু তাই নয়, এরা রাজনৈতিক ক্ষমতা দেখিয়ে ইদানীং হলে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে হেনস্তা করে থাকে। এমনকি সিনিয়রদের সাথে একের পর এক বেয়াদবি করেই যাচ্ছে তারা। কিন্তু এগুলোর প্রতিবাদ করার কেউ নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এদের কাছে এক প্রকার জিম্মি।

এ বিষয়ে অভিযোগকারী হাফসা বলেন, এটা আমাদের রুমের অভ্যন্তরীণ ঘটনা। কিন্তু আমাদের দুই ব্যাচ জুনিয়র বোটানি বিভাগের রেবেকা খাতুন হলের অন্য রুমের ৭/৮ জন মেয়েদের নিয়ে আমাদের রুমে এসে আমাকে শারীরিক মানসিকভাবে লাঞ্ছিত ও মারধর করেছে। তারা সবাই মিলে রাত সাড়ে আটটা থেকে রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত আমার ওপর নিপীড়ন চালায়। নিনজা শিকদার নামে এক মেয়ে এ পুরো ঘটনা মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে। এক পর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। শুধু তাই নয়, এই রেবেকার কর্মকাণ্ডে আমাদের অন্যান্য রুমমেটরাও শারীরিক-মানসিকভাবে হেনস্তার আশঙ্কার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

বিষয়টি সম্পর্কে নাজমুন নাহার স্বর্ণার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি ম্যামকে সাথে নিয়ে ওদের রুমে যাই। আমি গিয়ে ওদের শান্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু হাফসাকে মারধরের বিষয় আমি কিছু জানি না। এক পর্যায়ে আমি ওদের রুমে ম্যামকে রেখে নিচে চলে আসি। তারপর নাকি হাফসা আমাদের ছাত্রলীগের মেয়েদের গাঁয়ে হাত দেয়।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলের আবাসিক শিক্ষক মানসুরা বেগম বলেন, তুচ্ছ ঘটনার জেরে আবেগের বশবর্তী হয়ে এ কলহের সূত্রপাত ঘটে। অবস্থা বেগতিক জেনে আমি সেখানে উপস্থিত হই। আমি যাওয়ার পরও তারা আক্রমণাত্মক ছিল। হাফসাকে তারা রুমের বাইরে যেতে ও ফোন ধরতেও দিচ্ছিল না। মূলত অন্য রুমের মেয়েদের নিয়ে আসার কারণেই এ ঘটনা এতদূর পর্যন্ত গড়ায়। আমি সকলকে বোঝানোর চেষ্টা করার পরও তারা আমার সামনে বসেই আরও উত্তেজিত হয়ে যায়।

হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দীপিকা রাণী সরকার বলেন, হলে বেশ কিছুদিন যাবত এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। আমি এ ধরনের নানান ঘটনায় শঙ্কিত। আজ অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা আলোচনায় বসেছি। তারপর দুপক্ষকে ডেকে বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছি। এরপর থেকে যদি কেউ এরকম কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ে তাহলে তার সিট বাতিল হবে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top