ঈদের ছুটিতে ঘুরতে পারেন খুলনার যেসব দর্শনীয় স্থান

1682074445.Khulna-BG.jpg

ব্যুরো এডিটর …..
বাংলাদেশের নামকরা বিখ্যাত খুলনা

চিংড়ি মাছের বসবাস, নারকেলের সেরা

সাথে আছে সুন্দরবন আওলিয়ার মাজার

আইসো আমার সোনার গাঁও…

আইসো আইসো গো খুলনায়…

খুলনায় আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন জনপ্রিয় কণ্ঠ শিল্পী খুলনার ছেলে শাওন আহমেদ শিপলু। সত্যিই ঐশ্বর্যমন্ডিত খুলনায় রয়েছে দেখার মতো অনেক কিছু।

দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা জেলা বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম জেলা। শিল্প বাণিজ্য, প্রকৃতি ও লোকজ সংস্কৃতির এ অভূতপূর্ব মিলন ঘটেছে এ জেলায়। রূপসা, ভৈরব, চিত্রা, পশুর, কপোতাক্ষসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নদী বৈচিত্র্যে ভরপুর এ জেলা। এখানে রয়েছে চিংড়ি শিল্প ও জাহাজ নির্মাণ শিল্প। এজন্য খুলনাকে বাংলাদেশের শিল্পনগরী বলা হয়। পৃথিবী বিখ্যাত ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন এ জেলায় অবস্থিত। ঈদের ছুটিতে ঘুরতে পারেন এসব সৌন্দর্যমন্ডিত স্থানগুলোতে।

খুলনার দর্শনীয় স্থানগুলো ও ঐতিহাসিক স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

সুন্দরবন:

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ও ঐশ্বর্যমন্ডিত বনগুলোর মধ্যে সুন্দরবন অন্যতম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি এ বন। এর চার দিক নিবিড় ঘন, চিরসবুজ এবং নিস্তব্ধ। সর্বত্রই সবুজের রাজত্ব। গাছপালা অপরূপ সাজে সজ্জিত। সুন্দরবন হলো বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলীর অন্যতম। গঙ্গা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এ অপরূপ বনভূমি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জুড়ে বিস্তৃত। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখন্ড বনভূমি। ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে এবং বাকি অংশ রয়েছে ভারতের মধ্যে।

যেভাবে যাবেন

বিভিন্ন উপায়ে সুন্দরবনে ভ্রমণ করে আসতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে আপনার খরচ আর ঝক্কি-ঝামেলা হবে বেশি। সহজ ও কম খরচে এ সুন্দর জায়গাটি ভ্রমণ করতে কোনো ট্যুর অপারেটরকে বেছে নিন। এর নির্দিষ্ট প্যাকেজে আপনি পেয়ে যাবেন থাকা, খাওয়া, ঘোরা, নিরাপত্তা রক্ষী, গাইডসহ যাবতীয় সব সুবিধা। খুলনা ও মোংলায় রয়েছে এমন শতাধিক ট্যুর অপারেটর। ঢাকাতেও আছে। সুযোগ আছে খুলনার কয়রা এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও মুন্সিগঞ্জ থেকে সুন্দরবন দেখার।

ঢাকার মতিঝিল, আরামবাগ, শ্যামলী, কল্যাণপুর, গাবতলী থেকে গ্রিনলাইন, সোহাগ, হানিফ, ঈগল, এ কে ট্রাভেলসসহ বিভিন্ন এসি/ননএসি বাস খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। এছাড়া সায়দাবাদ থেকে টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস, ফালগুনী পরিবহন, সুন্দরবন, পর্যটক, বনফুলসহ বিভিন্ন বাস খুলনা, বাগেরহাট ও মোংলার উদ্দেশে ছেড়ে যায় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। এসব বাসে পদ্মা সেতু পাড় হয়ে আগের তুলনায় খুব কম সময় খুলনায় আসা যায়। খুলনায় ট্রেনে এবং যশোর পর্যন্ত বিমানে যাওয়া যাবে। পাশাপাশি নৌপথেও আসা যায়। খুলনায় নেমে লোকাল বাসে বাগেরহাট, মোংলা যাওয়া যাবে। এছাড়া ঢাকা থেকে সরাসরি মোংলায় অনেক বিলাসবহুল বাসে আসা যায়।

খানজাহান আলী (র.) সেতু (রূপসা সেতু)

নান্দনিক সৌন্দর্য ও আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর কারণে রূপসা সেতু বরাবরই খুলনার মানুষের কাছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। বাংলাদেশের যতগুলো সেতুর রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি সেতু হচ্ছে খানজাহান আলী সেতু। বেশিরভাগ মানুষের কাছে খানজাহান আলী সেতু রূপসা সেতু নামে পরিচিত। মূলত এই সেতুর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দুই প্রান্তের দুটি করে চারটি সিঁড়ি রয়েছে। আর এ সব সিঁড়ির সাহায্যে সেতুতে ওঠানামা করা হয়। বর্তমান সময়ে এ সেতুটি দেশের মানুষের কাছে একটি দর্শনীয় সেতু হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

যেভাবে যাবেন

খান জাহান আলী সেতু খুলনা শহরের রূপসা হতে মাত্র ৪.৮০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। খুলনা শহর থেকে সড়ক পথে যে কোনো যানবাহনে এ সেতুতে যাওয়া যায়।

সেনহাটি

খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি গ্রাম কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের জন্মস্থান। বাংলা সাহিত্যে কবির দুটি কবিতা শীর্ষক ক্ষুদ্র কবিতাটি কালজয়ী স্থান পেয়েছে। ‘যে জন দিবসে মনের হরষে জ্বালায় মোমের বাতি’ কিংবা ‘চিরসুখী জন ভ্রমে কি কখন ব্যথিত বেদন বুঝিতে পারে’ কবিতা বাঙালি জীবনে অবশ্যপাঠ্য হিসেবে বিবেচিত।

যেভাবে যাবেন

খুলনা থেকে বাসে দিঘলিয়া যাবার পথে নদী পারাপার হয়ে স্থানীয় যানবাহন পাওয়া যায়।

রাড়ুলী

বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় (পি সি রায়) এর জন্মভূমি। ১৮৬১ সালের ২ আগস্ট খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী রাড়ুলীতে স্যার পি সি রায় জন্ম গ্রহণ করেছিলেন।

পি সি রায় ছিলেন একাধারে বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও শিল্পী। সমাজ সংস্কারে মানবতাবোধে উজ্জীবিত ছিলেন তিনি। তদানিন্তন সময়ে পল্লী মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমবায় ব্যাংক পদ্ধতি চালু করেন। ১৯০৯ সালে নিজ জন্ম ভূমিতে কো-অপারেটিভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। চারটি গ্রামের নাম মিলে ১৯০৩ সালে বিজ্ঞানী স্যার পি সি রায় দক্ষিণ বাংলায় প্রথম আর কে বি কেহরিশ চন্দ্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের।

যেভাবে যাবেন

খুলনা থেকে বাসে পাইকগাছা যাবার পথে, রাড়ুলী পাইকগাছা সংযোগ সড়কে নেমে, সেখান থেকে রিকশায় কিংবা অটোরিকশায় যাওয়া যায়।

পিঠাভোগ

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – এর পূর্ব পুরুষের নিবাস খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার পিঠাভোগ গ্রামে। খুলনা আঞ্চলিক প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের পরীক্ষামূলক সমীক্ষায় পিঠাভোগ গ্রামে রবীন্দ্রনাথের পূর্ব পুরুষের ভিটার ভিত্তিপ্রস্তরের সন্ধান পাওয়া গেছে। এখানে কবিগুরুর একটি আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিবছর এখানে রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হচ্ছে।

যেভাবে যাবেন

খুলনা থেকে বাসে রূপসা উপজেলায় গিয়ে সেখান থেকে স্থানীয় যানবাহনে পিঠাভোগ গ্রামে যাওয়া যায়।

শহীদ হাদিস পার্ক

শহীদ হাদিস পার্ক বিভাগীয় শহর খুলনার বাবুখান রোডে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক পার্ক, যা ১৮৮৪ সালে খুলনা মিউনিসিপ্যাল পার্ক প্রতিষ্ঠিত হলেও পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি গণঅভ্যুত্থানে শহীদ শেখ হাদিসুর রহমান বাবুর নামে নামকরণ করা হয়। শহীদ হাদিস পার্কে ঢাকাস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অনুকরণে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। হাদিস পার্কে রয়েছে বিশাল লেক। লেকের ওপর শহীদ মিনার ও পানির ফোয়ারা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও শহীদ হাদিস পার্কে নির্মিত পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে এক নজরে খুলনা শহরটাকে দেখা যায়।

শহীদ হাদিস পার্ক যেভাবে যাবেন

ঢাকার সায়দাবাদ, মহাখালী এবং গাবতলী বাস টার্মিনাল হতে বিভিন্ন মানের বাসে চড়ে খুলনা যেতে পারবেন। খুলনা শহরে এসে রিকশা কিংবা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় সহজে হাদিস পার্কে যেতে পারবেন।

৬ ও ৭ নম্বর ঘাট

খুলনা মহানগরীর কোলঘেঁষে ভৈরব নদের ৬ ও ৭ নম্বর ঘাট এলাকা এখন দর্শনার্থীদের উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র। যা রাজশাহীর পদ্মারপাড়ের মতো চিত্ত-বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হচ্ছে। দিন যতই যাচ্ছে বিনোদনপ্রেমীদের ভিড় ততই বাড়ছে এক সময়ের খুনি এরশাদ শিকদারের আতঙ্কের এ ঘাট এলাকায়।

যেভাবে যাবেন

খুলনা রেলস্টেশন থেকে রিকশা বা ইজিবাইকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে যাওয়া যায়।

দক্ষিণডিহি

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুণ্য স্মৃতি বিজড়িত স্থান দক্ষিণডিহি। ফুল, ফল আর বিচিত্র্য গাছ গাছালিতে ঠাসা-সৌম্য-শান্তগ্রাম দক্ষিণডিহি। খুলনা শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ফুলতলা উপজেলা। উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গেলে দক্ষিণ ডিহিগ্রাম। গ্রামের ঠিক মধ্য খানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে রবীন্দ্র-মৃণালিনীর স্মৃতিধন্য একটি দোতলা ভবন। এটাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুর বাড়ি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মাসারদা সুন্দরী দেবী জন্ম গ্রহণ করে ছিলেন এ দক্ষিণডিহি গ্রামে। রবীন্দ্রনাথের কাকি ত্রিপুরা সুন্দরী দেবী এ গ্রামের -ই মেয়ে। রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী মৃণালিনী দেবী দক্ষিণ ডিহির -ই মেয়ে। তার ভালো নাম ভবতারিণী, বিবাহের পর তার নাম রাখা হয় মৃণালিনী দেবী। যৌবনে কবি কয়েক বার তার মায়ের সঙ্গে দক্ষিণডিহি গ্রামের মামা বাড়িতে এসেছিলেন। এখানে কবিগুরু ও কবিপত্নীর আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। ২৫ বৈশাখ ও ২২ শ্রাবণে এখানে নানা আয়োজনে রবীন্দ্রজয়ন্তী ও কবিপ্রয়াণ দিবস পালন করা হয়।

যেভাবে যাবেন

খুলনা থেকে বাসে ফুলতলা উপজেলায় গিয়ে, সেখান থেকে অটোরিকশায় কিংবা স্থানীয় বাহনে যাওয়া যায়।

বনবিলাস চিড়িয়াখানা

খানজাহান আলী থানাধীন জাহানাবাদ বনবিলাস চিড়িয়াখানার চারদিকে সবুজে অপূর্ব সমারোহ, পুরোপ্রাচীর এলাকাটি আধুনিক বনজ ইউকিলিপটাসে ঘেরা। বলা যায় এক অনন্য দর্শনীয় স্থান, আয়তনে খুব বেশি বড় না হলেও বহু বিচিত্র জীব-জন্তুর সমাবেশ এ চিড়িয়াখানায় রয়েছে। খুলনা যশোর মহাসড়কের গিলাতলা নামক স্থানে জাহানাবাদ সেনানিবাসের নিয়ন্ত্রণাধীন এ বনবিলাস চিড়িয়াখানা।

সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বনবিলাস চিড়িয়াখানা উন্মুক্ত। চিড়িয়াখানাটি সেনানিবাসের লোকজন নিয়ন্ত্রণ করছে বলে কোনো সময় অপ্রতিকর কোনো ঘটনা ঘটে না। বনবিলাস চিড়িয়াখানার চারপাশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে লেক, বিনোদনের জন্য রাখা হয়েছে নৌকা ভ্রমণ।

যেভাবে যাবেন

খুলনা যশোর মহাসড়কের যে কোনো যানবাহনে করে গিলাতলা নামক স্থানে জাহানাবাদ সেনানিবাসের পাশে গেলেই পাওয়া যাবে বনবিলাস চিড়িয়াখানাটি।

রানা রিসোর্ট অ্যান্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক

খুলনার বটিয়াঘাটার পশুর নদের অববাহিকায় তৈরি করা হয়েছে ‘রানা রিসোর্ট অ্যান্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক’। খুলনা শহরের অদূরে রানা রিসোর্ট এর অবস্থান হওয়ায় খুলনাবাসীর জন্য এটাই আদর্শ দর্শনীয় স্থান।

যেভাবে যাবেন

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বরণপাড়ায় রানা রিসোর্ট অ্যান্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্কটি অবস্থিত। খুলনার জিরোপয়েন্ট থেকে বাস, মাইক্রোবাস, ইজিবাইকসহ যেকোনো যানবাহনে সড়ক পথে এখানে আসা যায়। শহর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার অদূরে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে পরিবার পরিজন কিংবা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘুরে যেতে পারেন এ রিসোর্ট থেকে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top