আজমত উল্লা অনুতপ্ত, ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট ইসি

BeFunky-collage-1-2305071230.webp

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ….

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান ‘নির্বাচনী আচরণ লঙ্ঘন’ ইস্যুতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। একই সাথে তিনি অনুতপ্ত বলেও জানিয়েছেন। আর নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়েছে, আজমত উল্লার ব্যাখ্যায় সংস্থাটি ‘সন্তুষ্ট’।

রোববার (৭ মে) ইসির সভা কক্ষে উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দেন আজমত উল্লা। শুনানি শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের কাছে ইসির মনোভাব তুলে ধরেন।

শুনানির বিষয়ে সিইসি বলেন, আমরা এখনো কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি। উনি অত্যন্ত চমৎকার ও বিনয়ের সঙ্গে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আগামীতে এ ধরনের ভুল হবে না। উনি বিশ্বাস করেন, কিছু কিছু ভুল অজ্ঞতাবশত হয়েছে। আর কিছুটা উনি বলেছেন যে, দু’একটা সভা হয়েছে। উনারা ডিসি এবং কমিশনারের অনুমতি নিয়ে সিটি করপোরেশনের বাইরে সেগুলো করেছেন। উনি ৫ ধারার যে বিধানটা বলেছেন, তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টা নিয়ে ইয়ে (সচেতন) ছিলেন না।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ওই শোডাউনকেই আমরা বড় করে দেখেছিলাম। এ বিষয়ে উনি বলেছেন, সেদিন মনোনয়নপত্র সাবমিট করার ব্যাপার ছিল। বেশ কিছু সংখ্যক কাউন্সিলর, তারা একই সঙ্গে দলবল নিয়ে এসেছেন। এজন্য বড় ধরনের একটা শোডাউনের মতো মনে হয়েছে। আমরা উনার বক্তব্যে প্রাথমিকভাবে অত্যন্ত সন্তুষ্ট। উনি সুন্দরভাবে আমাদের সঙ্গে কোঅপারেট করার এবং নির্বাচন আচরণ বিধি যাতে ভবিষ্যতে প্রতিপালিত, অনুসরণ করা হয়; সেটা সর্বতোভাবে উনি চেষ্টা করবেন। আমরা যেটা শোকজ করেছি, উনি উনার বক্তব্যটা দিয়েছেন।

সন্তুষ্ট হয়েছেন বললেন, তাহলে কি ক্ষমা করে দিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমরা এখানে বলেছি, এখনো আমরা (কমিশন) কোনও সিদ্ধান্ত নিই নাই। কিন্তু উনি বক্তব্য সুন্দরভাবে দিয়েছেন। অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা লিখিতভাবে চাইলে সেটাও দিতে চেয়েছেন। আমরা ফারদার কোনও তদন্ত করবো না।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, দুঃখ প্রকাশ করেছেন সার্বিকভাবে, যদি নির্বাচন আচরণবিধি ভঙ্গ হয়ে থাকে। উনি দুঃখিত এবং অনুতপ্ত। এই জিনিসগুলো সবসময় আপেক্ষিক। একটা জিনিস বিচারেও আমরা দেখি হয়েছে কী হয়নি, এটা অনেক সময় গ্রে এরিয়া থাকে। আমাদের দেশে যে নির্বাচনী সংস্কৃতি, যে কৃষ্টি বহু বছর ধরে গড়ে উঠেছে; সেখানে এই ধরনের নির্বাচনী উচ্ছ্বাস হয়ে থাকে। আমরা নির্বাচন কমিশনও মনে করি, এটা রাতারাতি এক ধাক্কা দিয়ে, সুইস টিপে বন্ধ করা যাবে না। সবার সহযোগিতা লাগবে। আমরাও এটাকে এনফোর্স করার চেষ্টা করব। হয়তো ইনশা আল্লাহ এভাবে ধীরে ধীরে শুভ কালচার গড়ে উঠবে।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, মন্ত্রী যে সভাতে ছিলেন, সেটা বাইরে ছিল। তারপরও উনি বলেছেন যে, ভবিষ্যতে বিষয়গুলো মেনে চলবেন।

সরকারি দলের প্রার্থীকেই কেন এতো চিঠি দিতে হচ্ছে? এই প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, অন্য দলের প্রার্থীদের বিষয়টি কিন্তু গণমাধ্যমে উপস্থাপিত হয় না। যেটা মোটাদাগে আমাদের কাছে পরিবেশিত হয়েছে, আমরা যেটা হস্তক্ষেপ করার প্রয়োজন বলে মনে করেছি, সেখানেই আমরা হস্তক্ষেপ করেছি। আমরা পার্টির সাধারণ সম্পাদক, মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি দিয়েছি। কাজেই আমাদের দিক থেকে যা যা করার দরকার, সব করছি। আশা করছি, এটা একটা সচেতনতা সৃষ্টি করবে। অন্য সিটিতে এটা একটা ইতিবাচক রেসপন্স হবে।

যা বললেন আজমত উল্লা খান

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি মেনে চলবেন বলে কথা দিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি এও বলেছেন, জ্ঞাতসারে নিজে কোনও আইন লঙ্ঘন করেননি।

রোববার বিকেলে নির্বাচন কমিশনের তলবে রাজধানীর নির্বাচন ভবনে এসে শুনানিতে অংশ নিয়ে তিনি সামনে আচরণবিধি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দেন।

আজমত উল্লা খান বলেন, আমাকে দুটো চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এতে যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছিল, সেগুলোর ব্যাপারে আমি আমার অবস্থান পরিষ্কার করেছি। আমি বলেছি, আমার জ্ঞাতসারে আমি নির্বাচন বিধিমালার কোনোকিছু লঙ্ঘন করিনি। একজন প্রার্থী হিসেবে শুধু নয়, দেশের নাগরিক হিসেবে একটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য আমার পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে। নির্বাচনি আচরণবিধি যেটা রয়েছে, এটা আমার কমিটমেন্ট যে এই আচরণবিধি সম্পূর্ণ মেনে চলব। আমার বক্তব্য ওনারা নিয়েছেন। তারপর যে সিদ্ধান্ত আসবে তা মাথা পেতে নেব। আমি আমার অবস্থান তুলে ধরেছি। রেজাল্ট আসুক, তারপর আপনারা জানবেন।

মন্ত্রীরা আপনারা পক্ষে ভোট চাইছেন– বিষয়টি সাংবাদিকরা সামনে আনলে আজমত উল্লা খান বলেন, আমি আমার অবস্থানটা তুলে ধরেছি। যে সভা ওনারা করেছেন সেটা হয়ত অজ্ঞতার কারণে হতে পারে। হতে পারে যে এটা যেহেতু সিটি কর্পোরেশনেরে বাইরে…। যাই হোক আমার অবস্থান সম্পূর্ণভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি। এখন সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন নেবে।

তিনি বলেন, ভুলে হয়েছে কি না, যে ধারাগুলোর কথা আপনারা বলছেন- ৭, ১১, ৫ ধারার যে কথাটা, যেহেতু মন্ত্রী সাহেব সভায় গেছেন সেটা ওনাকে যদি ডাকা হয়, ওনার ব্যাখ্যা উনি দেবেন। কিন্তু আমার জ্ঞাতসারে আমি নির্বাচন বিধিমালার কোনোকিছু লঙ্ঘন করিনি। আমি স্পষ্টভাবে কমিশনকে বলেছি এবং ভবিষ্যতেও যে আচরণবিধি ভঙ্গ হবে না, সে প্রতিশ্রুতি আমি দিয়েছি। এই প্রতিশ্রুতি শুধু আজ নয়, এটা আছে এবং থাকবে।

মিছিলসহ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন– এ বিষয়ে জানতে চাইলে আজমত উল্লা খান বলেন, দিস ইজ নট কারেক্ট। মিছিল নিয়ে গিয়েছি এটা ঠিক নয়। আপনারা কি দেখাতে পারবেন কোনও মিছিল নিয়ে গিয়েছি? এনি স্লোগান ওয়াজ রেইজড? আপনাদের বুঝতে হবে আমি পাঁচজন নিয়ে গিয়েছি। আপনারাই সেখানে ছিলেন কমপক্ষে দেড়শ। সেদিন শুধু আমার মনোনয়নপত্রই জমা ছিল না, সেদিন কিন্তু কাউন্সিলরদের মনোনয়নপত্রও জমা ছিল। যে গেটটা ছিল, সেই গেটে আমি পাঁচজন নিয়ে ঢুকেছি।

অন্য কাউকে তো তলব করা হলো না– এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আইন ভঙ্গ করিনি। আমি আবারও বলছি, জ্ঞাতসারে আইন, নিয়ম-নীতি আমি লঙ্ঘন করিনি।

উল্লেখ্য, মন্ত্রীকে নিয়ে সভা করায় ও মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শোডাউন করায়, আজমত উল্লা খানের প্রার্থিতা কেন বাতিল করা হবে না- সেই ব্যাখ্যা নির্বাচন ভবনে এসে দেওয়ার জন্য গত ৩০ এপ্রিল নির্দেশনা দেয় ইসি।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top