ফের বাড়লো খুলনা ওয়াসার পানির দাম

khulna-wasa-20220805160139.webp

নিজস্ব প্রতিবেদক…
আবারও পানির দাম বৃদ্ধি করেছে খুলনা ওয়াসা। মূল সরবরাহ প্লান্ট বন্ধ রেখে উত্তোলক পাম্পের মাধ্যমে পানি সরবরাহকারী এ সংস্থা এবার গ্রাহক পর্যায়ে পানির দাম সর্বোচ্চ ২৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। যা আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে।

যথাযথ সেবা দিতে না পারলেও খুলনা ওয়াসা প্রতি বছরই পানির দাম বাড়িয়ে গ্রাহকদের হয়রানি করে আসছেনর বলে অভিযোগ গ্রাহকদের।

তারা অভিযোগ করেন, ওয়াসা কর্তৃপক্ষ নয়-ছয়ভাবে পানি সরবরাহ করার পাশাপাশি প্রায় সময় ভৌতিক বিল প্রদান করে গ্রাহকদের হয়রানি করে চলেছে। দীর্ঘদিন ধরে এ অভিযোগ থাকলেও আজও ওয়াসা কর্তৃপক্ষ সেটি শুধরাতে পারেনি।

খুলনা ওয়াসার তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে সর্বশেষ ২০ শতাংশ দাম বৃদ্ধি করে ওয়াসা। এতে প্রতি ইউনিট পানির দাম বেড়ে দাঁড়ায় ছয় টাকা ৯১ পয়সা। গত আড়াই বছর ধরে এ মূল্যই কার্যকর রয়েছে। বর্তমানে ২৮ শতাংশ বৃদ্ধির ফলে আবাসিক গ্রাহকদের প্রতি ইউনিট (এক হাজার লিটার) পানি ব্যবহারের জন্য বিল দিতে হবে ৮ টাকা ৯৮ পয়সা। আর বাণিজ্যিক গ্রাহককে বিল দিতে হবে ১৪ টাকা। এর সঙ্গে আছে সার্ভিস চার্জ, ডিমান্ড চার্জ ও ভ্যাট। সর্বশেষ মূল্য অনুযায়ী আবাসিকে পানির দর ছিল ছয় টাকা ৯১ পয়সা এবং বাণিজ্যিক দর ছিল প্রতি ইউনিট ১০ টাকা। সেই হিসাবে আবাসিকে পানির দর বেড়েছে ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য দাম বেড়েছে ২৮ দশমিক ৫৮ শতাশং।

এদিকে কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই পানির মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন খুলনার মানুষ। তাদের দাবি, গ্রাহকসেবা আইন অনুযায়ী দাম বৃদ্ধির আগে অবশ্যই গণশুনানি করতে হবে। কিন্তু কোনো ঘোষণা বা গণশুনানি না করেই ওয়াসা প্রতি বছর পানির দাম বৃদ্ধি করে চলেছে।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ মো. আশরাফ উজ জামান বলেন, খামখেয়ালীভাবে খুলনা ওয়াসা পানির দাম বৃদ্ধি করেছে। দাম বৃদ্ধি করতে গেলে তা গণশুনানির মাধ্যমে করতে হয়। তার তোয়াক্কা করেনি কর্তৃপক্ষ।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বছরের শুষ্ক মৌসুমের ৬-৭ মাস ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করে তা ব্যবহারের উপযোগী নয়। ওই পানি দুর্গন্ধ ও ময়লাযুক্ত। এ ৬-৭ মাস মধুমতি নদীতে পানির প্রবাহ থাকে না বললেই চলে। সে ময়লাযুক্ত পানি খুলনার গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করা হয়।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, গ্রাহকদের মতামত ছাড়া ওয়াসা এভাবে পানির দাম বৃদ্ধি করতে পারে না। পানির দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে আমরা আন্দোলনে যাব।

সম্প্রীতি ফোরাম খুলনার সভাপতি সিলভি হারুন বলেন, ওয়াসার পানি সরবরাহ প্রকল্প চালু হবার থেকে কখনোই সঠিকভাবে পানি সরবরাহ করতে পারেনি। যে পানি সরবরাহ করা হয় তা ব্যবহারের অনুপযোগী। এরমধ্যে পানির দাম বৃদ্ধি করেছে ওয়াসা। এটা মেনে নেওয়া যায় না। প্রয়োজন হলে খুলনাবাসীকে নিয়ে আমাদের রাজপথে নামতে হবে।

খুলনা ওয়াসা থেকে জানা গেছে, ২০১৫ সালে ১ জানুয়ারি চার টাকা ইউনিট ধরে পানির নতুন মূল্যতালিকা অনুমোদন করে ওয়াসা বোর্ড। ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি পানির দাম ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়। এতে পানির দাম বেড়ে দাঁড়ায় প্রতি ইউনিট চার টাকা ৮০ পয়সা। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে পানির দাম আরও ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়। এতে ইউনিটপ্রতি মূল্য দাঁড়ায় পাঁচ টাকা ৭৬ পয়সা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে আরও ২০ শতাংশ দাম বৃদ্ধি করে ওয়াসা। এতে প্রতি ইউনিট পানির দাম বেড়ে দাঁড়ায় ছয় টাকা ৯১ পয়সা। গত আড়াই বছর ধরে এ মূল্যই কার্যকর ছিল।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের মে মাসে পানির মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয় ওয়াসা পরিচালনা বোর্ডে। নিয়ম অনুযায়ী সেবা খাতের দাম ২০ শতাংশের ওপরে বাড়ালে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয়। এজন্য মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। গত জুন মাসে এ প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। শুষ্ক মৌসুমে এমনিতেই খুলনায় পানি সংকট থাকে। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে এ সংকট দূর হয়ে যায়। পানি সংকটের মধ্যে দাম বাড়ালে প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা থাকায় ১ সেপ্টেম্বর থেকে এ দাম কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. আবদুল্লাহ বলেন, সাতক্ষীরা ও যশোরের তুলনায় খুলনা ওয়াসার পানির দাম অনেক কম। এ দাম দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যায় না। ওয়াসা বোর্ড সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে পানির দাম বাড়ানো হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা তদন্ত করে দেখেছি রিডাররা গ্রাহকের বাড়িতে গিয়ে মিটার রিড না করেই বিল করে। এ বিষয়টি সমাধানের জন্য আমরা প্রযুক্তির সহায়তা নিয়েছি। এখন রিডাররা গ্রাহকের বাড়িতে গিয়ে মিটারের ছবি তুলে পাঠানোর পর বিল করা হবে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top