আর্জেন্টিনা এখন উৎসবের দেশ, বুয়েন্স আয়ার্স উৎসবের নগরী

argentina-fan-20221219195330-1.jpg

স্পোর্টস ডেস্ক…..

দিয়েগো ম্যারাডোনাও কী পেরেছিলেন পুরো আর্জেন্টিনাকে এভাবে একসুতোয় গেঁথে নিতে! কিংবা মারিও কেম্পেস? বিশ্বকাপ জয়ে পুরো দেশ আবেগে উদ্বেলিত হয়ে উঠবে, আনন্দে-বিজয়োল্লাসে মেতে উঠবে- এটাই তো স্বাভাবিক। ১৯৭৮ সালে মারিও কেম্পেস, ১৯৮৬ সালে দিয়েগো ম্যারাডোনার সৌজন্যে উৎসবে মেতে ওঠার সুযোগ পেয়েছিলো পুরো আর্জেন্টিনা।

এরপর একটি প্রজন্ম কেটে গেলো। কেটে গেলো ৩টি যুগ (৩৬ বছর)। বিশ্বকাপের দেখা নেই আর্জেন্টাইনদের। ১৯৮৬ সালের পর, ২০২২ সালের আগে আরও দু’বার ফাইনালে উঠেছিলো তারা। ১৯৯০ বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে হেরে টানা দুই শিরোপা জয় বঞ্চিত হলো ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। ২০১৪ সালেও সেই জার্মানি। মারিও গোৎসের এক গোলেই সব আনন্দ মাটি হয়ে যায় মেসিদের।

অপেক্ষার অবসান আর আক্ষেপ-আফসোসে পোড়ার সময় শেষ হলো ১৮ ডিসেম্বর রোববার রাতে, কাতারের দোহায় লুসাইল সিটি স্টেডিয়ামে। শ্বাসরূদ্ধকর ফাইনাল শেষে বিজয়ের হাতি মেসিদের মুখে। বিজয়ের হাসি পুরো আর্জেন্টিনার মুখে।

পৌনে ৫ কোটি আর্জেন্টাইনের ঘুম হারাম হয়ে গেছে গত কয়েকদিন। রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সের ঐতিহাসিক মনুমেন্ট অবলিসকো ডি বুয়েন্স আয়ার্সের চত্ত্বরে লক্ষাধিক মানুষ জড়ো হয়ে খেলা দেখেছে জায়ান্ট স্ক্রিনে। মাথায় বাধা আর্জেন্টিনার পতাকা, শরীরে জার্সি, গায়ে ট্যাটু, ঢাক-ঢোল পতাকা উড়িয়ে তারা জমা হয় প্লাজা ডি লা রিপাবলিকায় অবস্থিত ঐতিহাসিক অবলিসকো ডি বুয়েন্স আয়ার্সের সামনে।
মেসির পেনাল্টি শটের সঙ্গে সঙ্গে তারা উদ্দাম উদযাপনে মেতেছে। এরপর ডি মারিয়ার গোলে সেই উদযাপন যেন কয়েকগুন মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ৯৭ সেকেন্ডের ব্যবধানে এমবাপের জোড়া গোলে সেই চত্ত্বরে নেমে এসেছিল পিনপতন নীরবতা। হাত তুলে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতেও দেখা গেছে তাদের।

এরপর মেসির গোলে যখন আবারও এগিয়ে যায়, তখন বাধভাঙা উল্লাস সৃষ্টি হয় সেখানে। আবার যখন এমবাপের পেনাল্টিতে ৩-৩ হয়ে গেলো, তখন আবার নীরবতা। টাইব্রেকারে এমিলিয়ানো মার্টিনেজের ফরাসীদের শট ঠেকিয়ে দেয়ার পর থেকেই আর্জেন্টাইনরা নিশ্চিত হয়ে যায়, শিরোপাটা ফিরছে তাদের ঘরে। মেসির হাত ধরে।

উল্লাস আর উদযাপনের কেন্দ্রভূমি হয়ে দাঁড়ায় তখন প্লাজা ডি লা রিপাবলিকায়। পুরো বুয়েন্স আয়ার্সের মানুষ যেন জড়ো হয়ে যায় এই একটি স্থানে। সারা বিশ্ব দেখলো মেসিদের উদযাপনে কিভাবে একাকার হয়ে গেছে বুয়েন্স আয়ার্স।

বুয়েন্স আয়ার্স হাউজের সামনে দাঁড়িয়ে ১৩ বছর বয়সী সান্তিয়াগো ইএসপিএনকে বলেন, ‘আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। এভাবেও কী জেতা সম্ভব? খুবই কঠিন ছিল। কিন্তু আমরা শেষ পর্যন্ত পেরেছি। মেসিকে ধন্যবাদ।’

শুধু প্লাজা ডি লা রিপাবলিকাতেই নয়, বুয়েন্স আয়ার্সের আইকনিক স্থানগুলোতে বন্যার মত ভেসে আসতে থাকে মানুষ। মেসিদের বিশ্বকজয় করার পরই ঘর ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে আর্জেন্টিনার মানুষ। নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ- কোনো বয়সী মানুষই যেন ঘরে বসে থেকে এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত থাকতে চান না।

বুয়েন্স আয়ার্সই নয়, পুরো দেশ একই সঙ্গে একই সময়ে বিশ্বকাপ উদযাপনে মেতে উঠেছে। পুরো আর্জেন্টিনা যেন এখন কেবলই উৎসবের দেশ। বুয়েন্স আয়ার্স যেন কেবলই উৎসবের শহর।

উৎসবের শহরে পরিণত হয়েছিলো মেসির জন্মস্থান রোজারিও’ও। সান্তা ফে রাজ্যের রাজধানী রোজারিওর মানুষ যেন উদ্দাম উদযাপনে পাগল হয়ে গিয়েছিলো। রোজারিওর ঐতিহাসিক স্থান মনুমেন্টো এ লা বান্দারায় জড়ো হয়েছিল লক্ষাধিক মানুষ।

এমিলিয়ানো ‘দিবু’ মার্টিনেজ পেনাল্টি ঠেকিয়ে পরিণত হয়েছিলেন শেষের নায়কে। তার শহর মার ডেল প্লাতার বিখ্যাত স্থান দ্য প্লাজা সান মার্টিনেও জড়ো হয়েছিলো লক্ষাধিক মানুষ। শহরের ক্যাথেড্রালের সামনে দাঁড়িয়ে তারা উপভোগ করেন লা আলবিসেলেস্তেদের বিশ্বজয়ের মুহূর্ত।

ব্শ্বিকাপ জয়ের পর দোহাতেই ছাদখোলা বাসে করে মেসিদের শিরোপা উদযাপন করিয়েছে কাতার কর্তৃপক্ষ। হাজার হাজার মানুষের মাঝে ট্রফি নিয়ে ঘুরেছেন মেসি এবং তার সতীর্থরা।

এবার ট্রফি নিয়ে এই উদযাপন হবে বুয়েন্স আয়ার্সে। সেখান থেকে মেসির শহর, মার্টিনেজের শহর, আলভারেজের শহর থেকে শুরু করে পুরো আর্জেন্টিনায়। এখন শুধু মেসিদের আগমণের অপেক্ষায় তার পুরো দেশ। এরই মধ্যে কাতার থেকে বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা ট্রফি নিয়ে নিজ দেশের পথে রওয়ানা হয়েছেন।

বিশ্বজয়ের উদযাপনের আসল অংশ তো বাকিই রয়ে গেছে। যার সমাপ্তি হবে বুয়েন্স আয়ার্সে ট্রফিসহ মেসিদের পৌঁছানোর পর। সে অপেক্ষায় পুরো আর্জেন্টিনা।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top