জ্বালানি উৎপাদনের নতুন কৌশল-সম্ভাবনাকে গুরুত্ব দেবে যুক্তরাজ্য

house-20221224184212.webp

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ……..
২০২২ সালে যুক্তরাজ্যের রাজনীতি প্রধানত আবর্তিত হয়েছে জ্বালানির দাম কেন্দ্র করে। করোনা মহামারীর পরে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সারাবিশ্বেই জ্বালানির দাম বেড়ে যায়। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সে গতিতে অন্যরকম মাত্রা যোগ করে, যার প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়ে ব্রিটিশ রাজনীতিতে।

জ্বালানি বা বিদ্যুৎ সংক্রান্ত বিল ও চলমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের কৌশল ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টিতে নেতৃত্বের লড়াই দেখা দেয়। এমনকি, পরিস্থিতি সামাল দিতে লিজ ট্রাসকে বাদ দিয়ে একই দলের ঋষি সুনাককে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।

বিশ্বের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে ইউরোপের অধিকাংশ দেশের মতো, যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের জন্যও এবারের শীত দীর্ঘ, কষ্টদায়ক ও ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। বাধ্য হয়ে উচ্চমূল্যে জ্বালানি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন দেশটির সাধারণ লোকজন।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, শীত শেষে জ্বালানির দাম স্বাভাবিক রাখতে আগামী বছর থেকে দেশীয় সরবরাহ সম্প্রসারণের দিকে মনোযোগ দেবে যুক্তরাজ্য সরকার। মূলত, ২০২২ সালে যুক্তরাজ্য সরকার শক্তি-নিরাপত্তাবিষয়ক কৌশল প্রকাশ করেছিল, তা পরবর্তী তিন দশকের জন্য নতুন জ্বালানি অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা তুলে ধরে। এসব পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হবে ২০২৩ সালে।

বলা হচ্ছে, ২০২৪ সালে মধ্যে যুক্তরাজ্য নতুন পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র চালু করবে। তবে দেশটিতে ক্রমবর্ধমান সুদের হার এ ধরনের প্রকল্পগুলোকে আরও ব্যয়বহুল করে তুলবে। সামরসেটে নির্মিত হিঙ্কলে পয়েন্ট সি পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের নির্মাণকাজে এরই মধ্যে অর্ধেকের বেশি মূলধন খরচ করা হয়েছে। আগামী বছর এ ব্যয় আরও বাড়বে।

এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্য সমুদ্র তীরবর্তী টারবাইন ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটি বায়ুশক্তির ক্ষমতা চারগুণ বাড়িয়ে এ খাত থেকে ৫০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেষ্টা করবে, যা গৃহস্থালি ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত‍।

দ্য ইকোনমিস্টের তথ্য অনুযায়ী, টারবাইন থেকে বিদ্যুৎ ‍উৎপাদনের পরিকল্পনা পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ব্রিটিশ জ্বালানি কোম্পানিগুলো নিলামের আহ্বান জানাবে। ওইসব নিলাম থেকে কোম্পানিগুলো সরকারকে নতুন টারবাইন স্থাপন ও পরিচালনার জন্য সর্বোত্তম মূল্য উপস্থাপন করবে।

তাছাড়া যুক্তরাজ্য সরকার সম্প্রতি যেসব সৌরবিদ্যুৎ সংক্রান্ত চুক্তি করেছে, সেগুলোর মধ্য থেকে খুব অল্প কয়েকটির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। তবে ২০২৩ সাল থেকে নিয়মিত দরপত্র আহ্বান করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্য যে শুধু নবায়নযোগ্য শক্তি সংগ্রহ ও সরবরাহ নিয়ে ব্যাপক কাজ শুরু করবে তা নয়। এর পাশাপাশি বছরজুড়ে নতুন তেল-গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধ্যান ও সেখান থেকে খনিজ সম্পদ উত্তোলনের জন্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ অব্যাহত রাখবে দেশটি।

এরই মধ্যে যুক্তরাজ্য সরকার স্কটিশ উপকূলে জ্যাকডো খনি থেকে গ্যাস উত্তোলনের জন্য অবকাঠামো তৈরির কাজ শুরু করেছে। ২০২৩ সালের দ্বিতীয়ার্ধে জ্যাকডোর প্রাথমিক কূপগুলোর খননকাজ শুরু হবে।

অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের যে অঞ্চল থেকে গ্যাস উত্তোলন সবচেয়ে কঠিন, সেটি হলো দেশটির পূর্ব উপকূল। ২০১৭ সাল থেকে এ অঞ্চল থেকে গ্যাস উত্তোল বন্ধ করে দেয় সরকার। তবে ২০২৩ সাল থেকে নতুন করে সেখান থেকে গ্যাস সংগ্রহের কাজ শুরু করতে পারে দেশটি।

এদিকে, যুক্তরাজ্য শুধু তেল-গ্যাসের নতুন খনি অনুসন্ধান ও সেগুলো থেকে খনিজ সম্পদ উত্তোলনে মনোযোগ দিয়েছে, তা নয়। এ সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড থেকে যাতে যথাসম্ভব কম কার্বন নিসঃরণ হয়, সেদিকেও গুরুত্ব দিচ্ছে দেশটি।

জ্যাকডোর পৃষ্ঠপোষক সংস্থা শেল গ্যাস পোড়ানোর সময় উৎপন্ন কার্বন ডাই অক্সাইডকে আলাদাভাবে ধরে রাখার জন্য কাজ করছে। এ কৌশল হিসেবে তারা নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইডক সাগরের নীচে গোল্ডেনিয়ে নামক পরিত্যক্ত গ্যাসক্ষেত্রে প্রবেশ করানোর পরিকল্পনা করেছে।

দ্য ইকোনমিস্টের মতে, ২০২৩ সালেও যুক্তরাজ্যের রাজনীতি জ্বালানির দাম ও সরবরাহের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত থাকবে। বর্তমান ক্ষমতাসীন পার্টিকে কর্তৃত্ব ধরে রাখতে জ্বালানি উৎপাদনে অর্থায়ন অব্যাহত রাখতে হবে।

কনজারভেটিভ পার্টির জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে কারণ, লেবার পার্টি এরই মধ্যে ক্ষমতায় গেলে জ্বালানিখাতে আরও বেশি অগ্রগতি অর্জনে তৎপর হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। এমনকি, দলটি ফ্রান্সের মতো সরকারি জ্বালানি কোম্পানি তৈরির বিষয়েও চিন্তা করছে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top