অপহরণ নাটকের অভিযোগ মরিয়ম মান্নান ও রহিমার গ্রেফতার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

fdgf-20220927092854.webp

নিজস্ব প্রতিবেদক……
খুলনার মহেশ্বরপাশার আলোচিত মরিয়ম মান্নান, তার মা রহিমা বেগম ও পরিবারের সদস্যদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে তাদের করা অপহরণ মামলায় গ্রেফতার পাঁচজনের পরিবার। একই সঙ্গে রহিমার ‘পরিকল্পিতভাবে নিখোঁজ’ হওয়ার ঘটনায় করা হয়রানিমূলক মামলায় গ্রেফতারদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিও জানান তারা।
গ্রেফতারদের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, মরিয়ম মান্নান ও তার পরিবার পরিকল্পিতভাবে রহিমা বেগমের নিখোঁজের নাটক সাজিয়েছেন। এরপর অপহরণ মামলা দিয়ে এলাকার পাঁচজনকে অন্যায়ভাবে জেল খাটাচ্ছেন। এ ঘটনায় মরিয়ম, তার মা রহিমা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা জড়িত।

প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারা ‘রহিমা বেগমের অপহরণ নাটক’র সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানান।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। ‘ভুক্তভোগীদের পরিবার’ ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান গ্রেফতার মো. মহিউদ্দিনের মেয়ে মালিহা মহিউদ্দিন মাহি।

তিনি বলেন, খুলনার দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা খানাবাড়ির রহিম বেগম নিখোঁজ হওয়ার ২৯ দিন পর উদ্ধার হয়। রহিমার উদ্ধারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মরিয়ম মান্নানসহ তার পরিবার কথিত অপহরণের নাটক মঞ্চস্থ করেছেন। কিন্তু আমরা অত্যন্ত শঙ্কিত যে, অপরাধ করেও পুলিশ প্রশাসনসহ নিরপরাধ ব্যক্তিদেরকে এখনো পর্যন্ত তারা হয়রানি ও মিথ্যা অপবাদ দিয়ে যাচ্ছেন।

মালিহা মাহি বলেন, অপহরণের নাটক সাজানো রহিমা বেগম ও তার মেয়ে মরিয়মসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। রহিমার মেয়ে আদুরী আক্তার বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় যে মামলা করেন, তাতে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। মামলায় প্রতিবেশী খানাবাড়ি এলাকার মো. মহিউদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া, রফিকুল ইসলাম পলাশ, মো. জুয়েল, হেলাল শরীফ অপহরণ করতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়।

‘তবে রহিমা বেগমের বাড়ির চারপাশে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে র‌্যাব-৬ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা একাধিকবার পাঁচজনকে ডেকে নিয়ে কয়েকদফা ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। তবে ঘটনায় তাদের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ না পেয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। ঘটনার এক সপ্তাহ পর মরিয়ম মান্নান প্রভাব খাটিয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশকে দিয়ে পাঁচজনকে গ্রেফতার করান।’

মালিহা মাহি আরও বলেন, ‘নিখোঁজের ২৯ দিন পর গত ২৪ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুরে রহিমা বেগমের বাড়ির ভাড়াটিয়া কুদ্দুস মোল্লার গ্রামের বাড়ি থেকে রহিমাকে জীবিত ও অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রশাসন। উদ্ধারের সময় তার কাছ থেকে ব্যবহারের যেসব কাপড়-চোপড়, ওষুধ ও প্রসাধনীসামগ্রী উদ্ধার করা হয়, তা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলেছে যে, তিনি অপহরণ নাও হতে পারেন। তারা বলেছেন যে কেউ অপহৃত হলে কীভাবে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যাগে করে নিয়ে যান?’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, রহিমা বেগম ফরিদপুরে যে এলাকায় ছিলেন, সেখানে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে জন্মনিবন্ধন বানাতে গিয়েছিলেন। আমরা মনে করি, রহিমা বেগম নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পরিবর্তন করে ময়মনসিংহের ফুলপুরে অজ্ঞাত যে নারীর মরদেহ পাওয়া গিয়েছিল, ওই মরদেহের পরিচয় দেওয়ার জন্যই জন্মনিবন্ধন আনতে গিয়েছিলেন। এখান থেকে আবার নতুন করে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিল।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘রহিমা বেগম এর কাছে কোনো মোবাইল ফোন ছিল না। তিনি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে খুলনায় না এসে কেন ফরিদপুর গেলেন? রহিমা বেগমের ছেলে মিরাজের মোবাইল নম্বরে ফরিদপুর থেকে কল করে জানানো হয় তার মা ফরিদপুরে আছেন। অথচ মিরাজের স্ত্রী মৌ ইসলাম কল রিসিভ করে এ ব্যাপারে তাদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে চান না বলেও জানান। কেন মিরাজের স্ত্রী বিষয়টি প্রশাসন ও মরিয়ম মান্নানকে জানাননি?’

তারা আরও অভিযোগ করেন, ‘উদ্ধারের পর রহিমা প্রশাসন ও সাংবাদিকদের সামনে মুখ বন্ধ রেখে রহস্যজনকভাবে নির্বাক থাকেন। পরে রহিমা বেগম যার জিম্মায় ছিলেন, সেই নারী পুলিশ কর্মকর্তা দোলা দে জানিয়েছেন, রহিমা তার মেয়ে ও স্বামীর কাছে যেতে চান না। কিন্তু মেয়েদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পরই তিনি তার বক্তব্য পাল্টে ফেলেন। পরে আদালত থেকে মেয়ের সঙ্গেই তিনি বাড়ি চলে গেছেন। এ থেকে স্পষ্ট রাহিমা বেগম তার মেয়ে মরিয়ম মান্নানসহ পরিবারের সদস্যদের বাঁচাতে নতুন নাটক করছেন।’

রহিমা বেগমের আদালতে জবানবন্দি প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রহিমা বেগম আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন যে, তাকে অপহরণ করা হয়েছিল। স্ট্যাম্পে সই করানোর কথা বলা হয়েছে। এটাও নতুন ষড়যন্ত্র বলে মনে করছি আমরা।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মহিউদ্দিনের মেয়ে মালিহা মাহি বলেন, ‘রহিমা বেগম, তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান ও আদুরী আক্তারসহ অপহরণ নাটক ও মিথ্যা মামলা দিয়ে পাঁচজনকে জেল খাটানোয় জড়িতদের বিরুদ্ধে তারা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’

রহিমা বেগম অপহরণ মামলায় গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে কারাগারে রয়েছেন খানাবাড়ি এলাকার মো. মহিউদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া, রফিকুল ইসলাম পলাশ, মো. জুয়েল ও হেলাল শরীফ।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top