ভৈরব সেতু: সময় আছে তিন মাস, কাজ হয়েছে ৩ শতাংশ

khulna-1-20220906112527.webp

নিজস্ব প্রতিবেদক….

কার্যাদেশ অনুযায়ী খুলনার ১ দশমিক ৩১৬ কিলোমিটার ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার মেয়াদ চলতি বছরের ২৫ নভেম্বর। বাকি রয়েছে ৩ মাসেরও কম সময়। কিন্তু কাজের অগ্রগতি মাত্র ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ৬১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকার এই সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে দুটি এবং শহরাংশে রেলিগেট এলাকায় একটি পিলারের কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকায় মরিচা পড়েছে লোহার রডে। অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীও নষ্ট হওয়ার উপক্রম।

কাজের এই মন্থরগতির জন্য সেতুর তদারকি সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান মাসুদ বৈশ্বিক মহামারি করোনাকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, বৈশ্বিক মহামারীর কারণে সারা দেশে প্রকল্পের কাজ কিছুটা স্থীর ছিল।

নির্বাহী প্রকৌলশলী মাসুদ বলেন, এরইমধ্যে ভৈরব সেতু প্রকল্পে আমরা ১৮ মাস অর্থাৎ দেড় বছর সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছি। আশাকরি যথাসময়ে এবং খুব দ্রুতই কাজটা এগিয়ে যাবে এবং এ সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবো। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করছি।

তিনি আরো বলেন, এরইমধ্যে আমরা সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তের জমি বুঝে পেয়েছি। রেলিগেট প্রান্তেও আমরা কিছু জমি বুঝে পেয়েছি। সেখানে স্থায়ী পাইপ স্টিল কেসিং ড্রাইভের (পাইলের কভার) কাজ শুরু হয়েছে। চলতি মাসের ৪ সেপ্টেম্বর সেতুর শহরাংশে রেলিগেট নদীর তীরবর্তী ১৪নং পিলারের ১নং স্থায়ী পাইপ স্টিল কেসিং ড্রাইভের (পাইলের কভার) কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর তিনি এসব কথা বলেন।

একইদিন সকালে জেলা প্রশাসকের পক্ষে কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. আল মামুন ভৈরব সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তের দেবনগর এবং দিঘলিয়া মৌজার ১০ দশমিক ৩৭৪ একর অধিগ্রহণকৃত ভূমির কাগজপত্র খুলনা সওজ’র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমানের হাতে হস্তান্তর করেন। এর পরদিন সেতুর শহরাংশের জমিও হস্তান্তর করা হয়।

ভূমি হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে ঝিমিয়ে পড়া ভৈরব সেতুর কাজে দ্রুত গতি আসবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন কনসালটেন্ট টিমের টিম লিডার প্রকৌশলী রইস উদ্দিন।

তিনি বলেন, এখন সময় বৃদ্ধি হলে সেই সময়ের মধ্যেই সেতু নির্মাণ হয়ে যাবে।

৩ আগস্ট সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলীর উপস্থিতি এবং তার নির্দেশনা মোতাবেক ২নং পাইপ স্টিল কেসিং ড্রাইভ করা হয়। এ সময় সেতুর কনসালটেন্ট টিমের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

ভৈরর সেতু প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বরত কর্মকর্তা খুলনা সওজের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান বলেন, এ রকম ১০টি পাইপ স্টিল কেসিং ড্রাইভ সম্পন্ন করার পর উক্ত পাইলের ক্যাপ ঢালাই কাজ করা হবে। ক্যাপ ঢালাইয়ের ওপর পিলার স্থাপন করা হবে। প্রত্যেকটি পাইপ স্টিল কেসিংয়ের গভীরতা ১০ মিটার অর্থাৎ ৩৬ ফুট।

২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভৈরব সেতু নামে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। এরপর ২০২০ সালের ২৭ জুলাই খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ভৈরব নদীর ওপর সেতু নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান করেন। প্রক্রিয়া শেষে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। এর ১৩ দিন পর ২৬ নভেম্বর উক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য হবে ১ দশমিক ৩১৬ কিলোমিটার। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৩ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮১ কোটি টাকা। বাকি টাকা সেতু সংক্রান্ত অন্যান্য কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে। ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বর ভৈরব সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top