জেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২২ ভোটারদের চোখে ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থী

1665138809.1665135766.0.jpg

মিনা অছিকুর রহমান দোলন……
আগামী ১৭ অক্টোবর দেশব্যাপী জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচনী এলাকাগুলিতে ভোটের সরগরম বিরাজ করছে। খুলনা জেলা পরিষদ নির্বাচনে এবার চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ৩ প্রার্থী। তারা হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ খুলনা জেলা শাখার সভাপতি, খুলনা জেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ, বিএমএ খুলনা জেলা শাখার সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ডা. শেখ বাহারুল আলম এবং ক্রীড়া সংগঠক এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শেখ হারুনুর রশীদ লড়ছেন মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে। অপরদিকে ডা. শেখ বাহারুল আলম লড়ছেন আনারস প্রতীক নিয়ে এবং এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা লড়ছেন চশমা প্রতীক নিয়ে। এ নির্বাচনে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, ৩১ কাউন্সিলর, ১০ সংরক্ষিত কাউন্সিলর, ৬৮ ইউপি চেয়ারম্যান, ৯ উপজেলা চেয়ারম্যান, ১৮ ভাইস চেয়ারম্যান, সব সাধারণ ও সংরক্ষিত ইউপি সদস্য মিলে মোট ৯৭৮ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ভোটে ৯টি সাধারণ সদস্য পদে ২৮জন ও তিনটি সংরক্ষিত সদস্য পদে ১৫ জন লড়বেন। জেলার ৯টি উপজেলার ৬৮টি ইউনিয়নে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট প্রার্থনা করছেন প্রার্থীরা।
নির্বাচনকে ঘিরে ক্রমেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে ভোটারদের মাঝে। কে ধরছেন খুলনা জেলা পরিষদের হাল ? চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সাবেক ও বর্তমান কর্মকান্ড নিয়ে তারা করছেন চুলচেরা বিশ্লেষণ। কে কতটুকু জনবান্ধব সেটা নিয়েও চলছে আলোচনা। সাধারণ ভোটারদের আলোচনার কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো।
এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা ঃ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ খুলনা জেলা শাখার সাবেক সম্পাদক ও খুলনা-৪ আসনের সাবেক সাংসদ মরহুম এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার ছোট ভাই এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। নির্বাচনে খুব আটসাট বেঁধে নেমেছেন। তিনি সরাসরি কখনও আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না, ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে তার পরিচিতি। তিনি সম্প্রতি খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ¦ তালুকদার আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে নির্বাচন বিধিমালা ভঙ্গের অভিযোগ এনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। এতেকরে, গোটা জেলাবাসী হতবাক হয়েছেন। সিটি মেয়র আলহাজ¦ তালুকদার আব্দুল খালেক দীর্ঘ চার দশকের অধিককাল আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর অতি আস্থাভাজন। গত ৩ অক্টোবর খুলনা ক্লাবে জেলা পরিষদের আওয়ামী লীগের সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ হারুনুর রশিদের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ¦ তালুকদার আব্দুল খালেক। তিনি জেলা পরিষদের দলীয় চেয়াারম্যান প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়েছেন। তারই জের ধরে তিনি আলহাজ¦ তালুকদার আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে নির্বাচন বিধিমালা ভঙ্গের অভিযোগ এনেছেন। অপরদিকে, চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ হারুনুর রশীদের সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেছেন বয়সের কারণে তিনি ভুল বকছেন। বিষয়টি ভোটারটা স্বাভাবিকভাবে নেননি।
ডা. শেখ বাহারুল আলম ঃ অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএমএ খুলনা জেলা শাখার সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ডা. শেখ বাহারুল আলম। নির্বাচনকে ঘিরে তিনি বিএমএ ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তার বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা কি একটি অসভ্য রাষ্ট্রে বাস করি যে প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় সংসদ সদস্যরা অংশ নেন? কেউ দেখার নেই? এটা একটি নষ্ট সংস্কৃতি। এটা বন্ধ হওয়া উচিত বাংলাদেশে। জেলা পরিষদ অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সে কারণে জেলা পরিষদের নেতৃত্বে পরিবর্তন প্রয়োজন। আর সেই পরিবর্তন আনার জন্য তিনি প্রার্থী হয়েছেন। তিনি বলেন, গত ৮ বছরে খুলনা জেলা পরিষদ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দু’একজন প্রভাবশালী চেয়ারম্যান ছাড়া সাধারণ ইউপি সদস্যরা চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। খুলনার উন্নয়ণে সরকার জেলা পরিষদে যে বরাদ্দ দিয়েছে, তা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছেনি। সাধারণ ভোটাররা তার বক্তব্যকে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ঔষধ ব্যবসায়ের সিন্ডিকেটের সাথে সম্পৃক্ত এই চেয়ারম্যান প্রার্থী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটুক্তি করায় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক পদ হতে তিনি বহিস্কৃতও হয়েছেন। অনেকেই মনে করছেন পদ থেকে বহিস্কৃত হবার পর ক্ষোভের বশবতী হয়ে তিনি এ নির্বাচনে লড়ছেন। বিগত দিনে জনসাধারণ কিংবা ভোটারদের সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। সে কিনা জেলা পরিষদের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করবেন ! এ নিয়ে অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেন।
অপরদিকে, শেখ হারুনুর রশীদ বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সেই ১৯৬২ সালে দৌলতপুরস্থ বি.এল কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে প্রত্যক্ষভাবে ছাত্র রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। সেখান থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করে চলেছেন। তিনি রাজনীতিতে ৬১ বছরের অধিককাল অতিক্রম করে ফেলেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত থাকাকালীন ৬ দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচনসহ বিভিন্ন আন্দোলণে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছেন। ১৯৭১ সালের তিনি প্রত্যক্ষভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধে শরীক হন। ১৯৭৩-৭৪ সালে খুলনা জেলা কৃষকলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বটিয়াঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১০ বছর। জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও সাংগাঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন অনেক দিন। ১৯৮২ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে খুলনা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে পূণরায় সংসদ সদস্য নির্বাচনের পর বিরোধী দলীয় হুইপ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯১ সাল হতে বর্তমান পর্যন্ত পরপর ৭ বার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
২০ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখ হতে প্রথম মেয়াদে খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় মেয়াদে ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখ হতে এপ্রিল ২০২২ এর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত খুলনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের পর জেলার বিভিন্ন ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ণে সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। এছাড়াও অসহায়, দুঃস্থ ও অসুস্থ রোগীদের জন্য জেলা পরিষদ থেকে আর্থিক সহায়তা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক সহযোগিতা, এক হাজার আসন বিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস হল নির্মাণ, চুকনগর, কপিলমুনি, পাইকগাছা, দাকোপ, কয়রা ও ডুমুরিয়ায় জেলা পরিষদ মার্কেট নির্মাণ, গল্লামারী স্মৃতি সৌধ আধুনিকায়ন, বিভিন্ন জায়গায় যাত্রী ছাউনি নির্মাণ, অসহায়-দুঃস্থ মহিলাদের বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণসহ প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন বিতরণ, অসহায়-দুঃস্থদের মাঝে বিনামূল্যে ভ্যান গাড়ি বিতরণ, মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাবৃত্তি ও ল্যাপটপ বিতরণসহ বিভিন্ন উন্নয়ণমূলক কাজ করেছেন।
ভোটকে কেন্দ্র করে দলীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে তিনি বিভিন্ন উপজেলায় নির্বাচনী সভায় অংশ নিচ্ছেন। প্রবীণ এই রাজনীতিক কে বিজয়ী করতে খুলনা জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ একযোগে কাজ করে চলেছেন। দেশে চলমান উন্নয়ণের ধারা অব্যাহত রাখতে শেখ হারুনুর রশীদের কোন বিকল্প নেই বলে মত প্রকাশ করেন সাধারণ ভোটারেরা। আগামী ১৭ অক্টোবর ব্যালটের মাধ্যমে সাধারণ ভোটারেরা তাদের পছন্দের যোগ্য খুলনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বেছে নেবেন তারই প্রতিক্ষায় গোটা খুলনাবাসী।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top