ব্যুরো এডিটর……
রাসায়নিক সারের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ততে কৃষকদের জন্য ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ বলে মন্তব্য করেছেন কৃষক সংগঠনের নেতারা।
বুধবার (১২ এপ্রিল) খুলনার প্রান্তিক চাষি ও কৃষক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বললে তারা এসব মন্তব্য করেন।
কৃষকরা জানান, হঠাৎ এই দাম বাড়ার ফলে এখন জমি আবাদ করতে হিমশিম খেতে হবে। সরকার যদি আবার দাম কমায় তাহলে হয়তো আমরা স্বাভাবিকভাবে চাষাবাদ করতে পারবো। সারের দাম না কমালে চাষাবাদ ছেড়ে দিতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারের দাম বাড়ানোর কারণে ফসলের উৎপাদন খরচ আরও বেড়ে যাবে। এতে খাদ্য সংকটের সৃষ্টি হতে পারে।
জানা যায়, রাসায়নিক সারের দাম প্রতি কেজিতে ৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি ইউরিয়ার বর্তমান দাম ২২ টাকার পরিবর্তে ২৭ টাকা, ডিএপি ১৬ টাকার পরিবর্তে ২১ টাকা, টিএসপি ২২ টাকার পরিবর্তে ২৭ টাকা এবং এমওপি ১৫ টাকার পরিবর্তে ২০ টাকায় কিনতে হবে কৃষকদের। একইভাবে ডিলার পর্যায়েও প্রতি কেজি সারের দাম ৫ টাকা করে বাড়বে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি মন্ত্রণালয় সোমবার (১০ এপ্রিল) সারের মূল্যবৃদ্ধির এই আদেশ জারি করে এবং ওই দিনই পুনঃনির্ধারিত এ মূল্য কার্যকর হয়েছে। সারের দাম বৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ বাড়ার শঙ্কায় খুলনাঞ্চলের প্রান্তিক চাষিরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
ডুমুরিয়া উপজেলার গোলনা কৃষক সমিতির সভাপতি ইমরান খান বাংলানিউজকে বলেন, হঠ্যাৎ করে সারের দাম বৃদ্ধিতে আমরা হতাশায় পরেছি। কিটনাশক ওষুধের দাম ও শ্রমিকের যে পরিমান মজুরি বেড়েছে তাতে আমাদের উৎপাদন খরচ উঠাতে হিমশিম খেতে হয়। সেখানে আবার যদি সারের দাম বাড়ে তাহলে আমাদের তো কিছুই থাকবে না।
তিনি জানান, সারের দাম কমানোর দাবিতে অচিরেই তাদের সমিতি থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হবে।
থুকড়া গ্রামের চাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, কৃষক দেশকে খাদ্যে স্বয়ংস্পূর্ণ করছেন। সারের দাম বাড়ানোর কারণে কৃষক উৎপাদন কম করলে দেশে আবার খাদ্যঘাটতি দেখা দিতে পারে। তখন সরকারকে খাদ্য আমদানি করতে হবে। এর চেয়ে কৃষক পর্যায়ে সারের জন্য ভর্তুকি দেওয়াই ভালো। অবশ্যই সরকারের সারের দামে ভর্তুকি দেওয়া উচিত।
বটিয়াঘাটার বোনারিবাদ গ্রামের কৃষক সমারেশ বলেন, সারের দাম বৃদ্ধিতে আমরা হতাশ হয়েছি। আমরা অবিলম্বে সরকারের কাছে সারের দাম কমানোর দাবি জানাচ্ছি।
সারের দাম না কমলে ধান ও ফসল চাষবাদ করতে হিমশিম খেতে হবে বলে মনে করছেন কৃষক সংগঠনের নেতারা।
ক্ষেত মজুর সমিতির খুলনা জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট চিত্তরঞ্জন গোলদার বাংলানিউজকে বলেন, সারের দাম বৃদ্ধি করে সরকার চরম অন্যায় ও অনৈতিক কাজ। এভাবে দাম বৃদ্ধি করা ঠিক না। যত কিছুর দাম বাড়ে তাতে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয় গরীব মানুষ। সারের দাম বৃদ্ধির প্রভাব শুধুমাত্র কৃষকের উপর গিয়ে পড়বে না ক্ষেত মজুরের ওপরও পরবে। কেননা তাদের তো পয়সা বেশি দিচ্ছে না। ক্ষেত মজুররা তো বেশি কাজ পায় না। তারা তো বেশির ভাগ সময় বেকার থাকে।
বাংলাদেশ কৃষক সমিতির কেন্দ্রিয় সহ-সভাপতি এসএ রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, এখন বোরো মৌসুমের শেষ সময়। অনেক জায়গায় সারের, কিটনাশকের প্রয়োজন হচ্ছে ঠিক এ রকম সময় সারের দাম বাড়লো। পত্রিয়ায় দেখেছি বিশ্বে ইউরিয়া সারের দাম কমছে। কিন্তু আমাদের দেশে হঠ্যাৎ সারের দাম বাড়ানো হল। এতে কৃষিতে অনেক ক্ষতি হবে। এর আগে প্রতি কেজিতে ৬ টাকা বেড়েছে। এখন প্রতি বস্তায় ২৫০ টাকা বাড়তি লাগবে কৃষকের। একজন কৃষকের ২/৪/১০ বস্তা সার লাগে। সারের দাম বাড়লে কৃষকের সবচেয়ে ক্ষতি হবে। এমনিতে দক্ষিণাঞ্চলে এবার বোরো ধানের অবস্থা খারাপ তার উপর সারের দাম বৃদ্ধি মরার উপর খাঁড়ার ঘা। সারের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে খুব তাড়াতাড়ি কেন্দ্র থেকে সারাদেশ ব্যাপী আমাদের কর্মসূচি আসবে।